সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন
আবীর আকাশ- লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ দুই নেতা হত্যাসহ আপন ছেলের হাতে মা খুন হওয়ায় জনমনে চরম আতঙ্ক ও ভয় লক্ষ্য করা গেছে। শান্তিপ্রিয় লক্ষ্মীপুরে দীর্ঘদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকা দুর্বৃত্তরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। লুকিয়ে রাখা অস্ত্রের নির্মম ব্যবহারে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম করছে কিছু বিপথগামী যুবক। তারা এখন সাধারণ মানুষের চরম আতঙ্কের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লক্ষীপুর জেলা সদরের বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকায় ঘটে চাঞ্চল্যকর জোড়া হত্যা। ২৫শে এপ্রিল মঙ্গলবার জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে। গোলাগুলির শব্দ শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা যুবলীগ নেতা নোমানকে মৃত ঘোষণা করে, আহত রাকিবকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নোয়াখালী প্রেরণ করলে সেখানে মারা যায়।
নোমানের বড় ভাই বশিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান এ জোড়া খুনের ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় নেতা আবুল কাশেম জিহাদীকে দায়ী করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। পরে তিনি আবুল কাশেম জিহাদিকে প্রধান আসামী করে ২০ জনের নামসহ অজ্ঞাত মিলিয়ে মোট ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। র্যাব ও পুলিশের তৎপরতায় পৃথক অভিযানে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
অপরদিকে জোড়া খুনের একদিন পরেই সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টারে আপন ছেলে বিধবা মা মমতাজ বেগমকে খুন করে লাশ টুকরো টুকরো করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাকে হত্যার দায়ে ছোট ছেলেকেও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। ছেলে মাকে হত্যার লোমহর্ষক স্বীকারোক্তিও দেয় পুলিশের কাছে।
নিহত মমতাজ বেগমের স্বামী সড়ক ও জনপদ বিভাগে চাকরি করা অবস্থায় মারা গেলে বিশেষ বিবেচনায় মমতাজ বেগমের ছেলে শরিফুল ইসলাম বাপ্পীকে মাস্টাররুলে চাকরি দেয়া হলে তারা সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করে আসছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি চন্দ্রগঞ্জ থানার কুশাখালী ইউনিয়নে। ঈদের ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি থেকে মমতাজ বেগম কোয়ার্টারে ফিরে এলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মমতাজ বেগমের ছোট ছেলে তার মাকে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। বড় ছেলে বাপ্পি কোয়াটারে এসে গোস্তের টুকরো দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। মা হত্যার আগে খুনি ছেলে কাগজে শয়তানের অবয়ব আঁকে। একই সময়ে ঘটা পরপর দুই ঘটনায় মোট তিনজন খুন হওয়ায় লক্ষ্মীপুরে সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় ও আতঙ্কে সৃষ্টি হয়েছে। জেলা ও জেলার বাহিরেও এসব নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে।
জেলা সদরের পূর্বাঞ্চল (বর্তমান চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন) ও পূর্ব উত্তর অঞ্চলে একসময়ে আধিপত্যতাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শক্তিধর সন্ত্রাস বাহিনী গড়ে ওঠে। প্রতিটি বাহিনী ছিল আত্মঘাতী ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় কিছুটা নির্মূল হলেও দীর্ঘ এক যুগ পর আবার সন্ত্রাসী বাহিনীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠায় জনগণের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে। বশিকপুর, দত্তপাড়া, জয়পুর, চন্দ্রগঞ্জ, হাজিরপাড়া ও কুশাখালী ইউনিয়নে সন্ত্রাসীরা ফের দলীয়করণ হয়ে ফিরে আসছে।
পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান বলেন- অপরাধী, খুনি ও সন্ত্রাসীদের বিষয়ে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’। অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর রয়েছে।