শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
মাহাবুব আলম- ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে দীর্ঘদিন ধরে কুলিক নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তলনের মহোৎসব চলছে। এক দুবার জরিমানা করা হলেও বালু ব্যবসায়ী বলছেন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করছি। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কুলিক নদীর প্রায় ৮ টি ঘাট থেকে দিনে ও রাতের আঁধারে প্রকাশ্যে বালু তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে হোসেনগাঁও ইউনিয়নের রাউতনগর মধ্যপাড়া গ্রামের নদীর ঘাট থেকে উসমান আলী, রাউতনগর গোরস্থান সংলগ্ন নদীর ঘাটে থেকে সইদুল ইসলাম, লেহেম্বা ইউনিয়নের রসুনপুর কুলিক নদী থেকে সুবহান আলী,উমরাডাঙ্গী নদীর ব্রিজ থেকে তরিকুল, মানিক, আবুল, মুরসালিন, নাঈম, সাইদসহ অনেকে ৩ থেকে ৫ টি মহেন্দ্র ট্রাকটর দিয়ে নির্ভয়ে এবং প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করে চলছেন।
গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওইসব এলাকার কিছু মানুষ বলেন তাঁরা গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে এ বালু ব্যবসা করে আজ সম্পদশালী ও প্রভাবশালী।
অপরদিকে বাচোর ইউনিয়নে মহেশপুর ফোর স্টার ইট ভাটার পূর্ব পাশে কুলিক নদী থেকে, আপেল এবং রুবেল নামে দুই ব্যাক্তি একইভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। সেইসাথে বন্দর পাইলট কুলিক নদীর ব্রিজের নিচ থেকে কাউন্সিলর নূর আমল নামে এক ব্যাক্তি ক্ষমতার দাপটে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করেছেন।
এ সময় নদীতে মাছ ধরতে আসা এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন,এরা দীর্ঘদিন ধরে এই নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেইসাথে নিজ বালুর চাহিদা মিটিয়ে এটিকে বানিজ্যিক ভাবে প্রতিগাড়ি বালু ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
দেখা গেছে বালু তোলার কারণে মহলবাড়ি,এবং সুন্দরপুর এলাকায় নদীর পাশে থাকা হিন্দু স¤প্রদায়ের শ্মশান ঘাটগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ করেন হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন। গবেষকরা বলছেন, বালু উত্তোলনে পানিদূষণসহ নদীগর্ভের গঠনপ্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে এবং নদী ভাঙছে।
পুরো হাইড্রোলজিক্যাল কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বালু উত্তোলনের কাছাকাছি মাটির ক্ষয় যেমন ঘটছে, তেমনি মাটির গুণাগুণও নষ্ট হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া নলকূপে পানি পাওয়া কষ্ট হতে পারে।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে,এসব নেতিবাচক প্রভাবের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে।
বালু উত্তোলনে সৃষ্ট বায়ুদূষণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মৎস্য প্রজনন-প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার পাশাপাশি চাষাবাদের জমিও নষ্ট হচ্ছে।
এসব বালু ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে বালু তোলার বিষয়ে কথা বললে,তাঁরা বলেন প্রশাসনকে মেনেজ করেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এবং গোটা উপজেলা জুড়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে আমরা তুললে দোষের কি?
রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে আমরা জরিমানা করেছি। তাঁর পরেও কেউ বালু উত্তোলন করে থাকলে সরকারি বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।