সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন
দুলাল হোসেন- পটুয়াখালি জেলা প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যানেস্থেনিয়া ও গাইনি ডাক্তারের অভাবে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন । ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রসূতি মায়েরা। এমনই অভিযোগ স্বাস্থ্য কমপেক্সেে চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভুগীদের। ২০০৪ইং সালে সিজারিয়ান অপারেশন চালু হওয়ার পর মাঝখানে গাইনি ডাক্তার চলে যাওয়ার পর সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ হয়ে যায়।
বাউফল উপজেলায় প্রায় ৫লাখ মানুষের বসবাস। ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার লোকজোনের একমাত্র ভরসাই বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। অথচ এ হাসপাতালে নেই সব সুযোগ-সুবিধা। প্রসূতি মায়েরা সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। হাসপাতলে নেই কোন গাইনি ডাক্তার। বাচ্চা প্রসবের ক্ষেত্রে নরমাল ছাড়া সিজারের প্রয়োজন হলেই নিয়ে যেতে হয় ব্যাঙের ছাতামত গড়ে ওঠা উপজেলার বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে।
বেশী টাকায় সিজারিয়ান অপারেশন করতে হয়। ফলে দুর্ভোগের স্বীকার হতে হয় সেবা নিতে আসা নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের। প্রাইভেট ক্লিনিকের খরচ জোগাতে অনেক সময় মানুষের দ্বারস্থ হতে হয় তাদের।
খরচের কারনে মৃত্যুর সম্মুখীনও হতে হয় অনেক প্রসূতি মা ও সন্তানকে। সন্তান প্রসবের সময় হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে নেওয়া হলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিভিন্ন রকমের অজুহাত দেখিয়ে বলা হয় সিজার ছাড়া সাধারণভাবে বাচ্চা প্রসব করানো সম্ভব নয়। এবং তাদের পছন্দ অনুযায়ী প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিয়ে বলা হয় তাড়াতাড়ি সিজার করার জন্য। কোন উপায় না পেয়ে সিজার করতেই হয়। সাধারনত সিজার করতে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা চলে যায়।
উপজেলা থেকে বিচ্ছন্ন দ্বীপ চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের গর্ভবতীদের বেশী সমাস্যায় পড়তে হয়। ওই ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদরে গর্ভবতীদের সেবা নিতে তেতুঁলিয়া নদী পাড়ি দিয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লেগে যায়।
ভুক্তভোগী হাকিনুর বেগম(৩৫) এর স্বামী দিনমুজুর বাবুল সিকদার বলেন- বাউফল সরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় তার স্ত্রীকে বাউফল হেলথ কেয়ার ডায়াগনিকষ্টিক সেন্টারে যেয়ে বেশী টাকা দিয়ে সিজার করান। তাতে তার ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি গরীব মানুষ যখন যে কাজ পাই সে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি।
মানুষের কাছ থেকে ধার করে সিজারের টাকা জোগাড় করেছে। অপারেশন থিয়েটার দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স ছকিনা বেগম বলেন- ২০০৪ইং সালে সিজারিয়ান অপারেশন চালু হওয়ার পর গাইনি ডাক্তার না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গাইনি ডাক্তার নুপর বেগম ২০১৯ইং সালে যোগদান করার পর সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। ২০২০ইং সালে তাকে অন্যত্র বদলি করার পর গাইনি ডাক্তার না থাকায় আর কোন সিজারিয়ান অপারেশন হয়নি।
নার্স মোসাঃ সারমিন আক্তার জানান- আমি ৪ বছর হয় এই হাসপাতালে এসেছি গাইনি ডাক্তার নুপর বেগম থাকাকালিন ৩ থেকে ৪টি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। এখন হাসপাতালে কোন সিজারিয়ান হয় না ফলে কোটি টাকার যস্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র অবহেলায় ও অযন্তে নষ্ট হতে যাচ্ছে ।
এ বিষয় বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন- অপারেশন থিয়েটার থাকা সত্ত্বেও গাইনি ডাক্তারের অভাবে আমরা সিজার করতে পারি না। এ থেকে উত্তরণের জন্য একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ও একজন অজ্ঞানকারী ডাক্তারের প্রয়োজন।