সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ অপরাহ্ন
সিরাজুল ইসলাম- ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ
রংপুরের পীরগঞ্জে ঘর-বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে ১ ইউপি সদস্য ও ৬ গ্রাম্য পুলিশসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, দিন-দুপুরে ঘর-বাড়ি ভাংচুর, মারডাং ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
মূলতঃ পূর্ব শত্রুতা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করা হয়েছে মর্মে ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ী গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়- ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের মৃত নছির উদ্দিনের পুত্র আব্দুল জলিল মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনে পুত্র আবুল কাশেম মিয়া গং এর ২৪ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
উক্ত জমির অংশীদার দাবি করে জলিল মিয়া নিজেসহ তার স্ত্রী গোলাপী বেগম, ছেলে চাঁন মিয়া ও মেয়ে জেসমিন বেগমকে দিয়ে বিভিন্ন সময় আবুল কাশেম ও তার পরিবারের সদস্যদের আসামী করে ফৌজদারী কার্যবিধিতে আদালতে ইতিপূর্বে ৩টি মামলা করেন। প্রত্যেকটি মামলার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আসামীদ্বয়কে অব্যাহতি কিংবা মামলা খারিজ করেন।
রংপুর ১ম শ্রেণীর আদালতে ১৩ জনকে নারী-পুরুষকে আসামী করে জলিলের মেয়ে জেসমিন বেগম বাদী হয়ে সিআর- ১১৯/২০০২ মামলা করেন। মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত গত ১৯শে মে ২০০৩ইং আসামীদের অব্যাহতি প্রদান করেন। ২০১১ইং সালের রংপুর অতিরিক্ত দায়রা জজ, ২য় আদালতে ১৮জনকে আসামী করে আব্দুল জলিল বাদী হয়ে জিআর ৬৪/১১ মামলা করেন। আদালত অভিন্ন কারণে ২২মে ২০১১ সালে আসামীদের অব্যাহতি প্রদান করেন।
উক্ত জমির অংশীদার দাবি করে সুচতুর আব্দুল জলিল তার শ্বাশুড়ী কেতিমাইকে দিয়ে উচ্চ আদালতে আপীল করলে ১৯শে অক্টোবর ২০২০ইং সালে এবং অন্য আপীল মামলা নং- ৯৯/০৭ করলে ২৫শে মে ২০১৪ই সালে আদালত মামলা খারিজ করেন। ২০১৮ইং সালেও আপীল আবেদন করে ব্যর্থ আব্দুল জলিল সকল বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে গত ১৭ই ফেব্রুয়ারী ২০২২ইং তারিখের দিনগত রাতে সকলের অজান্তে আব্দুল জলিল ও তার লোকজন বিবাদীর ভোগ দখলীয় জমিতে টিনের বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণের চেষ্টা করে।
পরদিন সকালে বিবাদী আবুল কাশেম স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করলে চেয়ারম্যান আদালতের রায় ও বিরোধপূর্ণ জমির কাগজ পর্যালোচনা করে দেখেন যে, আব্দুল জলিল বে-আইনীভাবে উক্ত জমিতে টিনের ঘর নির্মাণে চেষ্টা করছেন। ঐ দিন দুপুরে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য এনামুল হক ও ৬ গ্রাম্য পুলিশকে পাঠালে আব্দুল জলিল ও তার স্ত্রী গোলাপী বেগম আত্নগোপন করেন। পরে বিনা বাধায় বাঁশের খুটি ও টিনের বেড়াগুলো ভ্যানযোগে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন।
এ ঘটনায় গত ২৩শে ফেব্রুয়ারী জেলা রংপুরের পীরগঞ্জ আমলী আদালতে ইউপি সদস্য এনামুলকে প্রধান আসামী করে ৬ গ্রাম্য পুলিশ ও আবুল কাশেমসহ তার পরিবারের ১২ জনকে আসামী করে জলিলের স্ত্রী গোলাপী বেগম বাদী হয়ে ঘর-বাড়ি ভাংচুর, মারডাং ও লুটপাটের মামলা করেন।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও প্রতিবেশী হাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে বলেন- আব্দুল জলিল তার অংশের সমুদয় জমি অনেক আগেই বিক্রি করেছেন। এ বিষয়ে পরিষদে অনেকদিন বসাও হয়েছিল। একাধিক আদালতের রায়ও তার বিপক্ষে।
প্রতিবেশী সাবেক ইউপি সদস্যা শিরীনা আক্তার জানান- ঐ জমি দীর্ঘকাল ধরে আবুল কাশেম ও তার অংশীদাররা ভোগদখল করে আসছেন।
ঘর-বাড়ি ভাংচুর প্রসঙ্গে কথা বলতেই তিনি বলেন- ঐ জমিতে কোন ঘর বা বাড়ি ছিলনা। আমি ১৮ ফেব্রুয়ারী ভোর বেলায় বেরিয়ে দেখি আব্দুল জলিলসহ ৫/৬ জন লোক টিনের বেড়া ও বাঁশের খুটি গাড়ছে।
মারডাং এর বিষয়ে প্রতিবেশী আসলাম হোসেন জানান- মেম্বার ও চৌকিদাররা জলিল ও তার স্ত্রীকে টিনের বেড়া এবং বাঁশের খুটি সরানোর অনুরোধ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করে। পরে বিনা বাধায় টিনের বেড়া ও বাঁশের খুটিগুলো ভ্যানযোগে পরিষদে নিয়ে যায়।
পাকুড়িয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন- আব্দুল জলিল গ্রামের অনেক অসহায় পরিবারকে মিথ্যা মামলার গ্যাড়াকলে ফেলে সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান ছাদেকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন- মামলা করেছে তা আপনার মাধ্যমে জানলাম। যদি এমন হয় তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মানহানী মামলা করব।
এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান আসাদ জানান- তদন্ত কেন্দ্র থেকে ঘটনাস্থল কোয়াটার কিঃমিঃ মাত্র। এ ব্যাপারে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে লোকমুখে শুনেছি আব্দুল জলিল অবৈধ পন্থায় জমি দখলের চেষ্টা করেছিল। যা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আব্দুল জলিল তার নিজ গ্রামের প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে ডজন খানেক মামলা করেছেন আদালতে। প্রত্যেকটি মামলা ফৌজদারী কার্যবিধিতে হলেও আদালত ব্যতীত স্থানীয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র কিংবা থানায় কোন মামলা নেই। এ জন্য পাকুড়িয়া গ্রামসহ আশপাশের লোকজনের নিকট মামলাবাজ জলিল নামেই সে পরিচিত।