হারুন-অর-রশিদ- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রংপুরের বদরগঞ্জে বরেন্দ্র’র বিল পুনঃখননের প্রকল্পে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম না মেনে আবাসিক এলাকা ও পৌর শহরে খনন কাজ চলছে। দরপত্রের অর্ধেক দামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অন্য ঠিকাদারের কাছে প্রকল্প বিক্রি, দরপত্রে উল্লেখিত বিল নয়ছয় খনন, বরাদ্দের টাকা লুটপাটে প্রকল্প এলাকায় ব্যয় বিবরণী সাইনবোর্ড না ঝুলানোর অভিযোগ উঠেছে রংপুরের প্রকল্প সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান ও রংপুর নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম মশিউর রহমান বিরুদ্ধে।
রংপুর জেলা বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- ‘বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম পানি সংরক্ষণের (ইআইআর) এর মাধ্যমে বদরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে বিল পুনঃখননে তিনটি প্রকল্প হাতে নেয় বরেন্দ্র। এই তিনটি বিলের মধ্যে কালুপাড়া ইউনিয়নের চারারীর ১৩ একর ১৮ শতক, গোপীনাথপুরের নৈমুল্লারবিল ১২ একর ৫০ শতক ও পৌর শহরের পাটোয়াকামড়ী ১১ একর ৩০ শতক।
এই তিনটি বিলের মধ্যে চারারীর পাঁচ একর ১৮ শতক এবং নৈমুল্লারবিল ১২ একর ৫০ শতক উপজেলা প্রশাসন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করে মৎস্যজীবী সমিতিকে লিজ দেন। কিন্তু চারারীর আট একর বিল অন্যদের দখলে চলে যায়। এই বিলের জমি আবার কারও নামে রেকর্ড্ও হয়েছে। সেখানে অনেকই ফসল আবাদ করছেন। পৌর শহরের পাটায়োকামড়ী বিলটি অনেক বছর আগে আবাদী জমিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে বিলের কোনো চিহ্ন ছিল না। এলাকার লোকজন সেই জমিতে ধানসহ বিভিন্ন প্রকারের ফসল চাষ করতেন। এর মধ্যে প্রায় দুই একর জমি অন্যের নামে রেকর্ডও হয়। কিন্তু সেই জায়গায় ৬০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নেওয়া হয়েছে পুন:খনন কাজ। খনন কাজটি পেয়েছে রংপুরের স্বপন কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
গত ২রা ফেব্রুয়ারি এক্সকাভেটর যন্ত্র দিয়ে বদরগঞ্জের তিন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু এই কাজ শুরু করতে গিয়ে দখলকারীদের বাধার সম্মুখীন হন বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর কর্মকর্তারা। পরে স্থানীয়দের ম্যানেজ করে নৈমুল্লারবিল এক কোটি ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা এবং ৬০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে পাটোয়াকামড়ী বিল পুনঃখনন কাজ শুরু করা হয়। তবে চারারীর বিল ১৩ একর ১৮ শতকের মধ্যে ৮ একর বিল কালুপাড়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল হক মানিক ও উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নানসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় সেই জায়গা উদ্ধার করতে পারছে না বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এ পুরো বিলের দরপত্র হলেও কাজ হচ্ছে মাত্র ৫ একক ১৮ শতকের। সেটিও প্রভাবশালীদের বাধার মুখে বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন- ‘পৌর শহরের ভিতর বিলটি ৪০ বছর আগেই আবাদী জমিতে পরিণত হয়। তখন থেকে এলাকার মানুষ ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে আসছিলেন। সেখানে খনন প্রকল্প নিয়ে বরেন্দ্রর কর্মকর্তারা ঠিকাদারের সঙ্গে মিলে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করে খাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন, প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরাও প্রকল্পের টাকার ভাগ পান। নৈমুল্লারবিল খনন বরাদ্দ এক কোটি টাকা। কিন্তু সেখানে সর্বোচ্চ কাজ হবে ১০ লাখ টাকার-বললেন গোপীনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমান।
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন- দ্রব্যেমূল্যের দাম বেড়েছে। মানুষের হাতে কাজ নেই। সরকার দরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে নানা প্রকল্প নিচ্ছেন। অথচ বদরগঞ্জের দিনমজুর মানুষ অলস সময় পার করলেও এখানে বরেন্দ্র’র প্রকল্পগুলোতে খনন যন্ত্র লাগিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আপনার আমার এসব বলে লাভ কি, সবাই জানে সরকারি টাকা হরিলুট করতেই খনন প্রকল্প নেয় ‘বরেন্দ্র’ কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামুবাড়ি এলাকার এক স্কুল শিক্ষক বলেন- বরেন্দ্র’র আইন মানছে না। যেখানেই সরকারি জমি দেখছেন সেখানেই খাল খনন করছেন। পৌর শহরে আবাসিক এলাকায় এ খালের কোনো প্রয়োজন নেই। এটি হলে বাড়ি, ঘর, শিশু সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে এলাকাবাসিদের। আমাদের দুশ্চিন্তা হলে কি বরেন্দ্র কর্মকর্তা, নেতা-কর্মী আর প্রশাসনের লোক তাকাবেন? কাজ হলে তাদের তো পেট ভরবে।
পৌর শহরের জামুবাড়ি ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় প্রধান সড়ক ঘেঁষে ১১ একর ৩০ শতক ফসলি জমি কেটে পুকুর করা হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। ওই খনন কাজের পাশে বাড়ি আইয়ূব আলীর।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- আমার বাড়িতে চারটি শিশু বাচ্চা আছে। সকাল বিকেল বাচ্চারা ওই জমিতে খেলতো। কিন্তু সেই জমিটি পুকুরের উদ্দেশ্যে গভীর করে খোড়া হচ্ছে। এই জায়গায় পুকুর খনন হলে বাচ্চারা সেখানে পড়ে যেতে পারে। তার ক্ষোভ, পৌর শহরের ভিতরে পাকা সড়ক ও গ্রাম ঘেঁষে কীভাবে পুকুর খনন করে বরেন্দ্র’র লোকজন। এখানে তো শিল্প কলকারখানা গড়ে তুলতে পারতো সরকার।
“উপদেষ্টা
ও সম্পাদক
মন্ডলী”
প্রধান উপদেষ্টা- মোঃ মকবুল হোসেন।
আইন উপদেষ্টা- মোঃ জুয়েল ইসলাম।
প্রকাশক ও সম্পাদক- লাতিফুল সাফি ডায়মন্ড।
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক- বাপ্পি সরকার।
“বার্তা
সম্পাদকীয় অস্থায়ী
কার্যালয়”
নিরাপদ টেলিকম এন্ড এন্টারটেইনমেন্ট,
কিশোরগঞ্জ রোড, তারাগঞ্জ বাজার- রংপুর মোবাইলঃ +8801735661194.
সংবাদ পাঠানোর ই-মেইলঃ 71sangbad24.com@gmail.com,
পত্রিকাটি বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশনে নিবন্ধিত-(আই ডি নং-364) এবং বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।