সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ অপরাহ্ন
আফজাল হোসেন- দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
আজ সোমবার ৪ঠা ডিসেম্বর দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের (৪ ডিসেম্বর) শুক্রবার মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে হটিয়ে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী উত্তাল আন্দোলনের সময় ফুলবাড়ীতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে যেন কোনও সংঘাত সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি। (২৪ মার্চ) পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলেও (২৬ মার্চ) দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞের খবরে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সকাল থেকে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ফুলবাড়ী শহরে বের হয় এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিল।
মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে রেলস্টেশন থেকে কাঁটাবাড়ী বিহারীপট্টি হয়ে বাজারে ফেরার পথে বিহারীপট্টিতে মিছিলকে লক্ষ্য করে কে বা কারা গুলি বর্ষণ করলে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। শুরু হয় বিহারীদের বাড়িতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও লুটতারাজ। এ প্রিলের ২ তারিখ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ী আক্রমন শুরু করে পুরো ফুলবাড়ীকে নিয়ন্ত্রণ করে নেয়। এরপর থেকে শুরু হয় বাঙালিদের ওপর দখলদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার, হত্যা, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা।
দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফুলবাড়ীকে হানাদারমুক্ত করার জন্য ১৯৭১ সালের (৪ ডিসেম্বর) মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথভাবে বেতদিঘী, কাজিহাল, এলুয়াড়ী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানীনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে চর্তুমুখী আক্রমণ চালায়।
মিত্র বাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় জেনে ও ফুলবাড়ী শহরে তাদের প্রবেশ ঠেকাতে ওই দিন বিকাল সাড়ে ৩টায় ছোট যমুনার ওপর লোহার ব্রিজটির পূর্বাংশ শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ব্রিজ ধ্বংসের কারণে মিত্র বাহিনী ফুলবাড়ী শহরে প্রবেশ করতে দেরি হয়। আর এই সুযোগে অবাঙালিরা বিশেষ ট্রেনে করে ফুলবাড়ী থেকে সৈয়দপুর চলে যায়। ট্রেনটি ধ্বংসের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি মর্টারশেল নিক্ষেপ করলে তা ব্যর্থ হয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের ওই সময় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ২০ নম্বর ব্রিজটি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নানা কারণে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফুলবাড়ী স্বাধীন হওয়ার তিন দিন পর ৭ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান যমুনা নদী পার হয়ে চকচকা রাইস মিলের ওপরে রাস্তায় এসে দাঁড়ালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে যানটি বিধ্বস্ত হয়।
সাঁজোয়া যানে থাকা ভারতীয় সেনা বাহিনীর এক অফিসারসহ তিন জন নিহত হন। নিহত তিন ভারতীয় সেনা সদস্যকে ছোট যমুনা নদীর তীরের সরকারি কলেজ সংলগ্ন স্থানে সমাধিস্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন জুনিয়র কমান্ডিং অফিসার ও সাবেক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মনসুর আলী সরকার জানান, মূলত (৪ ডিসেম্বর) ফুলবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এরপর পরাজয় নিশ্চিত ভেবে হানাদাররা ফুলবাড়ী ত্যাগ করে। তাই ফুলবাড়ী ৪ ডিসেম্বরই মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।