বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৯ অপরাহ্ন
এম শাহীন আলম- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
তথ্য সংগ্রহকালে সাংবাদিককে পাহাড়ী উগ্রপন্থিদের দিয়ে উঠিয়ে নেওয়ার টিআই ইন্সপেক্টর সুপ্রিয় দেবের হুমকী
দেশের পার্বত্য অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌদর্য্যে লীলা ভূমি ও পর্যটন জেলার মধ্যে অন্যতম খাগড়াছড়ি জেলা। যেখানে পাহাড় ঘেষা চমৎকার রাস্তায় চলাচল করছে ছোট,মাঝারি,বড় সহ প্রায় সকল ধরনের যানবাহন।এসব যানবাহনে বিভিন্ন কারনে বেশিরভাগ গাড়িতেই নেই ফিটনেস কিংবা বিআরটিএ অনুমোদিত রেজিস্ট্রেশন নাম্বার,এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক ফায়দা লুটে সকল ধরনের ছোট বড় যানবাহন থেকে মাসিক টোকেন চাঁদাবাজির অভিযোগ খোদ জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই ও সার্জেন্টদের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে যানবাহন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলার সকল রোডে চলাচলরত যানবাহন থেকে বিভিন্ন পরিবহন মালিক শ্রমিক সংগঠনের ছত্র-ছায়ায় বিরতিহীন ভাবে ঘুষ বাণিজ্যে চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গাড়ি রিকুইজিশন আর কাগজপত্র চেকের নামে হয়রানি ও ঘুষ বানিজ্য তো অব্যাহত রয়েছে। আর চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ বানিজ্য তো প্রতি দিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে।
খাগড়াছড়ির পৌরসভা এলাকা,দীঘিনালা,মাটিরাঙ্গা,গুইমারা, জালিয়াপাড়া,রামগড়ের প্রতিটি এলাকায় কর্মরত টিআই এবং সার্জেন্টরা আছেন ক্যাশিয়ারের মূল ভূমিকায় তাৎক্ষণিক টাকা দিলে রেহাই,চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে বিভিন্ন ধারায় মামলা দেওয়ার অভিযোগ অহরহ।খাগড়াছড়ি ট্রাফিক পুলিশের টিআই এবং সার্জেন্টরা প্রতি দিনের ডিউটির পাশাপাশি বিভিন্ন অজুহাতে রাস্তায় গাড়ি আটক রেখে ব্যতিব্যস্ত নিজেদের পকেট ভরার কাজে । ট্রাফিক বিভাগকে আধুনিকায়ণ করা করা হলেও, সাথে সাথে অনিয়মের পদ্ধতিও বদলে যাচ্ছে।
এছাড়া খাগড়াছড়ি ট্রাফিকের বিরুদ্ধে এমন-ই ডিজিটাল অনিয়ম আর ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে চরমে।আগে সরাসরি ঘুষ গ্রহন করলেও বর্তমানে কৌশলে বিভিন্ন মালিক শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদা আদায় করছেন তারা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে স্হানীয় সূত্র মতে জানা যায় , যখন যে টিআই ইন্সপেক্টরের দ্বায়িত্ব পান তার প্রতিমাসে মাসিক নিজস্ব আয় লাখ লাখ টাকা, সাথে রয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কমিশন। ফলে লোভনীয় পদে বসতে চলে বড় রকমের দেনদরবারও।
প্রত্যেক এডমিন তার নিজস্ব পছন্দের মানুষ দিয়ে চালান তাদের অনিয়ম দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্য। এরই মধ্যে খাগড়াছড়ি ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নত না হলেও নিজেদের পকেট ভরতে ব্যস্ত সময় পার করেন ট্রাফিক পুলিশের সিন্ডিকেটটি।
গাড়ি মালিক ও শ্রমিক সমিতিসহ শহরে চলাচল করা সব ধরনের যানবাহন থেকেই উঠানো হচ্ছে মাসিক টোকেন মাসোহারা। খাগড়াছড়ি ট্রাফিক বিভাগ গাড়ির মালিক ও শ্রমিকরা হয়রানি থেকে বাঁচতে ও জরিমানার ভয়ে নিজ থেকেই যোগাযোগ করেন ট্রাফিক অফিসের দ্বায়িত্বে নিয়োজিত দুর্নীতিবাজ কর্তা ব্যক্তিদের সাথে।
এদিকে মাসোহারার টোকেন বাণিজ্য রমরমা’র সাথে যোগ হয়েছে “ভুয়া কেস স্লিপ”। বর্তমান গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে টিআই এডমিনের দ্বায়িত্বে আছেন সুপ্রিয় দেব। মুলহোতা অঘোষিত ক্যাশিয়ারের দ্বায়িত্ব পালন করছেন তার ঘনিষ্ঠ এক পরিদর্শক।তিনি যোগদানের পর থেকেই জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলার গাছ কাঠ বোঝাই ট্রাক মালিক, বাস মালিক সমিতি, সিএনজি, অটোরিকশা, ট্রান্সপোর্টসহ খাগড়াছড়ি জেলার সকল রাস্তায় চলাচলকৃত সব ধরনের মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি।
সচেতন স্হানীয় লোকজন বলছেন,খাগড়াছড়ির ট্রাফিক পুলিশের এই টোকেন মাসোহারার কারণে সরকার বিপুল পরিমানে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফিটনেসবিহীন গাড়ী চলাচল করায় সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা, প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানি। শহরজুড়ে অনুমোদনহীন গাড়ির ছড়াছড়ি থাকলেও ট্রাফিক পুলিশ পড়ে আছে চাঁদের গাড়ি, পিকাপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা আর সিএনজির পেছনে।
এসব গাড়িতে সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দিতে হয়, কাগজপত্র না থাকলেও মাসিক টাকা দিতে হয়। সরেজমিনে বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের সাথে কথা বললে তারা জানান ট্রাফিক পুলিশকে যেহেতু টাকাই দেওয়া লাগে তাই তারা গাড়ির কাগজপত্র রেজিস্ট্রশন করেন না, এতে করে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আর ট্রাফিক পুলিশের পকেট হচ্ছে ভারী কাগজপত্র করতে নিরুউৎসাহিত হচ্ছে যানবাহন সংশ্লিষ্টরা।
আরো জানা যায়, জনসাধারণ ও সরকারকে দেখানোর জন্য কিছু মামলা দিয়ে রাজস্ব আয় দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা ব্যস্ত আছেন মাসিক টোকেন আর আটক বাণিজ্য নিয়ে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে খাগড়াছড়ির ছোট বড় পরিবহনের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান টিআই প্রশাসন যোগদানের পর থেকে খাগড়াছড়ি জেলা এবং সকল উপজেলায় চলাচলরত বেশিরভাগ যানবাহন মাসিক টোকেনে ঘুষ বানিজ্য ছাড়া রাস্তায় চলাচল করা মুসকিল।