রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৬ অপরাহ্ন
মোঃ হারুন-অর-রশিদ- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রংপুর মহানগরীর ১০নং ওয়ার্ডে ফাঁকা বাড়িতে একা পেয়ে প্রতিবন্ধী এক কিশোরী-কে ধর্ষণ করেন ঢাকা ক্যান্টমেন্ট-এ কর্মরত কার্পেন্টার আবুল কালাম আযাদ(৫১) ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ধর্ষক, অপরদিকে হতাশায় ভুগছেন ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার।
রংপুর নগরীর ১৩নং ওয়ার্ডস্থ দামোদরপুর এলাকার ফরহাদ হোসেন ও রোজিনা দম্পতির প্রতিবন্ধী কন্যা রিফা মনি (১৯) বাবা মায়ের সাথে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হন ওই প্রতিবন্ধী কিশোরী। স্থানীয় সুত্রে জানাযায় দারিদ্রতার ঘোচাতে তার বাবা মা কাজ করেন ঢাকা সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মা কাজ করেন আয়া পদে আর বাবা ফরহাদ ওয়ার্ড বয়। রংপুর মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানায় দায়েরকৃত এজাহার সূত্রে জানাজায়, গত ৩০ এপ্রিল ২২ইং পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রংপুর নগরীর ১০নং ওয়ার্ডের বক্তিয়ারপুর আদর্শগ্রামে বাবা মা ও একমাত্র ভাইয়ের সাথে নানা ইবরাহীম খলিলের বাড়িতে বেড়াতে আসেন রিফা মনি। ঈদ উদযাপনের পরে শারীরিক প্রতিবন্ধী রিফা মনিকে তার নানার বাড়িতে রেখে কর্মস্থলে চলে যান বাবা মা ও ভাই।
প্রায় সারে পাঁচমাসের মাথায় পূণরায় ছুটি পেয়ে গত ১৪ই সেপ্টেম্বর ২২ইং রোজিনা আক্তার রংপুর মেট্রোপলিটন হাজীরহাট থানাধীন তার বাবার বাড়িতে এসে প্রতিবন্ধী মেয়ে রিফা মনিকে ঢাকা সাভারের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়।সাভারে যাবার পর হঠাৎ করেই চলতি বছরের ৩০ শে জানুয়ারী রিফা মনির বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হওয়ায় তার মা রোজিনা আক্তার রিফা মনিকে গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাওয়ান। ঔষধ সেবনের পরেও ব্যাথা ভালো নাহলে, পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করেন এবং জানতে পারেন তার প্রতিবন্ধী মেয়ে রিফা মনি অন্তঃসত্বা!
রোজিনা আক্তার তার মেয়ে রিফামনি কে এই জঘণ্য কাজের কথা জিজ্ঞেস করলে, রিফামনি তার মাকে জানায় তাকে তার নানার বাড়িতে রেখে বাবা মা ভাই মিলে ঢাকায় আসার পরে। গত ১২ই আগষ্ট ২২ইং দুপুরের খাবারের পরে বিকেল আনুমানিক ০৩ ঘটিকার সময় পার্শ্ববর্তী নানা জনৈক শহিদুল ইসলামের বাড়িতে টিভি দেখতে যান। ওই সময় বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগ নিয়ে পার্শ্ববর্তী মৃত আকবর আলীর ছেলে আবুল কালাম আযাদ(৫১) তিন সন্তানের জনক।
টিভির ঘরে প্রবেস করে, খাটের উপর ফেলে জোর পূর্বক ধর্ষন করে এবং তাকে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে এই কথা কাউকে জানালে তার পরিবারের সকলের অনেক বড় ক্ষতি হবে। এমনকি তাকে মেরে ফেলার হুমকিও প্রদান করেন ধর্ষক আবুল কালাম আজাদ। এই ঘটনার কথা তার মেয়ের কাছ থেকে শোনার পর দ্রুত তার স্বামী ফরহাদ হোসেনকে অবগত করে এবং রিফাকে নিয়ে রংপুরে তার বাবা ইব্রাহীম খলিলের বাসায় চলে আসেন।
এজাহার নামীয় স্বাক্ষী, মাসুদ আহমেদ(৩৫) পিতা মোঃ ইব্রাহীম খলিল, সেফালী বেগম(৫০) স্বামী শহিদুল ইসলাম, আনিছা বেগম(৪৫) স্বামী আজিজুল ইসলাম উভয় সাং বক্তিয়ারপুর পুর আদর্শগ্রাম থানা হাজির হাট মেট্রোঃ রংপুর মহানগর গণকে নিয়ে পহেলা ফেব্রুয়ারি ২৩ইং তারিখে মডার্ন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ধাপ রংপুরে রিফা মনির আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট অনুযায়ী ২৫ সপ্তাহ ২ দিনের অন্তঃসত্বা রিফা মনি।
তাৎক্ষনিক উপরোক্ত বিষয় পরিবারের সকলের সাথে আলোচনা করে বিবাদীর বিরুদ্ধে ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২৩ইং রংপুর মেট্রোপলিটন হাজির হাট থানায় উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ করা করেন।
নারী শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনী অদ্ধাদেশ ৯ এর (১) মামলা রুজু করা হয়। মামলা নং-৬ তারিখ ১৩/০২/২০২৩ইং সময় ১০ঘটিকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিবাদী আবুল কালাম আজাদ ও তার তিন সন্তান সবাই সরকারি চাকুরী করেন। ওরা অনেক টাকার মালিক তাই সমাজে তাদের প্রভাবও অনেক বেশী। তারা এই ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিবারকে টাকার প্রস্তাবও দেয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবী আবুল কালাম আজাদ-কে প্রতিবন্ধী রিফা মনির সন্তানের স্বীকৃতি দিতে হবে, রিফা মনিকে দিতে হবে স্ত্রীর মর্যাদা। অন্যথায় ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করবে এলাকাবাসী।
ধর্ষিতার বাবা ফরিদ হোসেন জানান- মামলা করার আজ ১৮ দিন এখন পর্যন্ত আসামি গ্রেফতার করেনি পুলিশ। পুলিশ সুত্রে আমরা জেনেছি ধর্ষক আবুল কালাম আজাদ অসুস্থ সিএম এইচ চিকিৎসাধীন আছে সুস্থ হলে তাকে গ্রেফতার করা হবে! অপরদিকে ধর্ষকের দুই ছেলে সেনা সদস্য মাসুদ রানা এবং মামুনুর রশীদ আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের বিভিন্নভাবে হুমকিধামকি দিচ্ছেন। ধর্ষকের বড় ছেলে সেনা সদস্য মাসুদ রানা বিভিন্ন মহলে বলে বেড়াচ্ছেন টাকা হলে এসব কেস মামলা কোন ব্যাপার নয়। টাকা দিয়েই আমরা মামলা খেয়ে ফেলবো। মামলা খাওয়া শেষে ফকিন্নিদের বুঝিয়ে দিবো মামলা করার মজা কতো।
এ বিষয়ে ধর্ষক আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী সন্তান ও তার ছোট ভাইয়ের সাথে কথা হলে তারা বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যে বলে অভিযোগ করেন। তারা আরও বলেন ভুক্তভোগীরা মিথ্যে দুর্নাম দিয়ে মোটা অংকের টাকা নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে উক্ত ঘটনার পুরো বিষয় নিয়ে নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে তারা বলেন, আমাদের কিছু বলার বা করার নাই। যেহেতু মালায় হয়েছে আদালত যা সিদ্ধান্ত দিবে আমরা সেটাই মেনে নিবো।
উল্লেখিত বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর সিটি কর্পোরেশন‘র ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান তুষার বলেন- এই ধর্ষণের ঘটনা টি যদি সত্যি নাহতো তাহলে ধর্ষক পরিবার থানায় এবং পান্ডারদিঘী বাসিন্দা ও মেট্রোপলিটন পরশুরাম থানা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি মোঃ খতিবর রহমান কে মোটা অংকের টাকার প্রস্তাব দিতোনা। তিনি এমন জঘন্য অপরাধের শাস্তির দাবী জানিয়ে বলেন থানায় কথা বলে আমি মামলাটি সচ্ছল করার ব্যাবস্থা নিচ্ছি।
এদিকে ধর্ষক আবুল কালাম আযাদ ও মেট্রোপলিটন পরশুরাম থানা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি মোঃ খতিবর রহমানের মুঠো ফোনের কথপোকথন ফাঁস হয়ে যায়। তাতে স্পষ্ট ভাষায় ধর্ষক আবুল কালাম আযাদ খতিবর রহমান কে বলে আমি ঐ প্রতিবন্ধীকে তার থাকার বাসস্থান সহ মোটা অংকের একটা টাকা প্রদান করবো। তবে ঐ প্রতিবন্ধীর সাথে কোনো রকম বিবাহের সম্পর্কে আবদ্ধ হতে পারবেনা। তখন ভুক্তভোগীর পক্ষে খতিবর রহমান বলে আপনি থাকার যায়গা ও টাকা দিলেই তো সমস্যার সমাধান হবেনা। কারন প্রতিবন্ধী রিফা মনি এখন ৭ মাসের অন্তঃসত্বা তার অনাগত সন্তানের বাবার দায়িত্ব কে নিবে? ঐ বাচ্চাটি সমাজে কি পরিচয় নিয়ে বাঁচবে? তখন ধর্ষক আবুল কালাম বাচ্চা টা নষ্ট করার জন্য জোরালো আবেদন করেন।
কিন্তু খতিবর রহমান তার এই অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বলেন- আপনাকে এতো কিছু দিতে হবেনা, বরং আপনি তাকে বিয়ে করে ঢাকায় তার বাবা মায়ের কাছে রাখেন ওখানেই তার বাচ্চা প্রসব হবে। আপনি সেখানেই তার ভরণপোষণ দিলেই চলবে। তাহলে ঐ মেয়েটিও সমাজে বলতে পারবে তার বাচ্চার বাবা আপনি। এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই, ওনারা মামলা করবে আর মামলা করলে তো বুঝতেই পারছেন কি হবে। তখন ধর্ষক আবুল কালাম বলেন আপনি যেভাবেই হোক বিষয়টা টাকার মূল্যে ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু খতিবর রহমান তাকে বারংবার এটাই বোঝায় যে প্রতিবন্ধী রিফামনি-কে বিয়ে করা ছাড়া আপনার আর কোনো উপায় নাই। তাই আপনি ভেবে চিন্তে আমাকে মতামত জানাবেন বলে ফোন রেখে দেয়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, নারী ও শিশু আদালতের বিশেষ ট্রাইবুনালে আসামীর এমন ঘৃণিত জঘন্য ও অমানবিক অপরাধের রায় মৃত্যুদন্ড কার্যকরের বিধান রয়েছে।
উল্লেখিত মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটন উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ জানান- সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে চলতি সপ্তাহে আসামীকে গ্রেফতার করা হবে। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে আপনি হাজির হাট থানায় কথা বলুন।
অপরদিকে হাজির হাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রাজিফুজ্জামান বসুনিয়া বলেন- ধর্ষক-কে গ্রেফতারের জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা মামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট জানিয়েছি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।