Friday, April 19, 2024
Homeরাজশাহী বিভাগপাবনা জেলাপাবনার চাটমোহরের চাঞ্চল্যকর ইসমাইল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন আটক-৩

পাবনার চাটমোহরের চাঞ্চল্যকর ইসমাইল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন আটক-৩

মোঃ নুরুন্নবী- পাবনা জেলা প্রতিনিধিঃ
পাবনার চাটমোহরের চাঞ্চল্যকর অটোরিক্সা চালককে নির্মমভাবে হত্যা করে অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার এবং ছিনতাইকৃত অটো রিক্সা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ঘটনাঃ পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার মোঃ ইসমাইল হোসেন(৬০) পিতা- মৃত নুরুল ইসলাম সাং-হাজীপাড়া, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা প্রতিদিনের ন্যায় গত ইং-১২/১০/২০২২ তারিখ বিকাল অনুমান-০৩.০০ ঘটিকার সময় অটো রিক্সা নিয়ে ভাড়া মারার উদ্দেশ্যে বাড়ী হইতে বাহির হইয়া যায়। অতঃপর একই তারিখ রাত্রী অনুমান- ১০.০০ ঘটিকার সময় তাহার পরিবারের লোকজন ফোন করে তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় তাহারা আত্মীয় স্বজনের বাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করিতে থাকে। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে ইং ১৩/১০/২০২২ইং তারিখ সকাল অনুমান-০৭.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিমের পরিবারের লোকজন লোকমুখে জানিতে পারেন চাটমোহর থানার ফৈলজানা ক্যাথলিক স্কুলের পাশে একজন অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তির মৃত দেহ পড়ে আছে। উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে ভিকটিমের ভাইসহ আত্মীয়স্বজন ঘটনাস্থলে যায় এবং ভিকটিমের মৃত দেহটি রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতে পাটের রশি দ্বারা হাত পা বাঁধা ও গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় দেখতে পায়। তাহাদের ধারণা অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা অটো ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ভিকটিম কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করিয়া অটো রিক্সা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে চাটমোহর থানার মামলা নং-০৯, তারিখ-১৪/১০/২০২২ খ্রিঃ ধারা-৩০২/২০১/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।

মামলা রুজুর পর হইতেই পাবনা জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আকবর আলী মুন্সী মহোদয়ের নির্দেশনায় ও প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জনাব মোঃ মাসুদ আলম এবং সহকারী পুলিশ সুপার, চাটমোহর সার্কেল, (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) জনাব সজীব শাহরীন এর নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ চাটমোহর থানা, পাবনাসহ পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন কুমার সরকার ও তার একটি চৌকস টিমের যৌথ অভিযানে উক্ত চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত আসামী ১। মোঃ আতিকুল ইসলাম(২১), কে গাজীপুর সদর হইতে গ্রেফতার করে তার দেওয়া তথ্য মতে আসামী ২। মোঃ মুক্তা প্রামানিক(২২), কে ঢাকা পূর্বাচল আবাসিক এলাকা হতে গ্রেফতার পূর্বক তাদের উভয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামী ৩। মোঃ আনিছুর রহমান(৩২) কে ঢাকা হাজারীবাগ হতে গ্রেফতার করা হয়। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত আসামীগন অত্র মামলার ঘটনার সহিত জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। অতঃপর গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আনিছুর রহমানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানা এলাকা থেকে ভিকটিমের ছিনতাইকৃত অটো রিক্সা উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারকৃত আলামতের বর্ণনাঃ
১। একটি অটো রিক্সা, যাহার মূল্য অনুমান-১,৫০,০০০/-(এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা।
২। ৩ টি মোবাইল ফোন।
৩। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ১ টি গামছা এবং রশি।

গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম ঠিকানাঃ
১। মোঃ আতিকুল ইসলাম (২১), পিতা-মৃত ফজলুল হক, সাং-পবাখালী, থানা-চাটমোহর, জেলা-পাবনা।
২। মোঃ মুক্তা প্রামানিক (২২), পিতা-মোঃ লুৎফর প্রামানিক, সাং-শিমুলতলি, থানা-শাহজাদপুর, জেলা-সিরাজগঞ্জ ।
৩। মোঃ আনিছুর রহমান (৩২), পিতা-মোঃ মোজাম্মেল হক, সাং-দিঘুলিয়া, থানা-চাটমোহর, জেলা-পাবনা।
বর্তমান সাং-শ^শুর মোঃ শাহজাহান আলী, সাং-উত্তর শ্যামপুর সোহারা, ইউপি-দেশী গ্রাম, থানা-তাড়াশ, জেলা-সিরাজগঞ্জ

গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা য়ায়- আসামী মুক্তা প্রামানিক ফরিদপুর জেলায় কৃষি কাজ করতে গিয়ে অপর আসামী সাদ্দাম এর সাথে পরিচয় হয়। অতঃপর তারা উভয়ে সেখান থেকে আসামী আতিকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ইং-১২/১০/২০২২ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৭.০০ ঘটিকার সময় পাবনা জেলার টেবুনিয়ায় এসে আসামী আতিকের সাথে একত্রিত হয়। সেখান থেকে রাত ৮.৩০ ঘটিকার দিকে আটঘরিয়ায় এসে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ও দূর্বল অটো চালক খুজতে থাকে।

এরই মধ্যে ভিকটিম ইসমাইল কে তারা টার্গেট করে বেশি ভাড়ার কথা বলে আসামীদের পরিচিত অপেক্ষাকৃত নির্জন স্থান ফৈলজানার মিশন স্কুলের নিকট নিয়ে গিয়ে হাত পা বেধে রাস্তায় ফেলে রেখে অটো রিক্সা চুরি করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক অটো রিক্সার পিছন সিটে আসামী আতিক ও মুক্তা বসে এবং আসামী সাদ্দাম হোসেন অটো রিক্সা চালক ভিকটিম ইসমাইল হোসেনের বাম পাশে বসে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা করে। ইং-১২/১০/২০২২ তারিখ রাত্রী অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছিয়া আসামীগণ অটোরিক্সা থেকে নেমে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী সাদ্দাম তার নিকট থাকা গামছা দিয়া অটোরিক্সা চালক ভিকটিম ইসমাইল হোসের পিছন দিক হইতে গলায় গামছা পেঁচিয়ে পা কেউরি দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে ভিকটিমের বুকের উপর হাটু গেড়ে বসে।

ঐ সময় আসামী মুক্তা রশি দিয়ে ভিকটিমের দুই হাত ও আসামী আতিক রশি দিয়ে ভিকটিমের দুই পা বাঁধে। আসামী সাদ্দাম ভিকটিম ইসমাইল হোসেনের মৃত্যু নিশ্চিত করে ভিকটিমের মৃতদেহ রাস্তা থেকে ধান ক্ষেতে ফেলে দিয়ে অটোরিক্সা গাড়ী নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ থানার উত্তর শ্যামপুর গ্রামে যায়। সেখানে গিয়ে অটোরিক্সাটি আসামী আনিছুর এর নিকট রাতেই ৪০,০০০/- টাকা দামদর ঠিক করে হস্তান্তর করে যে যার মতো চলে যায়। উক্ত ঘটনার সহিত জড়িত পলাতক আসামী সাদ্দামকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যহত রয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments