শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ অপরাহ্ন
রবিন চৌধুরী রাসেল- রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
রংপুরের তাজহাট থানার ২৮নং ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়ার অপহৃতা দলিত স্কুল শিক্ষার্থী হিমাঙ্গীনি রানী তিথী(১৩) কে অনতিবিলম্বে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতার এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার ১৩ই এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে বিভাগীয় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) রংপুর জেলা শাখা এ প্রোগ্রামের আয়োজন করে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বিডিইআরএম এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক শিপন রবিদাস প্রাণকৃষ্ণ জানান, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, রংপুর মহানগরের তাজহাট থানার ২৮নং ওয়ার্ডের মােল্লাপাড়া এলাকার দলিত নাবালিকা স্কুল শিক্ষার্থী হিমাঙ্গীনি রানী তিথী(১৩) অপহরণের শিকার হয়েছে। আজ ঘটনার ৮৪তম দিনেও মেয়েটিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক উদ্ধার করতে না পারায় আমরা চরমভাবে ব্যথিত।
ভূক্তভােগী স্কুল শিক্ষার্থী, নাবালিকা হিমাঙ্গীনি রানী তিথী (১৩) এর বাবা শ্রী সমর চন্দ্র মহন্ত (৪০) এর ভাষ্যমতে, “আমার মেয়ে কারমাইকেল কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। তিথীকে পূর্ব আশরতপুর (ঢাকাইয়া পাড়া) নিবাসী জাহাঙ্গীর আলমের বিবাহীত পুত্র মােঃ নুরুজ্জামান ওরফে সুমন মিয়া(২৭) প্রায়ই স্কুলে যাওয়া-আসার পথে নানাভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করে আসছিলাে। আমার মেয়ে আমাকে জানালে আমি সুমনের পরিবারকে অবগত করার পাশাপাশি তাদের সাবধান করিয়ে দেই।
ঘটনার দিন গত ১৯/০১/২০২২ইং তারিখে রাত আনুমানিক ৮ঃ০০ ঘটিকায় আমার মেয়ে সাবুদানা কেনার জন্য বাড়ী থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে তাজহাট মােড়ে দোকানের দিকে যায়। দীর্ঘক্ষণ ফিরে না আসায় ঐদিন রাতে তাজহাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৯০০) করি এবং খোঁজাখুঁজি অব্যহত রাখি। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে সাক্ষী নিতাই চন্দ্র মহন্ত (২৪), পিতা- শ্রী শিশির চন্দ্র মহন্ত, সাং- তাজহাট মােল্লাপাড়া, থানা-তাজহাট, রংপুর মহানগর, রংপুর জানায় যে, সে ঐদিন রাত আনুমানিক ৮.১৫ ঘটিকার সময় তাজহাট মােল্লাপাড়া ইস্কন মন্দির সংলগ্ন রাস্তা হতে আজহাট অভিমুখে উল্লেখিত আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনকে অটোযােগে যেতে দেখেছে। সাক্ষীর তথ্য অনুযায়ী আমি আমার ভাই শংকর চন্দ্র মহন্ত(৩০) সহ প্রতিবেশী মােঃ দীপ্ত(২২), পিতা- মােঃ রােস্তম আলী, মােঃ সােহেল (৩৮), পিতা- মৃত জমির উদ্দিন সরকার, উভয় সাং-তাজহাট মােল্লাপাড়া, থানা- তাজহাট, রংপুর মহানগর, রংপুর সহ আসামী নুরুজ্জামানের বাড়িতে যাই। তার পিতা ও বাড়ির লােকজনের নিকট জানতে পারি আসামী নুরুজ্জামান বাড়িতে আসে নাই। এরপর পারিবারিকভাবে যােগাযােগ করা হলে আসামী সুমন মিয়ার বােন গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার মনিপুর গ্রামে অবস্থানকারী নুরুন্নাহার বেগম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
এরপর মেয়েকে উদ্ধারের জন্য ২১/০১/২০২২ তাজহাট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০ (সংশােধন অধ্যাদেশ-২০২০) এর ৭/৩০ ধারায় উল্লেখিত সুমন মিয়া সহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করি। কিন্তু ডিআইজি স্যার, পুলিশ কমিশনার, এসপি অফিস, র্যাব-১৩ সহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দারস্থ হলেও আজ পর্যন্ত মেয়েকে উদ্ধার করতে পারিনি। ইতিমধ্যে পুলিশ বাহিনীর সাথে ২ বার ঢাকায় ও ১ বার কুড়িগ্রামে তল্লাশি করতে যাই। কিন্তু প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করলেও কোন সুরাহা মিলেনি।
বর্তমানে মামলাটি সিআইডি‘র অধিনে রয়েছে। আমরা মনে করি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর স্বদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে অপহৃতা তিথিকে উদ্ধার করা খুব কঠিন কিছু নয়। সুমন মিয়ার মতাে অপহরনকারীদের যদি গ্রেফতার করা সম্ভব না হয় তবে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত
হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
স্কুল ছাত্রী তিথীর মা প্রতিমা রানী মহন্ত জানান- আমার মেয়ে ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ৮৪ দিন থেকে নিখোঁজ। পুলিশরা কিছুই করতে পারছে না। আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি আমার নাবালক মেয়েকে ফিরিয়ে দিন
তিথীর বাবা শ্রী সমর চন্দ্র মহন্ত বলেন- আমি ঔষধ কোম্পানীতে সামান্য বেতনের চাকুরী করি। প্রায় তিন মাস থেকে আমার মেয়ের কোন ধরণের খোঁজখবর পাচ্ছিনা। পুলিশের কথামতো তিন জায়গায় ঢাকায় দুইবার কুড়িগ্রামে একবার তল্লাশি চালায়। কিন্তু সেখানে তল্লাশি করে সুমন আর তিথীর খোঁজ- খবর মিলে না। এদিকে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। প্রশাসন মেয়ের কোনো সুরাহা করতে পারছে না।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিআরএফ কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা এডভোকেট মনিলাল ঘোষ, বিডিইআরএম রংপুর জেলা শাখার সভাপতি গৌতম রবিদাশ, বিডিইআরএম কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্র যুব বিষয়ক সম্পাদক শাওন ভুইমালীসহ পৃন্ট প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।