রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:২৩ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রংপুরের পীরগঞ্জ পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবু সালেহ মোঃ তাজিমুল ইসলাম শামীমের বিরুদ্ধে ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পীরগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলররা। টেন্ডার আহবান না করা, সরকার বিভিন্ন বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৌরসভাকে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানেপরিণত করা সহ প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্নসাৎ ও লুটপাট করার অভিযোগ করেছে পীরগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে মেয়র শামীমের বিরুদ্ধে নানাবিধ অনিয়ম দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ এনে ১১ জন একত্রে হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। পরে সেই প্রস্তাব লিখিত ভাবে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার, স্থানীয় সরকার বিভাগ রংপুরের উপ পরিচালকের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
৩রা মার্চ সোমবার রংপুর মহনগরীর জাহাজ কোম্পানির মোড়স্থ একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে, পীরগঞ্জ পৌর মেয়র ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে দ্রুত তদন্ত করে তাকে অপসারনের দাবি জানান কাউন্সিলগণ।
সংবাদ সম্মেলনে অনাস্থা প্রস্তাবকারি ১১ কাউন্সিলরের ৮ জন উপস্থিত ছিলেন- বাকি তিন কাউন্সিলর অসুস্থতার কারনে আসতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন তারা। তবে পৌরসভায় ১২ কাউন্সিলর এর মধ্যে ১১জনের স্বাক্ষর আছে অনাস্থা প্রস্তাব আবেদনে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পীরগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর।
উক্ত লিখিত অভিযোগে জানানো হয় পীরগঞ্জ পৌরসভার গত ২৮শে নভেম্বর ২০২১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র শামীম সহ ১২ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়। ২১/১২/২১ইং তারিখে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কাছে শপথ বাক্য পাঠ করে দায়িত্ব গ্রহন করেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হতে চলেছে পৌর মেয়র শামীম পৌর পরিষদের মাসিক সভা করেন তার ইচ্ছে মতো। তিনি সভার আগে কাউন্সিলরদের কোন নোটিশ দেননা।
সভার ২/৩ ঘন্টা আগে তার পিএস এর মাধ্যমে সভায় উপস্থিত হবার কথা জানানো হয়। সভার দিন ৪/৫ ঘন্টা পর সভায় মেয়র উপস্থিত হয়ে কোন আলোচনা না করে সভার রেজুলেশন না লিখে তাদের পরবর্তীতে সভার সিদ্ধান্তের কপি তাদের দেয়াও হয়না জানানো হয়না। এ ব্যাপারে অনেকবার মেয়রকে বলার পরেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় গত ০১/০১/২৩ইং তারিখে সকল কাউন্সিলর মেয়রের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।
তবে বিগত সভার সিদ্ধান্ত লিখিত ভাবে জানানোর জন্য আবেদন করেও সাড়া মেলেনি মেয়রের পক্ষ থেকে। সভায় মেয়রের বিরুদ্ধে দুনীতি অভিযোগ উত্থাপন করে বলা হয় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে টেন্ডার আইডি ২৭৮৪৪৭ মুলে পীরগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পচাকান্ত মৌজার রাস্তা সংস্কার ও নির্মান কাজ করা হয়। যা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মন্ডল ট্রেডাস এর মাধ্যমে ৪৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮‘শ ৩৮ টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। ওই কাজের ওই পরিমান বিল উক্ত ঠিকাদারকে প্রদান করা হয়। একই কাজ টেন্ডার আইডি ৩০১৯৬১ মুলে পুনরায় টেন্ডার আহবান করানো দেখিয়ে কোন কাজ না করেই ৪২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
এ ছাড়াও ২০২১-২২ অর্থ বছরে আর্থিক সহায়তা খাতে ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করে লোপাট চিকিৎসা খাতে ও বিবিধ খাতে অর্থ সহায়তা দেখিয়ে অর্থ লুট, বিভিন্ন দিবস উদযাপন খাতের বিল উপজেলা পরিশোধ কর্তৃক ব্যায় করা হলেও পৌর তহবিল থেকে ভুয়া বিল দেখিয়ে লুটপাটের অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন কাউন্সিলররা চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে এখন পর্যন্ত পৌরপরিষদের কোন সভা আহবান না করে একক ক্ষমতা বলে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ডঃ শিরিন শারমিন চৌধুরীর সাথে দেখা করে লিখিত অভিযোগ প্রদান করে তার বিচার দাবি করেছেন বলে জানান। অনিয়ম দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার বিষয় জানতে পীরগঞ্জ পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীমের মোবাইল নম্বরে অন্তত ২০/২৫ বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি বলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের রংপুর বিভাগের দায়িত্বরত উপ-পরিচালক জিলুফা ইয়ামিন জানান পীরগঞ্জ পৌরসভার ১১ জন কাউন্সিলরের স্বাক্ষর যুক্ত বিভিন্ন অভিযোগ সম্বলিত পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেয়েছি। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।