Thursday, April 25, 2024
Homeঅপরাধ ও আইননীলফামারীতে শর্ত না মেনেই চলছে জম-জমাট সার্কাস-শঙ্কায় অভিভাবকগণ

নীলফামারীতে শর্ত না মেনেই চলছে জম-জমাট সার্কাস-শঙ্কায় অভিভাবকগণ

নাসির উদ্দিন শাহ্- নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ
নীলফামারী জেলা প্রশাসনের দেওয়া শর্ত না মেনেই জম-জমাট ভাবে চলছে সার্কাস।

সম্প্রতি দশ দিনের জন্য জেলার ডিমলা উপজেলার টেপাখড়ীবাড়ী ইউনিয়নের মতির বাজার এলাকায় “দি রাজমনি সার্কাস” ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর টটুয়ার ডাঙ্গা এলাকায় ‘দি গ্রেট রওশন সার্কাস’ এর অনুমতি দেয় প্রশাসন।

অনুমতি দেওয়ার আগে ধরাবাধা ১৭টি শর্তবলী প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও তার কিছুই মানছে না সার্কাস কমিটি। আসন্ন ১৯শে জুন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হাওয়ার কথা। এই মুহূর্তে সার্কাসের কার্যক্রম প্রদর্শনের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি গ্রহনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানান অভিভাবক ও সুশীল সমাজ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়- সার্কাস পরিচালনা করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ১৭টি শর্ত।

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিকেলে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সার্কাসের শো পরিচালনা করা, সার্কাস চলাকালীন প্যান্ডেল ও প্যান্ডেলের বাহিরে নিজস্ব নিরাপত্তা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে মুভমেন্ট মনিটরিং করা, কোন প্রকার র‌্যাফেল ড্র, লটারী ও জুয়া খেলা না চালানো ও বাহিরের কোনো তৃতীয় পক্ষ যেন জুয়া বসাতে না পারে সে জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখা, কোন প্রকার অশ্লীল নৃত্য, গানের আয়োজন না করা।

সার্কাসে আগত নারী শিল্পীর থাকার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। ভিতর ও বাহিরে পর্যাপ্ত সংখ্যক অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম মজুদ রাখা। সার্কাসে স্থাপিত সকল প্রকার ইলেকট্রিক সংযোগ নিরাপদে নেওয়া। স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়ানোর সময়, পূজা অর্চনার সময় ও ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনা যেন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় উচ্চস্বরে মাইক না বাজানো ইত্যাদি।

কিন্ত সরেজমিনে উল্লেখীত শর্তের অধিকাংশই লক্ষ্য করা যায় নি। সার্কাস কার্যক্রম রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থাকার কথা থাকলে তা চলছে রাত ২-৩টা পর্যন্ত।

এতে করে রাত যতই বাড়তে থাকে সার্কাসে শুরু হতে থাকে অশ্লিল নৃত্য। এছাড়া দেখা পাওয়া যায়নি তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মুভমেন্ট মনিটরিং করার জন্য বসানো হয়নি কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা।

সার্কাসে দেখা পাওয়া যায়নি তেমন কোনো অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। এছাড়া বৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার কথা থাকলেও অবৈধভাবে স্থানীয় মিল-সোয়া মিল থেকে নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

উচ্চ স্বরে মাইক না বাজানোর শর্ত উল্লেখ করা থাকলেও উচ্চস্বরের বাজানো হচ্ছে মাইক। এতে করে শিক্ষার্থীদের এস.এস.সি পরিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ব্যাঘাত ঘটছে এবং স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হচ্ছে।

এছাড়া সার্কাসে আসা অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিল্পিদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিতেও করা হয় নি কোনো জীবন বীমা।

উপরুক্ত অনিয়মে ও শর্তভঙ্গের বিষয়ে সার্কাস কমিটির সাথে কথা হলে কেউ কোনো সদ্বত্তর দিতে পারে নি।

দি রাজমনি সার্কাসের মালিক শাহিনুরের উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন- বাংলাদেশের কোনো সার্কাস শিল্পিদের বীমা নেই। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সাকার্স চলে। সার্কাসের সব জিনিসপত্র গুছাতে একটু সময় লেগে যায়।

অগ্নি নির্বাপক ও বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে দি রাজমনি সার্কাস কমিটির অন্যতম সদস্য স্থানীয় বাসিন্দা মামুন রহমান বলেন- ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগের লোক এসব দেখবে। আপনারা দেখার কে?

ডিমলা অনুষ্ঠিত সার্কাসের অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন- বিদ্যুৎতের বিষয়টি দেখবে বিদ্যুৎ বিভাগ। এটা আমাদের দায়িত্ব না।

কিশোরগঞ্জে অনুষ্ঠিত সার্কাসের অনিয়ম নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন- আমার বিষয়গুলো জানা ছিল না। এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ সুলতান নাছিমুল হক বলেন- আমরা খবর পাওয়া মাত্র সেই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগুলো বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি।

শর্ত ভঙ্গের বিষয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন- এমন হওয়ার কথা নয়। খোজ খবর নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments