সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন
হাসানুর কাবির মেহেদি- নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
প্রসবকৃত নবজাতকের পিতৃপরিচয়ের দাবি করেছেন কুমারী মা।
নীলফামারীর জলঢাকায় ধর্ষণের শিকার ১২ বছরের নাবালিকা জবা আক্তার (ছদ্মনাম) ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন।
প্রতিবেশী নানা সম্পর্কের মৃতঃ অকস জব্বার খাঁ’র ছেলে মহুবার খাঁ(৫৫) লোভ ও মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে নাবালিকা জবাকে (ছদ্মনাম)।
এভাবে ওই নাবালিকার বাড়ি ও বাড়ির বাহিরে একাধিক বার ধর্ষণ করে লম্পট নানা মহুবার খাঁ। এর একপর্যায়ে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হলে চাপ সৃষ্টি করে গর্ভপাতের। এতে স্থানীয় মাতবর ও চেয়ারম্যান বিচারে ব্যর্থ হওয়ায় মামলা গড়ায় জেলা আদালত পর্যন্ত। জন্মনিবন্ধন সূত্রে ধর্ষণের শিকার নাবালিকা মেয়েটির জন্ম ২০১০ই সালের ৭ই মার্চ।
মামলা সূত্রে জানা যায়- উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের দিনমজুর হাসিম খাঁ ও স্ত্রী তাদের নাবালিকা কন্যাকে রেখে তারা অন্যের বাড়ি কাজে যেতেন।
এ সুযোগে প্রতিবেশী মৃতঃ অকস জব্বার খাঁ’র ছেলে মহুবার খাঁ(৫৫) নানা সম্পর্কের পরিচয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে তাদের বাড়িতে আশা যাওয়া করতো।
এ সময় নানা মহুবার খাঁ নাবালিকা কন্যাকে বাড়িতে একা পেয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলে হাসি তামাশার মধ্যে নাবালিকার স্পর্শকাতর স্থানে প্রায় হাত দিতেন।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দুপুরে নাবালিকার নিজ বাড়িতে বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখিয়ে প্রথম বার জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন নানা মহুবার খাঁ। এ সময় নাবালিকা আত্মচিৎকার করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
বিষয়টি কাউকে না বলার নিষেধ করেন। নাবালিকা ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখেন। এরপর বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ির বাহিরে নির্জনস্থানে নিয়ে গিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এর কিছুদিন পর নাবালিকা মেয়েটি অসুস্থ হলে পরিবারের লোকজন তাকে ডাক্তারের নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
অন্তঃসত্ত্বার বিষয়ে নাবালিকা মেয়েটিকে জিজ্ঞেসা করলে- মেয়েটি জানান নানা মহুবার খাঁ এমন করেছে। মুহুর্তেই খবরটি পাড়া প্রতিবেশিসহ এলাকায় জানাজানি হয়। এ ঘটনা স্থানীয় ভাবে সমাধানের চেষ্টা করলে ধর্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যা করার হুমকি দেন।
গত ১১ই এপ্রিল রাতে ধর্ষক মহুবার খাঁ সহ ধর্ষণের শিকার নাবালিকার বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায় প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান খাঁ’র ছেলে জিকরুল খাঁ(৪০),মজু মামুদের ছেলে দুলাল হোসেন(৩৫) ও মোকলে খাঁ’র ছেলে জামাল খাঁ(৩৫)। এসময় তাদের আত্মঃচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে কৌশলে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতিকারীরা।
এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার নাবালিকার পিতা মাতাসহ অনেকে আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তা চেয়েও প্রভাবশালী ওই ধর্ষকের প্রভাবে প্রতিকার না পেয়ে জেলায় বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ধর্ষকসহ সহযোগী ৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন ধর্ষণের শিকার নাবালিকার মা আসমা বেগম(৫২)। যাহার মামলা নং ১১৭/২২। এ মামলায় ধর্ষক লম্পট নানা আটক হলেও বাকি ৩ জনকে রহস্যজনক কারনে উক্ত মামলার চারশিট থেকে সহযোগীদের নাম বাদ দিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে বাদী পরিবারের উপর বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদর্শন করা অব্যাহত রেখেছে আসামীদ্বলের লোকজন বলে জানায় অনেকে।
সরেজমিনে স্থানীয়রা জানায়- হাসিম খাঁ খুবেই গরিব। তার মেয়েকে মহুবার খাঁ জোর করে ধর্ষণ করেছে। এখন মেয়েটির একটি মেয়ে বাচ্চা হয়েছে। এটার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান এলাকাবাসী।
সরেজমিনে ধর্ষণের শিকার নাবালিকা মেয়েটি ফুটফুটে এক নবজাতকে কোলে নিয়ে বসা বসা কন্ঠে বলেন- এই নবজাতক নানা মহুবার খাঁর। বাড়ি ফাঁকা দেখে জোর করে আমার পরনের কাপড় খুলে ওইগুলো কাজ করেছে। এরপর বাড়ির পাশে ঝোপঝাড়ে নিয়ে গিয়ে ওইকাজ করছে।
মেরেফেলার হুমকি দিয়েছিলো যাতে কাউকে বলতে পারিনি। আমার মেয়ের পিতার স্বীকৃতি চাই। এ ঘটনার কথা কাউকে বললে গলা কেটে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এ কারণে ভয়ে মেয়েটি বাড়িতে কাউকে বিষয়টি জানায়নি।
ধর্ষিতা মেয়েটির বাবা হাসিম খাঁ জানায়- আমি একদিন অন্যের বাড়িতে কাজ না করলে আমাদের মূখে খাবার জুটে না। আমার স্ত্রীও অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যায়। একদিন হঠাৎ মেয়েটির অসুস্থতা বুঝতে পেরে জলঢাকায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। সেখানে ধরা পড়েছে মেয়ের পেটে চার মাসের বাচ্চা।
মেয়ে মহুবারের কথা বলে তাদের জানাই। তারা মীমাংসার কথা বলে টালবাহানা শুরু করে। এদিকে ধর্ষক মহুবার ও তার ভাড়াটিয়া ৩/৪ জনকে সাথে নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালায় এবং মেয়ের পেটের সন্তানকে নষ্ট করার সন্ত্রাসী কলা কৌশল চালায়। এতে আমি ও আমার স্ত্রী আহত হয়েছি। স্থানীয়দের পরামর্শে তাং গত ২৭ এপ্রিল নীলফামারী জেলা আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আমি মহামান্য আদালতের কাছে ন্যায় বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
ধর্ষিতার বড় ভাই রবিউল ইসলাম জানান- গত শনিবার সকালে মেয়েটি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ইউপি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য সেবিকারা অনেক যত্নসহকারে নরমালে বাচ্চা প্রসব করায়। মা এবং নবজাতক কন্যা শিশু দুজনেই আমাদের বাড়িতে। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পাচ্ছি না। এবং বুকের দুধ পাচ্ছে না শিশুটি।
ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ ডাঃ পারভীন আক্তার জানান- এই কেন্দ্রে গত শনিবার ৮ই অক্টোবর একজন নাবালিকা মেয়ের নরমালে বাচ্চা প্রসব করা হয়েছে। নবজাতকের পিতার নাম কেউ জানাতে পারেনি। তবে আমরা সার্বক্ষনিক মা এবং শিশু দুজনকে দেখভাল করছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য অলিয়ার রহমান দায়সারা ভাবে বলেন- ঘটনা বিষয়ে কোন পক্ষ আমাকে জানায়নি এবং এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
এব্যাপারে ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মুকুলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায় নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জলঢাকা থানার এসআই সজল কুমার সরকার ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বলেন- ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধিত/০৩) আইনের ৯(১) ধারায় নীলফামারী জেলা আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। যার মামলা নং ১১৭/২২। আমার কাছে তদন্তভার দ