বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদঃ
অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম “৭১সংবাদ২৪.কম” এ প্রতিনিধি আহ্বান করা হয়েছে। আগ্রহীগণ জিবনবৃত্তান্ত পাঠাতে 71sangbad24.com@gmail.com -এ মেইল করুন
সংবাদ শিরোনামঃ
তারাগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিচার ও অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন খয়েরবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পূর্ণ লক্ষ্মীপুরে ডাকাতির চেষ্টা, শিক্ষিকার চিৎকারে রক্ষা বানেশ্বরে ছাত্রশিবিরের কোরআন শরীফ বিতরণ পাবনায় ওয়ারিয়র্স অব জুলাইয়ের জেলা কমিটি ঘোষণা কোতোয়ালী থানা যুব বিভাগের বদর দিবস উপলক্ষে আলোচনা ধুনটে ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে প্রকল্প বিষয়ক সভা তারাগঞ্জে মাদক সেবনরত অবস্থায় আটক-২ দূর্ণীতির সংবাদ আড়াল করতে সাংবাদিকের নামে ইউএনওর মিথ্যাচার মাত্র ১৫ মাসের শিশু ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত বৃদ্ধ আটক ধুনটে এলাঙ্গী ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল ধুনটে কালেরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি’র ইফতার মাহফিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেস্টা মামলায় গ্রেফতার আ’লীগ নেত্রী লিপির জামিন নামঞ্জুর ধুনটে কু-প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে মারপিট পীরগঞ্জে ভটভটির সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত- ১ পুঠিয়ায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় শিক্ষার্থী গুরুতর আহত নড়াইলে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবক নিহত, অস্ত্রসহ আটক ২ আ’লীগ নেতার দাপটে গৃহছাড়া পরিবার, বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন র‌্যাব-১১, সিপিসি-২’র অভিযানে ফেন্সিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

পেনশনের টাকায় ২৩ বছর ধরে চলছে অনাথ আশ্রম

নাসির উদ্দিন শাহ্- নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ
কেমন আছেন চাঁদমনির সেই অনাথ শিশুরা? অবহেলিত অনাথ শিশুদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে নিঃসন্তান দম্পতি মো. পিজিরুল আলম দুলাল (৭৮), স্ত্রী (মৃত্যু) মোতাহারা বেগম। স্ত্রী হারানোর ব্যাথা ও নিঃসন্তান জীবনের ঠাঁই পেতে ২৩ বছর আগে গড়ে তুলেন ‘চাঁদমনি’ নামের মেয়ে শিশুদের জন্য একটি অনাথ আশ্রম।

কে এই পিজিরুল আলম দুলাল? তিনি হলেন- নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের চাওড়াডাঙ্গী গ্রামে সাবেক এই ব্যাংক কর্মকর্তা। ১৯৯৬ সালে উত্তরা ব্যাংকের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন তিনি। তাঁর বাবার নাম মোসলেম উদ্দিন আহমেদ একজন স্কুলশিক্ষক ও মাতা পিয়ারা আহমেদ সমাজকর্মী ও ঢাকার গোপীবাগের একটি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

বাবা মায়ের পরামর্শে ওই গ্রামে ১৯৯৯ইং সালে গড়ে তোলেন ‘চাঁদমনি’ নামে দরিদ্র অসহায় মেয়েদের জন্য একটি অনাথ আশ্রম। সেখানে বর্তমানে ৩৫ জন বিভিন্ন বয়শের মেয়ে পড়ালেখা করছেন। ওই আশ্রমের ধারন ক্ষমতা ৪৫-৫০ জনের।

অনাথ মেয়ে শিশুদের কথা চিন্তা করে প্রথম ৫ জন শিশু দিয়ে যাত্রা শুরু করেন দুলাল। এখন চাঁদমনি ২৩ বছরে পা দিয়েছে। তিনি জানান, ৭০০-৮০০ মেয়ে শিশু লেখাপড়া শিখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থান করে নিয়েছে। সমাজসেবা মূলক কাজের জন্য জেলায় পরিচিতি পেয়েছে ‘চাঁদমনি’। ২৩ বছর ধরে চাঁদের আলো ছড়াচ্ছেন ‘চাঁদমনি’

তাঁর পৈত্রিক ভিটা চাঁদমনিতে বিনা মূল্যে থাকা, খাওয়া ও লেখাপড়ারসহ ৩৫ জন (দ্ধিতীয় শ্রেণি থেকে আইএ পর্যন্ত) শিক্ষার্থী জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে। আর এসব খরচ চালিয়ে যাচ্ছে ‘চাঁদমনির’ প্রতিষ্ঠাতা দুলাল। বিশেষ করে যাদের বাবা নেই, মা নেই অথবা বাবা, মা দু,জনে নেই এমন শিশুদের শিক্ষিত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করায় এলাকায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- এখানে থাকার শর্ত হলো বাল্যবিবাহ দেওয়া চলবে না, কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াতে হবে, ধর্মান্ধতা-কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক জীবন পরিচালনা করা।

শিশুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে জানান- লেখাপড়ার জন্য নিরিবিলি পরিবেশ, রয়েছে হলরুম ও বইয়ের লাইব্রেরি, পড়ার জন্য নিজ নিজ কক্ষে রয়েছে চেয়ার ও টেবিল। ক্লাসের বই পড়া ছাড়াও ছবি আঁকা, বির্তক প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ছোট গল্প, উপন্যাস ও বড় বড় গুণী জনের জীবনী পড়ার প্রতিযোগিতা। এভাবে ২৩ বছর ধরে চলছে অনাথ আশ্রম ‘চাঁদমনি’।

১৯৯৯ সালে জেসমিন বানু নিপা, অঞ্জুয়ারা নিশা, প্রীতি, স্মৃতি ও নীলাকে দিয়ে যাত্রা করেন চাঁদমনি। তাঁরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। তাঁদের পরে আসে রুবি, দীপা, হেলালি ও নুপুরসহ অনেকে।

বর্তমানে ৩৫ জনের মধ্যে জাকিয়া, পিংকি, ফেরদৌসি, শান্তনা, সুমা, লাভলি, আরেফা, আশামনি, নিশাদ, তানজিলা, দুলালী, পিয়া, হাবিবা, নদী, রুবিনা, রুজিনা (দুই বোন), মুনমুন, মেজিকা (দুই বোন) মঞ্জিলা, মম, মিতু (দুই বোন) এদের বাবা মা কেউ নেই, মিম, মিনি আকতার, মোজকা আকতার ।

মিম ও মিনির মা হাসিনা বেগম জানান- ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর অভাবের সংসারে তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে চরম কষ্টে দিন যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন এলাকার ডিম বিক্রেতা প্রদীপ কুমারের কাছে জানতে পরি চওড়াডাঙ্গী গ্রামে ‘চাঁদমনি’ নামে একটি অনাথ আশ্রম আছে। তার হাত ধরে দুই মেয়েকে রেখে যাই সেখানে। এখন আমার মেয়েরা খুব সুখে আছে এবং লেখা করছে। আমি প্রাণভরে পিজিরুল ভাইয়ের জন্য দোয়া করি গরীব এতিম শিশুদের উপকার করার জন্য’।

চাঁদমনির শিক্ষার্থী ও উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের মটুকপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃতু হুজুর আলীর মেয়ে মনিরা আকতার মনা জানান, ২০১২ সালে এখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই। এখন আমি জলঢাকা কলেজে অর্নাস দ্ধিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আমরা দুইবোন ও এক ভাই। আমার ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গেছে ও ছোট ভাই ইমরান এখন নবম শ্রেণীর ছাত্র। বাবা মরার পর মায়ের হাত ধরে চাঁদমনিতে এসে ভর্তি হই। বাবা না থাকলেও সেই জায়গা পুরন করে বুকে আগলে রেখেছে আমার পিতা (অভিভাবক) পিজিরুল আলম দুলাল। বাবা ও মা হারা আমার মতো ৩৫ জন একসাথে ‘চাঁদমনিতে’ লেখাপড়া শিখতে পেরে ভাল লাগছে। এমন কাজের জন্য আমরা সবাই দোয়া করি উঁনি যেন এই কাজ করার আল্লাহ্ যেন শক্তি দেয়।

চাঁদমনি থেকে লেখা পড়া করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জেসমিন বানু নিপা, মন্তেজা বানু, রিতনা আকতার রিতা, লিপসি আকতার (এমএ), ফিরোজা আকতার (বিএ) এরা সবাই এখন চাকুরিজীবি । নিপা বিএসসি পাস করে বর্তমানে চাকরি করছেন সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে। নার্সের চাকুরি পেয়েছে মনতেজা বানু ও মফেজা বানু। রিতিনা বানু রিতা, লিপছি আক্তার রুবি ও আফরিন নাহার শোভা চাঁদমনির সহায়তায় অর্থনীতিতে এমএ করছেন কারমাইকেল কলেজ থেকে।

জানতে চাইলে পিজিরুল আলম দুলাল বলেন- এযাবত ‘চাঁদমনি’ থেকে এসএসসি পাস করেছে প্রায় ১৫০ জন, এইচএসসী ১৫০, বিএ ছয় জন ও এমএ পাশ করেছেন ৪ জন।

তিনি আরও বলেন- গ্রামের অবহেলিত ও সবিধা বঞ্চিত শিশুদের গড়ে তুলাই ‘চাঁদমনির’ প্রধান কাজ। এ ছাড়াও, সপ্তাহে চার দিন অভিজ্ঞ আলেম দিয়ে কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয়। ছবি আঁকার ক্লাস হয় সপ্তাহে এক দিন। মাসে দু,দিন গান শেখানো হয়। মেয়েদের হস্তশিল্প ও সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

‘চাঁদমনির’ প্রতিষ্ঠাতা বলেন- ‘তৃর্ণমূলে কন্যাশিশুরা প্রাথমিকের সিঁড়ি পেরিয়ে মাধ্যমিকে যাওয়ার আগেই ঝড়ে পড়ে যায়। অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে কোনো রকমে শিক্ষিত হলেও ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারে ঢেঁকে যায় তাদের জীবন। সমাজে তাদের প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে চাঁদমনি।’

মহান এই ব্যক্তি তাঁর অবসর জীবনের পেনশনের সব টাকা ও পৈত্রিক জায়গা জমি চাঁদমনিতে দিয়েছেন। সেখানে বাৎসরিক ব্যয় প্রায় সাত-আট লাখ টাকা। আর এই টাকা বন্ধু-বান্ধব, ব্যাংকের সাবেক সহকর্মী, বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয়, বোন মাসুদা বেগম, ভগ্নিপতি আব্দুল কাদের সরকার, ডা.শামিম হাসানসহ পরিবারের লোকজন সহযোগিতা করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হলেও কাউকে তিনি মুখ ফুঠে বলেন না সেই সমস্যার কথা। শত সমস্যা নিয়ে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন এই মানবসেবা।

নীলফামারী চেম্বার অব কর্মাস‘র সভাপতি প্রকৌশলী এসএম শফিকুল আলম ডাবলু বলেন- সমাজের অনেক সম্পদশালী মানুষ আছে, তারা এসব কাজের ধার দিয়ে হাঁটেন না। অথচ বৃদ্ধ বয়সে মা, বাবার মতো দায়িত্ব নিয়ে মেয়ে শিশুদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন দুলাল ভাই। এটি একটি মহতি উদ্যোগ। পৃথিবী যতদিন থাকবে এই কাজ সমাজে ইতিহাস হয়ে থাকবে। একাজে বৃত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহব্বান তিনি।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন- চাঁদমনির প্রতিষ্ঠাতা পিজিরুল আলম দুলাল একজন প্রগতিশীল মানুষ। তিনি বলেন- দেশের নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে তাঁর প্রয়াশ সমাজে উদাহরণ হয়ে থাকবে। এমন মহৎ কাজে প্রত্যেকের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

©2019 copy right. All rights reserved 71sangbad24.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com