Friday, April 26, 2024
Homeকৃষি ও অর্থনীতিনড়াইলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনেও মন ভালো নেই কৃষকের

নড়াইলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনেও মন ভালো নেই কৃষকের

উজ্জ্বল রায়- নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ
নড়াইলে ধানের বাম্পার ফলনেও মন ভালো নেই কৃষকের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার নড়াইলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ফলন ভালো হলেও ঝড়-বৃষ্টির প্রভাবে ধানে ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি ধানকাটা ও মাড়াই করা শ্রমিকের পারিশ্রমিক বেশি ও মণপ্রতি ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক।
এদিকে কখনো ঝড়োহাওয়া বইছে, আবার কখনো বৃষ্টি হচ্ছে। একটানা দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হলেও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিনই। এর প্রভাব পড়েছে চলতি বোরো ধানক্ষেত ও শ্রমিকের ওপর। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জেলার মাঠে মাঠে বোরো ধানের জমিতে পানি জমে গেছে। এতে কেটে রাখা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে বৃষ্টি আর শ্রমিকের অভাবে পাকাধান ঘরে তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের।

কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় ইতোমধ্যে শতকরা ৭৮ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। আবার ঝড়-বৃষ্টি শুরুর আগেই যাদের ধান কাটা শেষ হয়েছে, তাদের অনেকেই ধান শুকাতে পারেনি। ফলে গন্ধ হয়ে গেছে ধানে। বৃষ্টি ভেজা ধান ও গাছে আক্রমণ করেছে ছত্রাক।

কৃষকরা বলছেন- বৃষ্টির কারণে ধান ভিজে গেলে সেই ধান আর গোলায় রাখা যায় না। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধ করে চাল করতে হয়। এমন ধানের চালের রংও কিছুটা লালচে হয়। নষ্ট হয়ে যায় স্বাদও। শুকাতে না পারায় কিছু ভেজা ধান থেকে অঙ্কুর (অঙ্কুরোদগম) বেরিয়েছে। http://ধানফলে ওই ধান গবাদি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কোনো কাজে আসছে না কৃষকের। কিছু কিছু এলাকায় ঝড়ের বাতাসে ও বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়েছে; ধানখেতে রেখে আসা কাটা ধান বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। তিন থেকে চারদিন খেতে পানি জমে থাকায় পাকাধান গাছের গোড়া পচে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে পাকা ধান। ফলে এলাকার কৃষক বেকায়দায় পড়েছে।

অপরদিকে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ধান হেফাজত করতে ব্যস্ত চাষিরা ধানের খড় সংরক্ষণ করতে পারছেন না। তাই মাঠের মধ্যেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য খড়। এছাড়া খড় শুকানোর মতো মাঠ বা প্রখর রোদ না থাকায় খড় সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ধানের ক্ষতির পাশাপাশি খড়ের (গো-খাদ্যের জন্য বিচালি) ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন খামারিরা।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পানিতে তলিয়ে থাকা ধান থেকে বীজ করাও কঠিন। ফলে বীজ সংরক্ষণও হুমকির মুখে পড়েছে। আবার সময়মতো দিনমজুর না পাওয়ায় অনেকে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটতেও পারেনি। http://আবহাওয়া অধিদপ্তরখেত মজুরের খরচসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়ে লোকসান গুণতে হতে পারে বলে অনেকে ধান কাটতে অনীহা দেখাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়- গেল কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নড়াইল সদরের কাড়ার বিল, গোবরা বিল ও কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী বিল ও পাটেশ্বরী বিলসহ অনেক বিলের ধানের জমি তলিয়ে গেছে। জমির পানি এখনো শুকায়নি। তাছাড়া রয়েছে চরম শ্রমিক সংকট। সব মিলিয়ে ধান ঘরে তুলতে পারছে না চাষিরা।
নড়াইল সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের শোভারঘোপ গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম মোল্যা বলেন, টানা বৃষ্টিতে ধানক্ষেতে পানি জমে গেছে। শ্রমিকের সংকটে ধানও কাটতে পারছি না। তিন বেলা খাওয়া আর দিন প্রতি ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

একই ইউনিয়নের গোবরা গ্রামের কৃষক বাবু মোল্যা বলেন- অনেক কষ্টে ধান কেটে বাড়ি নিয়ে আসলেও মাড়াই করা শ্রমিকের অভাবে প্রায় এক সপ্তাহ ধান পালা (গাদি মারা) করে রাখায় ধানে অঙ্কুরোদগম বেরিয়েছে, খড় পচে যাচ্ছে। এমনকি নিচ দিয়ে ইঁদুরে ধান খেয়ে ফেলছে।

তকিবার মোল্যা ও রবি বিশ্বাস নামের দিনমজুর জানান- ধানগাছ ভিজে যাওয়ায় সেগুলো কাটতে ও এবং কাদায় সেগুলো বহন করতে খুব সমস্যা হচ্ছে। এতে সময় ও শারীরিক পরিশ্রম দুই-ই বেড়ে গেছে। তাই শ্রমের দামও বেড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নড়াইল কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) দীপক কুমার রায় জানান- ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে দুর্বল হয়ে ঢোকায় এর প্রভাবে জেলায় ফসলের ক্ষতি ‘তেমন হয়নি’। বরঞ্চ বৃষ্টির ফলে প্রকৃতপক্ষে পাটচাষের ব্যাপক উপকার হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কৃষকরা এখন পর্যন্ত ৭৮ শতাংশ ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের আগেই জেলার কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছিল ধান কেটে ফেলতে। তবে গো-খাদ্যের জন্য বিচালি করতে শুকানোর উদ্দেশ্যে মাঠে কেটে রেখে দেওয়ায় কিছু ধান বৃষ্টিতে ক্ষতি হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, বাস্তবে বাতাসের তীব্রতা কম থাকায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments