রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন
ফলো আপ-১
হারুন-অর-রশিদ- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স নীতি বিশ্বজুড়ে আলোচিত হলেও কোনভাবেই সেই নীতি মানছেন না, রংপুরের কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন।
আধুনিক শিক্ষায় বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহুর্তে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গাপীড়িত রংপুর নগরীতে আধুনিক শিক্ষার আলো ছড়াবার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৯৮ইং সালে প্রতিষ্ঠা হয় কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের। অনেক শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক, দানবীর ও রংপুরের আপামর জনতার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সুফল হিসেবে বেশ সুনামের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠা পরবর্তী পথচলায় বেশ সাফল্য ও সুনামের সার্টিফিকেট আসে অত্র প্রতিষ্ঠানের অর্জনের ঝুলিতে। প্রথম অধ্যক্ষ হায়দার আলী মিঞা এবং সকল শিক্ষকদের নিয়ে দিনরাত পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সম্মান ও সুনামের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখেই, পরবর্তী অধ্যক্ষ আলহাজ্ব প্রফেসর মোহাম্মদ ইসহাক তার কর্মকালে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যান কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজটি।
দ্বিতীয় অধ্যক্ষ অবসরজনিত কারণে বিদায় নেবার পরে গত ২০১২ইং সালে তারাগঞ্জ ও/এ ডিগ্রি কলেজ থেকে তার স্বামী তৎকালীন সহকারী সচিব আবুল কালাম আজাদ এর বিশেষ তদবিরের মাধ্যমে যোগদান করেন কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন। তার যোগদানের কিছুদিন পর্যন্ত উপরে সব ঠিকঠাক থাকলেও তলে-তলে বিশেষ সিন্ডিকেট সৃষ্টিতে ব্যস্ত হন অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন। পরে ২০১৬ সালে শিক্ষা অধিদপ্তরের অডিট আসলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল! শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে তার অবৈধ নিয়োগের ফিরিস্তি। শিক্ষা অধিদপ্তরের, ৫ দিন ব্যাপী বিশদ তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তার উত্তোলিত বেতন-ভাতাদি সরকারি খাতে ফেরতযোগ্য মর্মে উল্লেখ করেন শিক্ষা অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদনে
দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই প্রতিবেদনের কোন প্রতিকার প্রতিকার হয়নি। কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ সূত্রে জানা যায় মঞ্জুয়ারা পারভীন এর স্বামী তৎকালীন সময়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব হওয়ার সুবাদে, তিনি শিক্ষা অধিদপ্তরের সেই তদন্ত প্রতিবেদনে গুড়েবালি ছুঁড়ে দেন বলে জানা যায়। শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক রাষ্ট্রীয় তদন্তে সুস্পষ্ট দুর্নীতিবাজ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ফান্ডের অর্থ আত্নসাৎ করার অপরাধে মঞ্জুয়ারা পারভীনের নিয়োগ অবৈধ ও তার গ্রহণকৃত বেতন-ভাতাদি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরৎ দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন। তার স্বামী সাবেক সচিব আবুল কালাম আজাদের নগ্ন হস্তক্ষেপে সরকারি সেই তদন্ত প্রতিবেদন বেশীদুর এগোতে পারেনি।
গত ১৬ই মার্চ ২০২৩ইং তারিখে রংপুরের একাধিক স্থানীয় দৈনিকে, “প্রতিবাদ নামক বিজ্ঞাপন” দিয়ে নিজের অপরাধ আড়াল করার অপচেষ্টা করেন মঞ্জুয়ারা পারভীন। কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ রংপুর’র একটি সুত্র দাবী করে বলেন, অবৈধ ও অযোগ্য অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন, তার ‘ভাতারের ক্ষেমতা’ ও অবৈধ টাকা দিয়ে নিজের অপরাধ আড়াল করতে বেশ মরিয়া হয়ে উঠেছে। অপরদিকে রংপুরের চিহ্নিত কিছু দালাল প্রকৃতির সাংবাদিক তার কাছে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তার চাটুকারিতায় লিপ্ত হয়েছে। মঞ্জুয়ারা পারভীন টাকার বিনিময়ে দেয়া সেই বিজ্ঞাপনে নিজেকে ফেরেস্তা বলে দাবী না করলেও ২০১৭ইং সালে শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন করেছেন সেটিও বেশ স্পষ্ট। শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনসহ অত্র প্রতিষ্ঠানের মোট ২৪ জন শিক্ষক- শিক্ষিকার বিধিবহির্ভূত নিয়োগসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তাদের গ্রহণকৃত বেতন-ভাতা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেবার নির্দেশ প্রদান করেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত অত্র প্রতিষ্ঠান প্রধান মঞ্জুয়ারা পারভীন এর ব্যাপারে স্পষ্ট বাংলায় লেখা আছে “মঞ্জুয়ারা পারভীন (ইনঃ ৪০২১৬২) ০৩/০৬/২০১২ তারিখে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। মঞ্জুয়ারা পারভীন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ১৬/০২/১২ তারিখে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। আবেদনে তিনি ০৫/০২/১২ দৈনিক যুগান্তরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু ০৫/০২/১২ তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় অত্র প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগের কোন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি, বিধিবহির্ভূত তথ্য প্রদানের ফলে তাঁর আবেদনপত্রটি অবৈধ ও বাতিলযোগ্য ।
আবেদনকালে তিনি তারাগঞ্জ ও/এ ডিগ্রি কলেজ, রংপুরে প্রভাষক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি অধ্যক্ষ পদের
আবেদনটি উক্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে করেননি এবং অভিজ্ঞতা দাবী করলেও তিনি আবেদনের সাথে কোন অভিজ্ঞতার সনদ সংযুক্ত করেননি। এ ক্ষেত্রেও তার আবেদনপত্রটি অবৈধ ও বাতিলযোগ্য। মঞ্জুয়ারা পারভীন ১৬/০২/১২ তারিখে আবেদন করলেও আবেদনের গায়ে ০৪/০৩/১২ তারিখে গৃহীত উল্লেখ আছে। এতে তিনি শর্তানুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ হতে ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দপ্তরে আবেদন পৌঁছিয়েছিলেন কিনা তা সন্দেহ যুক্ত। মঞ্জুয়ারা পারভীনকে বিগত ২৮/০৪/১২ তারিখে শুধু ১০ই নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হয়। তার কোন লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ না করার কোন কারণও জানা যায়নি। নম্বর ফর্দ অনুযায়ী ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে মঞ্জুয়ারা পারভীন ১০ই নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪.৩৭ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি ঐশ্বরিক শক্তি বলে মঞ্জুয়ারা পারভীন ব্যতীত অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি এবং অন্যান্য প্রার্থীদের হাজিরা তালিকা অপ্রদর্শিত।
নিয়োগ বোর্ড নম্বর ফর্দে তাঁকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন। নিয়োগ বোর্ডের পৃথক রেজুলেশন পরিলক্ষিত হয়নি। জিবি‘র ২৪/০৫/১২ তারিখের সভায় নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ অনুমোদন করা হয়। জিবি’র সভার রেজুলেশনে জিবি’র সভাপতির একক স্বাক্ষর রয়েছে। এতে অন্য কোন সদস্যের স্বাক্ষর পরিলক্ষিত হয়নি। মঞ্জুয়ারা বিগত ০৩/০৬/১২ তারিখ পূর্বাহ্নে অত্র কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। তারাগঞ্জ ও/এ ডিগ্রি কলেজ এর ছাড়পত্রটিও ০৩/০৬/১২ তারিখে ইস্যুকৃত!এতে তিনি উক্ত ছাড়পত্র গ্রহণ করার পর যোগদান করেছিলেন না এর পূর্বে যোগদান করেছেন তা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়। উল্লিখিত অনিয়মের কারণে অধ্যক্ষ পদে মঞ্জুয়ারা পারভীন এর নিয়োগ বিধি সম্মত হিসেবে গণ্য নয় এবং এমপিওভুক্তির তারিখ হতে ৩১/০৩/১৬ তারিখ পর্যন্ত গৃহীত বেতন-ভাতা বাবদ ১৩,৩৩,৮০০/- টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরতযোগ্য। এর পরে গৃহীত বেতন-ভাতাও ফেরতযোগ্য হবে।”
প্রফেসর আব্দুর রউফ অভিযোগ করে বলেন- গত ০৩/০২/২০১২ তারিখে রংপুরের স্থানীয় দৈনিক দাবানল পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিসূত্রে আমি জানতে পারি কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুরের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ হবে। যথারীতি নিয়মানুসারে আমি আবেদন করি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। ওই সময় অধ্যক্ষ পদে মোট ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে মঞ্জুয়ারা পারভীন ব্যতীত আমাদের কারো ফলাফল ঘোষণা না করেই, মঞ্জুয়ারাকে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করেন।
প্রফেসর আব্দুর রউফ আরো বলেন- পরীক্ষার পর পরেই মঞ্জুয়ারার স্বামী আবুল কালাম আজাদ আমার বাসায় এসে বলেন, ‘অল্পের জন্য আপনি তৃতীয় হয়েছেন! শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা জেনেছি মঞ্জুয়ারা পারভীন ১০ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪.37 নম্বর পেয়েছেন। তবে আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি উক্ত নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে আমি ১০ এর মধ্যে সর্বনিম্ন ৮ পেয়েছি। বিগত সময় রংপুর জেলা প্রশাসক বরাবর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনের অবৈধ আবেদন, অবৈধ নিয়োগ ও অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে একটি আবেদন করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় মঞ্জুয়ারা পারভীনের যোগসাজসে সেই আবেদনটিও জেলা প্রশাসক অফিস থেকে হাওয়া হয়ে যায়।