হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রংপুর সদর উপজেলাধীন আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় (ইআইআইএন-১২৭৩৬৫, স্কুল কোড-৫২৫৬) বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্যের নাটকীয় পদত্যাগের গুঞ্জন এখন টক অফ দ্যা টাউন।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি শকুনের কু-দৃষ্টি থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা রংপুরের প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান "আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়" রংপুরের আদী নগরীর মাহিগঞ্জে "খান সাহেব আফান উল্লাহ কবিরাজ" এর দেয়া ২৭৫ শতাংশ জমির উপরে ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয় বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার ১১৫ বছর ইতিহাস ঐতিহ্যকে পিছনে ফেলে, নতুন অধ্যায় রচনা করলেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি। নিশ্চয় (১৭ নভেম্বর) ২০২৩ইং রোববার এই দিনটি অত্র বিদ্যালয়ের ইতিহাসে লেখা থাকবে।
কারণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবার অস্বীকার করাসহ পাঠদান ছেড়ে স্বার্থের দ্বন্ধে শিক্ষকদের জরিয়ে পরার মতো এমন বিরল ঘটনা, এই স্কুলের ইতিহাসে এটাই প্রথম। ঐতিহাসিকভাবে এবং মাহিগঞ্জ বাসীর জানামতে, এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্ম বর্ণ সাদা কালার কোন ভেদাভেদ ছিলনা। তাইতো এ অঞ্চলের অসংখ্য মানুষের প্রেরনার বাতিঘর এ বিদ্যালয়।মাহিগঞ্জ অঞ্চলের অগণিত মানুষকে আলোর পথ দেখানো এই বিদ্যাপীঠ আজ কতিপয় দুষ্কৃতকারীর অপকর্মের দ্বায়বহনে, নিজেই অন্ধকার পথে হাঁটছে। এভাবে চলতে থাকলে, পুর্বপুরুষের অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভাঁটা পড়বে নিশ্চিত। ২০২৩ এর স্মার্ট বাংলাদেশে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা যে পথে হাঁটছেন সেটির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা মাহিগঞ্জবাসী।
গত (১৭ নভেম্বর) অত্র বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর সীমাহীন অনিয়ম দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন অত্র বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য, শাহাদৎ হোসেন লিখন ও মকবুল হোসেন। স্থানীয় সচেতন অভিভাবকের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক সদস্য লিখন বলেন, দীর্ঘসময় শিক্ষক শংকট নিয়েই চলছে পাঠদান, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ অংক ও ইংরেজি শিক্ষক পদ শুন্য আছে, মাধ্যমিক শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী বিটিআরসির কতৃক দুইজন শিক্ষক নেয়ার সুযোগ থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করতে নারাজ বর্তমান সভাপতি সামছুল আলম বাবু, দাতা সদস্য আব্দুর রহমান বাবু এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, শাহীন বাদশাহ।
গত ৩১শে আগষ্ট এক জরুরী মিটিংয়ে উপস্থিত সবার সম্মতিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক, (১২ সেপ্টেম্বর) ২০২৩ইং রংপুরের স্থানীয় দৈনিক যুগের আলো ও জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর উক্ত পদে মোট ১১জন প্রার্থী আবেদন করেন। অদৃশ্য কারণে নিয়োগ যাছাই বাছাই কমিটি গঠনে গড়িমসি করেন সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই তালবাহানা শুরু করেছেন তারা। আগের প্রধান শিক্ষকের অবসরে যাবার পর থেকেই নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবতে শুরু করেন শাহীন বাদশাহ। ইতিপূর্বে তিনি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিদর্শক এর নাম ভাঙ্গিয়ে ৪টি চিঠি উপস্থাপন করে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি সহ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করেন। গত (২২ নভেম্বর) ২০২৩ইং জরুরী মিটিংয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেখিয়ে বলেন, বোর্ডে অভিযোগ আছে এই মুহুর্তে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা যাবেনা। পরে (২৩ নভেম্বর) সভাপতি শামসুল আলম বাবুর পরামর্শে ও নির্দেশনায় দুইজন অভিভাবক সদস্য, শাহাদাৎ হোসেন লিখন ও মকবুল হোসেন দিনাজপুর বোর্ডে যান।
কতৃপক্ষকে সেই চিঠি দেখালে তারা স্পষ্ট জানান এই চিঠি ভুয়া। এবং তৎক্ষনাৎ বোর্ডের দায়িত্বরত বিদ্যালয় পরিদর্শক মিঃ হেনা মুঠোফোনে আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি শামসুল আলম বাবুকে, বোর্ড কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া চিঠি প্রদর্শন করার অভিযোগে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। দু:খজনক হলেও সত্যি সভাপতি সবকিছু জেনেও মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। সংবাদ সম্মেলনে সুত্রে আরও জানা যায়, অভিভাবক সদস্য মিলন মিয়ার মেয়ে অত্র বিদ্যালয়ে আয়া পদে চাকুরীর আবেদন করে অকৃতকার্য হন। তখন থেকেই তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে আতাত করে কমিটি ভাঙ্গার অপ-কৌশল করে আসছিলেন। আরেক অভিভাবক সদস্য নাজমুল ইসলাম শাহীন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে থাকার লোভ সামলাতে না পেরে, তার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেকে দশম শ্রেণী থেকে নামিয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করান। দু:খজনক হলেও সত্যি যে, আজ এরাই নিজেদের সমাজসেবক সংগঠক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়ান।
মিঃ লিখন আরও বলেন, সভাপতির নির্দেশে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে ভুয়া চিঠি যাছাই করার কারণে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ; অভিভাবক সদস্য মকবুল হোসেনকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এবং দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন। শুধু তাই নয় শাহীন বাদশাহ সেদিন কসম করে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, কত টাকা লাগে লাগুক আমি এই কমিটি ভেঙ্গে আপনাদের বুঝিয়ে দিবো কতধানে কত চাল। অভিভাবক সদস্য মকবুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশার কুট কৌশলের ফাঁদে পড়েছে আমাদের সভাপতি শামসুল আলম বাবু।
তিনি আরও বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ আমাকেও পদত্যাগ করার জন্য বলেন। আমি পদত্যাগে রাজি নাহলে তিনি আমাকে ১লাখ টাকা অফার করেন। এতে আমি রাজি না হলে তিনি আমার স্বাক্ষর জাল করে বোর্ডে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছে বলে শুনেছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ঐতিহ্যবাহী আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় হারাবে তার আপন জৌলুশ ও খ্যাতি। আমি মাধ্যমিক শিক্ষা কতৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাহিগঞ্জের একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, এর আগেও শুনেছি শকুনের কু-দৃষ্টি থেকে মুক্তি পাচ্ছেনা আমাদের প্রাণের স্পন্দন আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়। ইতিপূর্বে যারা কমিটিতে ছিলেন তারা লুটপাট করে খেয়েছে গণমাধ্যমের বদৌলতে সেটা জেনেছি। আমরা ভোট দিয়ে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের নির্বাচিত করেছি। কিন্তু এখন যা শুনছি তাতে মানুষের প্রতি দিনান্দিন ঘৃণা বাড়ছে। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এভাবে চলতে পারেনা। অতিসত্বর সাবেক শিক্ষার্থীদের এক হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
এবিষয়ে জানতে স্কুলের সভাপতি শামসুল আলম বাবুর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে কল তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অপরদিকে তার ব্যবসায়ীক অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। অভিভাবক সদস্য আব্দুর রহমান নিকট অনিয়ম দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন আমার এসব আর ভালো লাগেনা। আমি অনেক আগেই পদত্যাগ করেছি। কত আগে পদত্যাগ করেছেন? এ প্রশ্ন করার সাতে সাতেই তিনি ফোন কেটে দেন। পুনরায় তাকে ফোন দিলে তিনি অসুস্থ বলে আবারও ফোন কেটে দেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ এর অনিয়ম দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয় জানতে, আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ প্রশিক্ষণ জনিত কারণে ছুটিতে আছেন। পরে স্কুলের ব্যবহৃত ফোন নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পর্ব.....১
“উপদেষ্টা
ও সম্পাদক
মন্ডলী”
প্রধান উপদেষ্টা- মোঃ মকবুল হোসেন।
আইন উপদেষ্টা- মোঃ জুয়েল ইসলাম।
প্রকাশক ও সম্পাদক- লাতিফুল সাফি ডায়মন্ড।
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক- বাপ্পি সরকার।
“বার্তা
সম্পাদকীয় অস্থায়ী
কার্যালয়”
নিরাপদ টেলিকম এন্ড এন্টারটেইনমেন্ট,
কিশোরগঞ্জ রোড, তারাগঞ্জ বাজার- রংপুর মোবাইলঃ +8801735661194.
সংবাদ পাঠানোর ই-মেইলঃ 71sangbad24.com@gmail.com,
পত্রিকাটি বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশনে নিবন্ধিত-(আই ডি নং-364) এবং বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।