শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন
নাসির উদ্দিন শাহ্- নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ইটের জন্য আশপাশের মাটি কাটতে কাটতে আবাদি জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। এমনটি চলতে থাকলে অচিরেই জেলায় উৎপাদনের ঘাটতি দেখা দিবে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি জমি গ্রাস করে গড়ে উঠছে অসংখ্য ইটভাটা। ভাটাগুলোর বিষাক্ত ধোঁয়া চারপাশ ছড়িয়ে পরিবেশে দূষণ করছে। এছাড়া অবৈধভাবে জমির উর্বর মাটি কেটে মিল-কারখানায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কমছে আবাদি জমি ও ফসল। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে খাদ্য ভান্ডার ও পরিবেশ-প্রকৃতিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- এ উপজেলায় ৩১টি ইটভাটা রয়েছে। যার অধিকাংশই অপরিকল্পিত। এসব ইটভাটার মাটির চাহিদা পূরণ করতে মাটি ব্যবসায়ীরা নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমির মাটি কেটে ভাটাগুলোতে সরবরাহ করছে।
অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি কেটে মিল-কারখানায় দেওয়ার ফলে শত শত বিঘা জমির চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এবং প্রশাসনের চোখের সামনেই বছরের পর বছর ধরে ভাটার মাটির চাহিদা পূরণ করতে ফসলি জমি বিনষ্টের ধারা অব্যাহত রয়েছে। সরেজমিন উপজেলার কামারপুকুর, বোতলাগাড়ী, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতামধুপুর ও বাঙালিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি বিনষ্টের চিত্র চোখে পড়ে।
বেশকিছু কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান- দুই ফসলি জমির মাঠ রয়েছে এই এলাকায়। জমিগুলোতে প্রতি বছর সরিষা ও বোরো ধান আবাদ করা হয়। এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী জমির মালিক কৃষকদের ফুঁসলিয়ে জমির মাটি নিয়ে যাচ্ছে।
বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের মতিয়ার রহমান নামের আরেক কৃষক বলেন- দুই বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি।
আমার পার্শ্ববর্তী জমিতে ভেকু দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে ট্রাকে ভর্তি করে স্থানীয় নিয়ে যাচ্ছেন এক মাটি ব্যবসায়ী। এ মাটি তিনি বেশি মূল্য দিয়ে কিনছেন। এতে আমার ফসলি জমিও বিনষ্টের পথে। অবৈধভাবে মাটি কর্তনকারীদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩’তে বলা আছে আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও ফসলি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু কাগজের নিয়মনীতির সঙ্গে বাস্তবের চিত্রের মিল পাওয়া যায়নি।
সূত্রমতে, সৈয়দপুর উপজেলায় ৩১টি ইটভাটা রয়েছে যার মধ্যে কামারপুকুর ইউনিয়নের ১৬টি, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ৬টি, খাতামধুপুর ইউনিয়নে ৫টি বাঙালীপুর ইউনিয়নের ৪টি ইটভাটা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার কয়েক জন কৃষক বলেন- এই অবৈধ ইটভাটার কারণে এ এলাকার ফসলি জমি ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে আশপাশের বসতবাড়ির গাছপালা মরে যাচ্ছে। এলাকায় শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভাটার মালিকরা খুব প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন।
তাছাড়া এর আগেও কয়েকবার ভাটা মালিককে নামমাত্র জরিমানা করেই দায় সেরেছেন প্রশাসন কৃষক আব্দুল গাফফার বলেন- বেশিরভাগ ইটভাটাগুলো স্কুল এন্ড কলেজের পাশে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিনিয়তই নানাভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে শিক্ষার্থীদের ফলে নানা রোগ দেখা দিয়েছে এলাকাতেই।
এসব বিষয়ে একজন ইটভাটর মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হুসাইন বলেন- সরকারি নিয়ম রয়েছে ১ কিলোমিটার পর পর ইটভাটা স্থাপন করতে হবে কিন্তু অত্র এলাকায় বেশিরভাগ ইটভাটাগুলোই কোনো নিয়মনীতি না মেনে তৈরি করেছে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহিনা বেগম বলেন- ইটভাটার কারণে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই কৃষি জমির মাটি কাটা ও অপরিকল্পিতভাবে ইটভাটার অনুমোদন বন্ধ হওয়া উচিত।
পরিবেশ অধিদপ্তর নীলফামারী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মন জানান- ভাটায় ইট পোড়াতে কাঠ পোড়ানো যাবেনা। কোন কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটা করা যাবে না। আইনগতভাবে এটা নিষিদ্ধ। অবৈধ ইটভাটা থাকলে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
অনলাইন ভিত্তিক 71sangbad24.com গণমাধ্যমটি
বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশনে নিবন্ধিত, (আই ডি নং-364)।
বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
আগ্রহীগণ সিভি পাঠাতে ই-মেইল করুনঃ info71sangbad24.com@gmail.com