বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদঃ
অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম “৭১সংবাদ২৪.কম” এ প্রতিনিধি আহ্বান করা হয়েছে। আগ্রহীগণ জিবনবৃত্তান্ত পাঠাতে 71sangbad24.com@gmail.com -এ মেইল করুন
সংবাদ শিরোনামঃ
ফ্যাসিস্ট সরকার যা করেছে, আমরা তা করতে চাই না- তারেক রহমান পাবনায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাউল বিক্রির অভিযোগে কৃষকদল নেতা বহিষ্কার পীরগঞ্জে ২ জন পকেটমার গ্রেফতার ফুলবাড়ীতে ইরি বোরো ধানের বাম্পার ফলন রংপুরে ইসলামী ছাত্র-শিবির মতবিনিময় পুঠিয়ার শিলমাড়িয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই শিশু নিহত তারাগঞ্জে গাছ খাওয়াকে কেন্দ্র করে হামলা আহত ৫ নড়াইলে শ্রীশ্রী বাবা বুড়ো ঠাকুরের ঐতিহ্যবাহী মেলা পীরগঞ্জে রাষ্ট্র সংস্কারে তারেক জিয়ার ৩১ দফা’র লিফলেট বিতরণ মিরসরাইয়ে মারধরের অভিযোগে প্রতিবেশী শিক্ষা ক্যাডারের বিরুদ্ধে আ’লীগ ফ্যাসিবাদ এখনও গণতন্ত্র নৎসাত করতে চায় তৌহীদি মুসলিম জনতার জরুরী সংবাদ সম্মেলন পীরগঞ্জে এনসিপি শ্রমিক উইংকের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত পীরগঞ্জে ১ হাজার শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপনের দাবীতে মানববন্ধন র‌্যাব এর অভিযানে গাঁজা’সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার পিরোজপুর জেলা কৃষক লীগ নেতার রিমান্ড- খুশিতে মিষ্টি বিতরণ পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবে ওয়ার্ল্ড ভিশনের লার্নিং শেয়ারিং বিষয়ক কর্মশালা রাণীশংকৈলে ইউপি চেয়ারম্যান আটক- পক্ষের লোকজনের বিক্ষোভ তারাগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসায় বিলম্ব ও হেনস্থার প্রতিবাদে মানববন্ধন সেনাবাহিনী ও র‌্যাব’র যৌথ অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

বাবা ভ্যানচালক, মা চা বিক্রেতা, উন্নত ফুটবল প্রশিক্ষণে মেয়ে যাচ্ছে পর্তুগাল

মাহাবুব আলম- রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির খেলোয়ার কাকলী আক্তার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিন মাস উন্নত ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য পর্তুগাল যাচ্ছেন কাকলী। সরেজমিনে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এতে করে এলাকাজুড়ে তার পরিবার ও এলাকাবাসির মধ্যে অনেক আনন্দ বিরাজ ঘটেছে।

উপজেলার পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কাশেম ও বানেসার মেয়ে কাকলী আক্তার(১৬)। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট কাকলী।

নিজস্ব বসতভিটা ছাড়া আবাদি কোনো জমি নেই কাকলীর পরিবারের। ঋণের টাকায় একটি ভ্যান কেনেন তার বাবা। সেই ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে সরসারের খরচ। আয়ের তুলনায় পরিবারের চাহিদা বেশি তাদের। তবে কিছুই করার নেই।

উপার্জন আসার কোনো রাস্তা ছিল না তাদের। কষ্ট করে সংসার চালিয়ে নিতেন কাকলীর মা বানেসা।

দিন আসে দিন যায়- অভাব দূর হয় না তাদের। মাঝখানে কাকলীর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে বসেন। যেন আকাশ ভেঙে পড়ল কাকলীর মায়ের ওপর। একে তো অভাবের সংসার, তার ওপর অশান্তি, দুটো যুক্ত হয়ে জীবন হলো বিষময়। তবে বাস্তবতাকে মেনে নিতে সংকোচ বোধ করেননি তার মা।

নিজের কাছে জমানো কিছু টাকা দিয়ে শুরু করেন ছোট একটি চা দোকান। রাস্তার ধারে ছোট একটি দোকানে চা বিক্রি করেই পরিবার ও কাকলীর অর্থের জোগান দিয়েছেন তিনি।

কয়েক বছর পর কাকলীর বাবা নিজ ভুল বুঝতে পেরে দ্বিতীয় সংসার ছেড়ে আবার ফিরে আসেন তাদের কাছে। পরে সব মেনে নিয়ে আবার সংসার চলা শুরু হয় তাদের। বর্তমানে অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ বাবা চালান ভ্যান আর মা করছেন চা দোকান। তবে মেয়ের ভিনদেশে যাওয়ার কথা যেন সব কষ্ট ভুলিয়ে রেখেছে তাদের।

এনিয়ে কাকলীর মা বানেসা বলেন- মেয়েডা আমার ফুটবল খেলে। নানান জনে নানা ধরনের খারাপ কথা কহে। খারাপ লাগিলেও মেয়েডা কান্নাকাটি করত আবার যাইত খেলতে। হামার থাকবার জায়গা ছাড়া আর কিছু নাই। স্বামী ভ্যান চালায় আর আমি চা বিক্রি করি। এখন আমার মেয়েডা বাইরের দেশত যাছে, এটা গর্বের বিষয়। সবাই দোয়া করবেন তার জন্য।

কাকলীর বাবা আবুল কাশেম বলেন- আমি দিনমজুরি করে সংসার চালাতাম। পরে একটা ভ্যান নিয়ে চালানো শুরু করি। এখনো ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। আর কাকলীর মা চা বিক্রি করে। আমি বয়সের কারণে নানা রোগে ভুগতেছি। পায়ের সমস্যা লেগেই আছে। মেয়েটা পর্তুগাল যাচ্ছে প্রশিক্ষণে, এটি আমার কাছে অনেক আনন্দের। যেখানে যাই সেখানকার লোকজন খোঁজখবর নেই। চা খাওয়ায় আর কাকলীর গল্প করে। তখন বুকটা ভরে উঠে। আমার মেয়ের জন্য সকলে দোয়া রাখবেন।’

কাকলী আক্তার বলেন- স্কুল পর্যায়ে যে বঙ্গমাতা ফুটবল খেলাগুলো হতো, সেখান থেকেই আমার শুরু। পরে আমার এক স্যার বললেন, আমি ফুটবলার হবো কি না। আমি বলেছিলাম, যদি ভালো সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে হব। পরে তিনি আমাকে রাঙাটুঙ্গিতে যোগাযোগ করিয়ে দেন। আমি বাবা-মাকে বিষয়টি বলি। তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন এবং ফুটবল কিনে দিয়েছেন।

এখন দেশের বাইরে যাচ্ছি আরও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য। এটি আসলে অনেক বড় আনন্দের খবর আমার কাছে। তবে এ আনন্দের পেছনে অনেক পরিশ্রম রয়েছে। মেয়ে হিসেবে ফুটবল খেলতে এসে নানা ধরনের কটু কথা শুনতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাঙাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন- অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১১ জন ছেলে ব্রাজিলে ও ১১ জন মেয়ে পর্তুগালে ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছে। সেরা এগারোর মধ্যে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে একজন নির্বাচিত হয়েছেন।

কাকলী নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তার বাবা বয়োবৃদ্ধ মানুষ। ভ্যান চালান। কিন্তু এ বয়সে ঠিকমতো চালাতে পারেন না। ভ্যানই একমাত্র আয়ের উৎস তাদের। আর তার মা চা বিক্রি করেন। তাদের জন্য এ ঘটনা অনেক বড় কিছু।’

এমন খুশির খবর শুনে রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- আমার পৌরসভার এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান কাকলী। কাকলীর মা-বাবা কষ্ট করে তাদের সংসারের খরচ চালায়। আজ সে ফুটবলের উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য পর্তুগাল যাচ্ছে, বিষয়টি আমাদের পৌরসভার জন্য খুবই খুশির খবর।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

©2019 copy right. All rights reserved 71sangbad24.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com