বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৮:০৬ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকা ভুক্ত সংগঠন হেযবুত তাওহীদ কতৃক, ইসলাম বিদ্বেষী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করাসহ নাগদাহ গ্রামের নিরহ মানুষের উপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলার বিচার ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও ডিসি অফিস ঘেরাও করেছেন রংপুরের তৌহিদী মুসলিম উম্মাহ।
বুধবার (৫ মার্চ) ২০২৫ইং সকাল অনুমান ১১টায়, রংপুর মহানগরীর কাচারি বাজারে কয়েক হাজার মানুষ একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও ডিসি অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন।
রংপুর জেলা মহানগর সহ অত্র এলাকার হাজারো মুসলিম জনতা বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক ভরে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মুল ফটকে একত্র হয়। বেলা সারে এগারোটার দিকে হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান এর সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও ডিসি অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, মুফতি আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা হেফাজতে ইসলামি বাংলাদেশ। হাফেজ মাওলানা গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় নেতা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, হাফেজ মাওলানা মাসুদুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন আন্দোলন বাংলাদেশ রংপুর মহানগর। মাওলানা মিজানুর রহমান ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ। নুরুল আজম নওশাদ, খতিব দেউতি জামে মসজিদ, পীরগাছা, রংপুর। মুফতি সালেহ আহমেদ মুহিত, সাধারণ সম্পাদক ইসলামী আন্দোলন রংপুর। আব্দুল মোত্তালিব মোল্লাহ খতিব ধাপ পাঁচতলা জামে মসজিদ, মাওলানা আবু হানিফ খতিব কাদেরিয়া জামে মসজিদ নাগদা পীরগাছা রংপুর, গণ অধিকার পরিষদ নেতা মো. হানিফ খান সজীব, গণকন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি আতিকুর রহমান আতিক, হাফেজ মাওলানা মোসলেম উদ্দিন জিহাদী, খতিব শালবন জামে মসজিদ, মহানগর রংপুর। প্রমুখ।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ও ইসলামিক স্কলারগণ বলেন, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ২নং পারুল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে আব্দুল কুদ্দুস, মুসলিম উদ্দিন, তছলিম উদ্দিন, জিল্লাল আহমেদ (সাধারণ সম্পাদক ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ) ও আমিরুল ইসলাম এর বাড়ি গত ১৫ বছর ছিল পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও ইসলাম বিদ্বেষী ভন্ড হেযবুত তওহীদের চিহ্নিত আস্থানা। এই আস্থানা থেকেই আওয়ামী শাসনামলে উপজেলা জুরে ইসলাম বিদ্বেষী ও জন বিরোধী সকল কর্মকাণ্ডের মদদ জুগিয়েছিল ফ্যাসিস্টরা।
গত ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বহিরাগত নারী পুরুষের অবাধ যাতায়াত, মেলামেশা ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছিল, আঃ কুদ্দুস, আমিরুল গংদের বাড়ি। তাদের সমাজ বিধ্বংসী ও ইসলাম বিদ্বেষী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের হৃদয়ে চরমভাবে আঘাত করে। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে এলাকাবাসী কথা বলতে গেলেই স্থানীয়দের শায়েস্তা করতে মরিয়া হয়ে ওঠতেন হেযবুত তওহীদের এই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর সাথে সংঘর্ষে জরিয়ে পরে এবং এলাকার নিরহ মানুষকে জামায়াত বিএনপির ট্যাগ দিয়ে, তাদেরকে হামলা, মামলা করে চরমভাবে হয়রানির মাধ্যমে থামিয়ে দেয়া হয়।
২০১৪ সালে হেযবুত তওহীদের অন্তরালে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতা নেত্রীদের মিলনমেলায় পরিণত উক্ত হেযবুত তওহীদের এই নেতাদের বাড়ি। গ্রামে অতিমাত্রায় বহিরাগত নারী-পুরুষের ওঠাবসা শুরু হলে, এলাকাবাসী পুনরায় গ্রামের পরিবেশ বিনষ্ট না করার অনুরোধ জানায় তাদের, এতেই ক্ষিপ্ত হয় হেযবুত তওহীদ নেতা আঃ কুদ্দুস, জিল্লাল, আমিরুল গংরা একপর্যায়ে তারা বহিরাগত ভারাটিয়া সন্ত্রাসী এনে গ্রামবাসীর উপর হামলা চালায়। পরে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের এসব ইসলাম বিদ্বেষী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে স্বোচ্ছার হলে, উল্লেখিত আব্দুল কুদ্দুস, জিল্লাল, আমিরুল সহ হেযবুত তওহীদের সন্ত্রাসীগোষ্ঠী, পরবর্তী জীবনে হেযবুত তওহীদের নামে ইসলাম বিদ্বেষী ও সন্ত্রাসী কোন কর্মকাণ্ড নাগদাহসহ পীরগাছা উপজেলায় আর করবেনা শর্তে, এলাকাবাসীর কাছে প্রকাশ্য হাতজোড় করে ক্ষমা চায়। এবং প্রকাশ্য তারা তওবা করে ঈমান আনে।
এতে স্থানীয় মহতজনরা তাদেরকে মাফ করেন এবং সবাইকে তাদের ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানান। এবং এলাকাবাসী তাদের ক্ষমাও করেন। কিন্তু বছর দুয়েক পরে ২০১৬ সালে, পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের প্রচচ্ছন্ন সহায়তায় চরম পন্থায় তারা ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের জরিয়ে পরে। তখন আর তাদের থামাতে পারেনি স্থানীয় মুসলিম উম্মাহ, তাদের ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গেলেই পড়তে হয়েছে নানামুখী ষড়যন্ত্রের মুখে।
গত ৫ আগষ্ট পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর মাস খানেক আত্নগোপনে থাকেন হেযবুত তওহীদ নামধারী আওয়ামী লীগের এই দোষররা, মাস পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই তারা পুনরায় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার জন্য ভয়ানকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারী সকালে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলিম উম্মাহ’র উপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে করে নাগদাহ গ্রামের অন্তত ২০ জন আহত হয়ে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন, অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
২৪ ফেব্রুয়ারীর ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে বক্তারা বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগ নেতা জেল্লাল, আঃ কুদ্দুস ও আমিরুল গংদের বাড়িতে ভন্ড হেযবুত তওহীদের ইসলাম বিদ্বেষী একটি প্রোগ্রাম হওয়ার কথা আছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে পীরগাছা থানা পুলিশকে জানানো হলে, পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী এলাকাবাসীকে নিশ্চয়তা দিয়ে আশ্বস্ত করে বলেন যে, নাগদাহ গ্রামে ইতিপূর্বে যা হয়েছে হয়েছে আমি থাকতে কোন ইসলাম বিদ্বেষী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হবেনা। পুলিশের এমন নিশ্চয়তা দেয়ার পরেও দেখা যায় রাতের অন্ধকারে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২০টি মোটরসাইকেল যোগে হেযবুত তওহীদ নামধারী ৫০/৬০ জন আওয়ামী সন্ত্রাসী উল্লেখিত আঃ কুদ্দুস, জিল্লাল আমিরুল গংদের বাড়িতে জমায়েত হতে থাকে। রাত থেকেই বিষয়টি জানাজানি হলে জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি করে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারী সকাল অনুমান সারে নয়টার দিকে নাগদাহ গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য নুর আলম ও মিজানুর রহমান, আব্দুল কুদ্দুস এর বাড়িতে অজ্ঞাত মানুষের আনাগোনার বিষয়ে জানতে গেলে, হেযবুত তওহীদ নামধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের প্রতি আক্রমণ চালায়। তাদের আক্রান্ত হবার খবর ছড়িয়ে পড়লে ছিদাম হাটের আশপাশে উপস্থিত, আসাদুল, আসিফ, সজিব, রাসেলসহ ৩০/৩৫ জন মিলে আহত দুইজনকে উদ্ধার করতে গেলে তাদেরকেও হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালায় হেযবুত তওহীদের প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী বাহিনীরা। এতে করে অন্তত ২০ জন আহত হয় গুরুতর ৪ জন। আহত সকলের বাড়ি নাগদাহ গ্রামে।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করান। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে, এলাকাবাসী আওয়ামী তওহীদের আস্থানা হিসেবে পরিচিত আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ির দিকে আসলে হিজবুত তাওহীদের সন্ত্রাসীরা জনতাকে উদ্দেশ্যে করে আগ্নেয়াস্ত্র পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্র রামদা, ক্রিচ, চাপাটি, চাইনিজ কুড়াল লাঠিসোটা প্রদর্শন করেন। এবং জনতার উদ্দেশ্যে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকেন। সে সময় এলাকাবাসীর সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পীরগাছা থানা পুলিশ ও সেনা বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে সংঘবদ্ধ অবস্থায় হেযবুত তওহীদের সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের উপস্থিতিতে স্থানীয়দের দিকে ঢিল ছুড়তে থাকে। সন্ত্রাসীদের ঢিলে আঘাতপ্রাপ্ত হন পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও, পীরগাছা থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক। এমতাবস্থায় পুনরায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে, এরই একপর্যায়ে হেযবুত তওহীদের কতিপয় সদস্যরা প্রশাসনের সামনেই তাদের আস্থানায় আগুন জালিয়ে দেয়। পরিকল্পিত ঘটনা ঘটিয়ে অত্র এলাকার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। গত ৫ আগষ্টের পর থেকেই স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লাল ইসলাম বিদ্বেষী সংগঠন হেজবুত তাওহীদের লোকজনদের নিয়ে দফায় দফায় মিটিং করে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মাঝে বিদ্বেষ ছড়াবার চেষ্টা করে আসছিল।
উপস্থিত ইসলামিক স্কলারগন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ”র উদ্দেশ্যে গণমাধ্যমকে বলেন,হেযবুত তওহীদ” বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি ভয়ংকর পথভ্রষ্ট ইসলাম বিদ্বেষী সন্ত্রাসী সংগঠন। দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্যমতে গত ২০০৮ সালে সংগঠনটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ সরকার। তারা অন্য মুসলমানদের সাথে সালাত আদায় কিংবা কোন ইবাদতেও অংশগ্রহণ করেনা। এদের শপথবাক্যে উল্লেখ আছে, এই দলভুক্ত যারা নয় অর্থাৎ বাকি দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান পথভ্রষ্ট ও বিকৃত ইসলামের অনুসারী। অতএব তাদের সাথে কোন ইবাদতে অংশগ্রহণ করা যাবে না। কেবল এই আন্দোলনের সাথে যুক্তদের সাথেই এবাদতে অংশগ্রহণ করা যাবে। এই দলটি আলেম-ওলামার প্রতি চূড়ান্ত বিদ্বেষ পোষণ করে এবং তারা মনে করে যে, হাদীস, তাফসীর, ফিকহসহ ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা কেবল অপ্রয়োজনীয়ই নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির কারণ।
তারা মনে করে যে, আল্লাহ “হেযবুত তওহীদ”কেই মানবজাতির উদ্ধারকর্তা হিসাবে মনোনীত করেছেন। কাজেই এই সময়ে যারা মুমিন-মুসলিম হতে চায়, আল্লাহর সঠিক দিক-নির্দেশনা, সত্যপথ লাভ করতে চায় তাদের এমামুযযামানের আনুগত্য করা ছাড়া মুক্তি নেই। এছাড়াও অজস্র ভণ্ডামি কর্মকান্ড আছে এই ভন্ডদের আকিদায়। উপস্থিত ওলামায়ে কেরামগন প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই সংঘঠনটির কার্যক্রম অতিদ্রুত বন্ধ করার দাবি জানান।
দুপুর সারে বারটার দিকে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল এর হাতে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এছাড়াও তৌহিদী মুসলিম উম্মাহ’র ব্যানারে, রপুলিশ সুপার রংপুর ও বিভাগীয় কমিশনারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি তিনি আন্তরিকতার সাথে দেখবেন। আইনশৃঙ্খলা যাতে ভালো থাকে সেজন্য তিনি পুলিশ সুপারের সাথেও কথা বলবেন বলে জানান। এছাড়াও এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার আহবান জানান তিনি।