Wednesday, April 24, 2024
Homeরংপুর বিভাগনীলফামারী জেলাতিস্তা ব্যারাজ রং করতে ব্যয় ৩ কোটি ৫৬ লাখ- সংস্কারের নামে কয়েক...

তিস্তা ব্যারাজ রং করতে ব্যয় ৩ কোটি ৫৬ লাখ- সংস্কারের নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ

নাসির উদ্দিন শাহ্- নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ
দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ সংস্কারের নামে কয়েক কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিস্তা ব্যারাজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রং এর কাজে রংবাজি করা হয়েছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে! অপর দিকে ছয় কোটি টাকা খরচে ব্যারাজে জলকপাট নিয়ন্ত্রনে স্থাপিত অটোমেশন সিষ্টেমের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। যে ঠিকাদারের লাইন্সেসে ব্যারাজের সৌন্দর্য বর্ধন বাড়ানোর জন্য রংয়ের কাজ করা হয় সেই ঠিকাদার কিছুই জানে না।

অনুসন্ধ্যানে দেখা যায়- তিস্তা ব্যারাজে সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে দায়সারাভাবে রং করাসহ নানা অনিয়ম বেরিয়ে আসে। ব্যারাজের রেলিং ও ৫২টি জলকপাট পরিষ্কার ও রং করার জন্য ক্যাট প্রকল্পের ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাগজে কলমে দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছেন রংপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনাইটেড ব্রাদার্স বলে দেখানো হয়। ধুলোবালি আর জং তুলতে ঘষাঘষি করা হয় ব্রাশ, ছেনি-বাটালের মতো দেশীয় সরঞ্জাম দিয়ে। যদিও দরপত্রে এই কাজে অত্যাধুনিক কমপ্রেশার মেশিন ব্যবহারের শর্ত আছে কার্যাদেশে। পানিতে তলিয়ে থাকা লোহা ও ই¯পাতের গেটসহ ব্যারাজের মূল অংশ রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডালিয়া পাউবোর এক কর্মচারী জানান- নির্দেশনা না মেনে হাত দিয়েই রং করা হয়েছে। এতে ৩০ লাখ টাকাও ব্যয় হয়নি।

দরপত্র অনুযায়ী যোগাযোগ করা হলে মেসার্স ইউনাইটেড ব্রাদার্স ঠিকাদার জাফর আলম বলেন- আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজটি কে করছেন আমি কিছুই জানি না।

কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী বিলাস চন্দ্র হাত দিয়ে রং করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই কাজ বুঝে নিয়েছি।রঙের কাজে আধুনিক যন্ত্র কেন ব্যবহার হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলুন।

সরেজমিনে দেখা যায়- তিস্তা ব্যারেজের মোট জলকপাট ৫২টি। এর মধ্যে মূল নদীর পানি প্রবাহের জন্য ৪৪টি ও সেচ ক্যানেলে পানি সরবরাহের জন্য রয়েছে ৮টি জলকপাট। তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের তৎকালীন সময় প্রতিটি জলকপাট নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদ্যুৎচালিত সুইট সিস্টেম ও ম্যানুয়াল সিস্টেম রাখা হয়। ২০০৩ সালে তিস্তা ব্যারেজের জলকপাট নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎচালিত সুইচ বিকল দেখানো হয়। যা মেরামতের নামে খরচ দেখানো হয় এক কোটি টাকা। কিন্তু বিকল সুইচ আর চালু হয়নি। এরপর থেকে ম্যানুয়াল (হাত দিয়ে ঘুরিয়ে) পদ্ধতিতে জলকপাট নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসছিল।

এ ব্যাপারে কাগজে কলমে দেখা যায় তিস্তা ব্যারাজের বিদ্যুৎচালিত সুইচ রুম নতুনভাব স্থাপন করতে নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক বিভাগের তৎকালিন নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুজ্জোহা অ্যাপসের মাধ্যমে জলকপাটগুলো নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প তৈরী করেন। এরপর ২০১৮ সালের জুন মাসে ৬ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে অটোমেশন সিস্টেম স্থাপন ও চালু দেখানো হয়।

ফাস্টকম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিস্তা ব্যারেজের ৫২টি জলকপাট অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেমটি চালু করতে ৭টি রাউটার স্থাপন দেখানো হয়। এরপর চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ইং সালের ৩১শে ডিসেম্বর ফাস্টকম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে অটোমেশন কাজের চুক্তি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখানো হয় ২০২০ইং সালে অটোমেশনের ৭টি রাউটারের মধ্যে ৬টি রাউটারের কোন হদিস নেই। কর্তৃপক্ষ তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি লিখিত অভিযোগ করে।

সেখানে চুরির কথা উল্লেখ না করে বলা হয় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। বিষয়টি পুলিশের পক্ষে মামলা করার জন্য বলা হলে কর্তৃপক্ষ কোন মামলা দায়ের করেননি। ঘটনাটি দেয়া হয় ধামাচাপা। এরপর সেই সময় দায়িত্বে থাকা নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক বিভাগের তৎকালিন নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুজ্জোহা অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যান।

অভিযোগ উঠেছে অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেম ঠিকমতো কাজ না করার কারণে এর ৭টি রাউটারের মধ্যে ৬টি রাউটার পরিকল্পিতভাবে চুরি করার কথা জানানো হলেও এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা তিস্তা ব্যারাজ এলাকাটি হলো কেপিআই ওয়ান। এখানে ২৪ ঘন্টায় আনসার বাহিনী ও পুলিশ টহল থাকে। এ অবস্থায় কি ভাবে মূল্যবান ৬টি রাউটার চুরি হতে পারে! তিস্তা ব্যারাজের দায়িত্বে থাকা আনছার বাহিনীর সদস্যরাও বলছেন এখানে কোন কিছু চুরি হবার প্রশ্নই আসেনা। অনুসন্ধ্যানে দেখা যায় হদিস না পাওয়া অটোমেশনের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে এবার নতুন ভাবে ক্যাট প্রকল্পের আরও ১০ কোটি টাকায় অটোমেশন সিস্টেম পুনঃস্থাপনের চেষ্টার করা হচ্ছে।

এ দিকে বর্ষার ভরা মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের রং ও সংস্কারের নামে ক্যাট প্রকল্পের ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে ডালিয়া যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রুবাইয়াত ইমতিয়াজের সাথে কথা বলা হয়। তিনি শারিরিকভাবে অসুস্থ জানিয়ে বিষয়টি এরিয়ে যাবার চেষ্টা করেন বারবার। তার কাছে অটোমেশনের রাউটার চুরি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার পূর্বের কর্মকর্তার সময়ের ঘটনা আমি বলতে পারবোনা। নতুন করে অটোমেশ সিস্টেম স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা চেস্টা করছি প্রকল্পটি পাস হলে নতুন ভাবে পুনরায় অটোমেশন সিন্টেম চালু করা যায় কিনা। তিস্তা ব্যারাজের রং এর বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি পরে কাগজপত্র দেখে জানাবেন বলে বিষয়টি এরিয়ে যান।

অপর দিকে ৬ কোটি টাকা খরচে স্থাপন করা অটোমেশন সিস্টেম স্থাপনের সময় ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুজ্জোহা-র সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার কল করে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments