Friday, April 26, 2024
Homeচট্টগ্রাম বিভাগলক্ষ্মীপুর জেলাআদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত- লক্ষ্মীপুরে ব্যাটারিচালিত অটো গলার কাঁটা

আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত- লক্ষ্মীপুরে ব্যাটারিচালিত অটো গলার কাঁটা

আবীর আকাশ- লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
সারা দেশে ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি আজও। দেশের সব শহরের অলিতে-গলিতে ও গ্রামে-গঞ্জে অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ৫০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। বেপরোয়া গতিতে চলাচল করার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে এসব যান চার্জ দেওয়ায় দৈনিক সাড়ে ১২ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুরে ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব ইজিবাইক। শহরে এর যানজট তীব্র আকার ধারন করেছে। পৌর মেয়র উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। লক্ষ্মীপুর জেলায় কোথাও এ বিদ্যুৎ দুর্যোগে বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন তথা ইজিবাইকের বিরুদ্ধে কোনো রুপ ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। কিন্তু বিদ্যুতের সিংহভাগ যাচ্ছে এ ইজিবাইকের পেটে।

সম্প্রতি বিদ্যুতের অপচয় রোধে ঘণ্টার আগে পর লোডশেডিং শুরু করেছে সরকার। এছাড়া অফিস আদালতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদের এসি বন্ধ রাখারও নির্দেশনা এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে ৯০ শতাংশ গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে চার্জ দেয়া হচ্ছে ব্যাটারিচালিত যানবাহন। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা জারি না হওয়ায় দেশজুড়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশার আধিপত্য।

অবাধে চলছে ৫০ লাখ ব্যাটারিচালিত যান-
অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ৫০ লাখ। এর মধ্যে ৪১ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ৯ লাখ ইজিবাইক রয়েছে। এগুলোর জন্য অন্তত ৬০ লাখ চালক রয়েছেন, তারা দুই-তিন শিফটে এসব যানবাহন চালান।

মূল সড়কে এসব ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সুযোগ বুঝে মূল সড়কেও ঢুকে পড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলোতে এসব যানবাহনের আধিক্য বেশি। বেপরোয়া গতিতে চলাচল করার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা দূর্ঘটনা। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় এসব যানবাহন বন্ধের দাবি ওঠে। গত বছরের ১৫ই ডিসেম্বর এসব যান বন্ধ ও আমদানি নিষিদ্ধের ঘোষণাও দেন হাইকোর্ট।

৯০ শতাংশ গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে হচ্ছে চার্জ-
পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৯০ শতাংশ গ্যারেজেই নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। অনেক স্থানে চলছে মিটার টেম্পারিংয়ের মতো ঘটনা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে ইজিবাইক আমদানি বন্ধ ও পুরনোগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি গত কয়েক বছরেও। মহাসড়কগুলোতে এই যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, নামধারী সাংবাদিক, ডিপিডিসি, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই রাস্তায় চলছে অটোরিকশা। এসব অটোরিকশার পেছনে হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতের সংযোগের মাধ্যমে সারা দেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চার্জ দেয়া হচ্ছে বেশি বলে জানা গেছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিটি ইজিবাইক কিংবা ব্যাটারিচালিত রিকশায় ১২ ভোল্টের তিনটি হেভি ব্যাটারি থাকে এবং প্রতিদিন দুবার করে চার্জ দিতে হয়। প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৮০০-১০০০ ওয়াট হিসেবে ৫-৬ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসেবে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিনটি হেভি ব্যাটারি দৈনিক দুবার চার্জ করতে ৩০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। সারা দেশে যদি ৫০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক থাকে তাহলে দৈনিক গাড়ি প্রতি ৩০ ইউনিট করে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। এতে সরকারের বাজেটে একটা বিরূপ প্রভাব পড়ছে, হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

উচ্চ আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে না-
২০২১ইং সালের ১৫ই ডিসেম্বর সারা দেশে ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তাছাড়া ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহন আমদানি ও বিক্রির উপরেও নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। এর আগে দেশে মোটরচালিত সব রিকশা থেকে ব্যাটারি ও অন্যান্য মেশিনারি যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

সড়ক পরিবহন খাতে ব্যবস্থাপনা জোরদার করা এবং হাইওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গত বছরের ২৩শে জুন গঠিত টাস্কফোর্সের মিটিং শেষে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৭ইং সালেও একবার উচ্চ আদালত সড়কে অনুমোদনহীন বা তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন-
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এসব বন্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের যোগসাজশে চলছে এসব যান।

ইজিবাইক প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ ক্ষয় করছে। যা দিয়ে দেশের কয়েকটি বড় শিল্প পরিচালনা করা সম্ভব। এসব যানবাহন ব্যাটারিতে না চালিয়ে প্যাডেল দিয়েও চালানো সম্ভব। তাহলে কেন মূল্যবান বিদ্যুৎ ব্যয় করতে হবে। মনে রাখতে হবে মানুষের জীবন আগে, তারপর জীবিকা। সারা দেশে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো হোক। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ানোকে নিরুৎসাহিত করা উচিত।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভা মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন- আমরা ইজিবাইকগুলোকে রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে পৌর এলাকায় মাইকিং করা হয়েছ। আশা করছি রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হলে ইজিবাইক একটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ এ প্রতিবেদককে বলেন ইজিবাইক যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা বন্ধের যে নির্দেশনা এসেছে তা ২৯২১ইং সালে। আপাতত তা নিয়ে নতুন কোনো নির্দশনা পাইনি। তবে ইজিবাইক নিয়ে পৌরসভা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments