হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
“রংপুরের পীরগাছায় উন্নয়নের নামে কাগুজে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি টাকা লোপাট” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়েছে পীরগাছা উপজেলার দূর্ণীতিবাজ নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও নাজমুল হক সুমনসহ উপজেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

সংবাদ প্রকাশের জেরে নতুন স্বপ্নের বার্তা সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের কন্ঠ’র রংপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ বাবু, দৈনিক সংবাদ ও একাত্তর টেলিভিশনের পীরগাছা উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস সরকার, দৈনিক কালের কন্ঠ ও স্থানীয় দৈনিক সকালের বাণীর পীরগাছা উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক রবিউল আলম বিপ্লব এর নামে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অপপ্রচারের মদদ জোগাচ্ছেন আওয়ামী লীগের দোসর ও পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই। ইউএনও নাজমুল হক সুমন তার দুর্নীতির সম্রাজ্যকে আড়াল করতে, ভারাটিয়া দালালদের মাধ্যমে নাম সর্বস্ব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পেশাদার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণায় মেতেছে বলে অভিযোগ করেন ওই সাংবাদিকরা।

সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ বাবু অভিযোগ করে বলেন, পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন এখানে আসার পর থেকেই এই উপজেলা পরিষদকে দূর্ণীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গীর্জা, স্কুল, কলেজ, হাট বাজার, রাস্তা ঘাট, ব্রীজ কালভার্ট থেকে শুরু করে টয়লেটের টাকাও এই ইউএনওর পেটে! আমরা প্রায় ১৫/২০ জন সাংবাদিকের একটি টিম দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মদদপুষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দূর্ণীতির চিত্র প্রথম পর্ব গণমাধ্যমে তুলে ধরার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দালাল চক্রের অন্যতম সদস্য “বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসংসদ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতিপাঠাগার রংপুরের সভাপতি” এবং পীরগাছা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের পরাজিত সাধারণ সম্পাদক সহ তাদের নিয়ন্ত্রিত চক্রটি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমনের সরকারি অর্থ লুটপাটকে আড়ালের চেষ্টা হিসেবে আমাদের নামে ভিত্তিহীন কেচ্ছা রটাচ্ছে।

সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস সরকার বলেন, আমি বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত প্রাচীনতম পত্রিকা "দৈনিক সংবাদ", ৭১ টেলিভিশন এর পীরগাছা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন হতে কর্মএলাকার সমস্যা, সম্ভাবনা, অনিয়ম, দূর্ণীতি, সমসাময়িক সকল বিষয়ে সুনামের সহিত পেশাদারিত্ত্বের দায়িত্ব পালন করে আসছি। সময়ের প্রয়োজনে গণমানুষের কন্ঠস্বর হিসেবে, সমাজের বাস্তব চিত্র গণমাধ্যমে তুলে ধরেছি। সাম্প্রতিক পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমনসহ পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লুটপাটের অথৈ সাগরে নেমেছি মাত্র এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন তার ভারাটিয়া দালালদের মাধ্যমে আমাদেরকে নিয়ে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। আমরা দালালদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি।

সাংবাদিক রবিউল আলম বিপ্লব বলেন, পীরগাছা উপজেলার হিসাব নিকাশে "উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট" আমাদের কাছে অত্র উপজেলার দূর্ণীতির যে তথ্য আছে, তার প্রথম পর্ব প্রকাশ হয়েছে মাত্র। বাকি পর্বগুলো যথাসময়ে জাতির সামনে উঠে আসলে উপজেলাবাসী তার কার্যালয় ঘেরাও করতে পারে। নাজমুল হক সুমন সত্যকে আড়াল করে যে পরিমাণ লুটপাট করেছে তার হিসাব করা হলে কোনভাবেই তিনি ইউএনওর চেয়ারে বসার যোগ্যতা রাখেনা।

উত্তরাঞ্চলের প্রগতিশীল সাংবাদিক সংগঠন রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল আজিজ চৌধুরী সাঈদ বলেন, পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন ও তার দুষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে সাহসী অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে রংপুরের পেশাদার সাংবাদিক, হারুন- অর-রশিদ বাবু, আব্দুল কুদ্দুছ সরকার ও রবিউল আলম বিপ্লবের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচার চালাচ্ছে পীরগাছা উপজেলার দূর্ণীতিবাজদের দুষ্ট চক্র। এ ধরণের ঘটনা সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অপপ্রচারকারীদের হুশিয়ারি দিয়ে দৈনিক গণকন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি আতিকুর রহমান আতিক, “আমাদের সময়” এর প্রতিনিধি খন্দরকার রাকিব, যুগান্তরের একরামুল, বাংলাদেশ বার্তার আবু রায়হান, ক্যাম্পাস টোয়েন্টিফোরের আব্দুল মতিন, সহ অসংখ্য গণমাধ্যমকর্মী বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবেনা। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচির ডাক দিবে সচেতন মহল ও সাংবাদিক সমাজ। অনতিবিলম্বে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। সেই সঙ্গে মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানান।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ দৈনিক আমাদের কন্ঠে “রংপুরের পীরগাছার উন্নয়নের নামে কাগুজে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি টাকা লুট” শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হয়। পরদিন একই শিরোনামে দৈনিক গণকণ্ঠ, দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা, একাত্তর সংবাদ ডটকমসহ একাধিক গণমাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দূর্ণীতির সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর আগে গত ১১ মার্চ ২০২৫ইং দৈনিক সকালের বাণীতে “পীরগাছায় উন্নয়নের নামে লুটপাট প্রকল্প কাগজে-কলমে বাস্তবে শূন্য” ১২ মার্চ ২০২৫ইং দৈনিক সংবাদ এ “পীরগাছায় উন্নয়ন প্রকল্প কাগজে আছে, বাস্তবে নেই” শিরোনামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের দূর্ণীতির সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই পেশাদার সাংবাদিকদের নামে কুৎসা রটাচ্ছে চক্রটি।

ইউএনওর বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের নামে মিথ্যাচারের বিষয় জানতে, পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমনের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এছাড়াও তিনি একাধিকবার তিনি ফোন কেটে দেন সে কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিষয়ে, আমরা উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এবিষয়ে জানতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায়, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) আব্দুল মোতালেব সরকারকে, পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমনের কাগুজে প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ লোপাটের বিষয় বলা হলে তিনি বলেন, আমি মাত্র আজিই জয়েন্ট করেছি। ইউএনওর বিরুদ্ধে যে অনিয়মের অভিযোগ আছে তা আমাকে পাঠিয়ে দিন। আমি কমিশনার স্যারের সাথে কথা বলে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।