Friday, April 19, 2024
Homeখুলনা বিভাগনড়াইল জেলানড়াইলে বিসিক শিল্প নগরী না থাকায় আজও গড়ে উঠেনি উল্লেখযোগ্য কোন শিল্প...

নড়াইলে বিসিক শিল্প নগরী না থাকায় আজও গড়ে উঠেনি উল্লেখযোগ্য কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান

উজ্জ্বল রায়- নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ
নড়াইলে বিসিক শিল্প নগরী না থাকায় এ জেলায় আজও উল্লেখযোগ্য কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। স্বাধীনতার ৫১ বছরেও নড়াইলে হয়নি বিসিক শিল্প নগরী অনুকুল পরিবেশ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নড়াইলে স্বাধীনতার ৫১ পর ও বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠেনি। নড়াইলে বিসিক শিল্প নগরী না থাকায় এ জেলায় আজও উল্লেখযোগ্য কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি।

নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান- ইতোমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে নড়াইল, মাগুরা ও বান্দরবান জেলা বাদে ৬১টি জেলাতেই বিসিক শিল্পনগরী গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও নড়াইলে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে না উঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নড়াইলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

তবে আশার বানী হলো যে, সাড়ে তিন’শ একর জায়গা জুড়ে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দ্রুত এ জেলায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নড়াইল জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ সোলায়মান হোসেন বলেন- নড়াইলে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলার জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দ্রুত বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলা হবে। এখানে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠলে কয়েক লক্ষ মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

জানা গেছে- ১৯৮৪ইং সালে নড়াইল জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর তিন বছর পর ১৯৮৭ইং সালে জেলায় বিসিকের কার্যক্রম শুরু হয়। পরের বছর ১৯৮৮ সালে বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনের লক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। সে লক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি (ইন্টারনাল মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডিভিশন) বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের কমিটি পরিদর্শনে আসেন।

শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নড়াইল-মাগুরা সড়কের রঘুনাথপুর মৌজায় ১৫ একর জমি নির্বাচন করে এবং ১৯৯০ইং সালের ১১ই জুন ভূমি মন্ত্রণালয় জমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ চার লাখ ৯৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ঐ সময় শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে টাকা ছাড় না পাওয়ায় জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

পরে ৮ বছর পর ১৯৯৮ইং সালে বিসিকের খুলনার আঞ্চলিক পরিচালকসহ চার সদস্যের একটি টিম নড়াইলে এসে নতুন করে নড়াইল শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে চিত্রা নদীর অপর পাড়ে বোড়াবাদুরিয়া-সীমাখালি মৌজার ১৫ একর জমি নির্বাচন করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এ লক্ষ্যে জমি হুকুম দখলের জন্য বিসিক ২০০১ইং সালের ২৮ই আগষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠালেও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একটি অংশের বিরোধিতার কারনে জেলা প্রশাসক ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর শিল্প নগরীর স্থান পরিবর্তনের জন্য বিসিকের ঢাকা কার্যালয়ের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠান।

এরপরে প্রায় ১৭ বছর পর ২০১৬ই সালের ৮ই নভেম্বর সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের নড়াইল-যশোর সড়ক সংলগ্ন বাশভিটা নামক স্থানে সাবেক নড়াইলের উপ-ব্যবস্থাপক জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুলতে স্থান নির্ধারণ করেন এবং ১৫ একর জমি ক্রয়ের সুপারিশ পাঠান। বিভিন্ন কারনে এই জমিতেও (বাশভিটা নামক স্থানে) বিসিক গড়ে তোলার জন্য স্থানীরা বাধা দেন।

পরে ২০২১ সালে বিসিক এর চেয়ারম্যান নড়াইল পরিদর্শনে এসে শহরের ধোপাখোলা এলাকায় বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসককে সাড়ে ৩শ একর জমি অধিগ্রহনের জন্য নির্দেশনা দিলে ধোপাখোলা এলাকায় চিত্রা নদীর কোল ঘেঁষে নড়াইল -ফুলতলা-খুলনা সড়কের দু পাশে উজিরপুর মৌজায় সাড়ে তিন’শ একর জায়গা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জানান, এখন নড়াইল অনেক সম্ভাবনাময় একটি জেলা। ইতোমধ্যে এই জেলাতে অনেক ছোট বড় ব্যাবসায়ীরা শিল্প প্রতিষ্ঠান করার জন্য জমি কিনতে শুরু করেছেন। বিসিক শিল্পনগরী গড়ে উঠলে এ জেলার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এ জেলার অনেক ব্যবসায়ী আছেন তারাও এখানে আসবেন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য।

স্থানীয়দের দাবি, পদ্মা সেতু এবং কালনা সেতু নির্মানের ফলে নড়াইল থেকে ঢাকার দূরত্ব হয়েছে মাত্র ১২৬ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ভৌগলিকভাবে নড়াইল জেলার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। নড়াইলে সরকারীভাবে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। নড়াইলে সড়ক ও নৌপথে সহজ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। কাঁচামাল সরবরাহসহ এ জেলায় রয়েছে প্রচুর জন শক্তি। শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোক্তা ও রয়েছে কিন্তু শুধু মাত্র জায়গার অভাবে তারাও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারছেন না। অবিলম্বে জায়গা নির্ধারণ করে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের দাবি তাদের।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন- বিসিকে সম্ভাবতা জরীপের রিপোর্ট হয়ে গেছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এটি বিসিক হেড অফিস থেকে প্রস্তাবনা আকারে প্লানিং কমিশনে যাবে। এখানে বিসিক স্থাপন হলে খুলনা অঞ্চলে তথা নড়াইলবাসীর ভাগ্যের মান উন্নয়ন হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments