শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১৯ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কখনো তিনি মানবাধিকারকর্মী, কখনো ইমিগ্রেশন অফিসার, আবার কখনো ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা—নানান ছদ্মবেশ ধারণ করে মানুষের আস্থা অর্জন করে প্রতারণা করাই ছিল যার পেশা। শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপনে থাকা সেই ‘মহাপ্রতারক’ কামাল হোসেন ওরফে ইমন (৩৭) শেষমেশ ধরা পড়েছে পুলিশের জালে।
উমরাহর নামে প্রতারণার শিকার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার আশরাফুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় গতকাল সোমবার রাতে নাটোরের নলডাঙ্গা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মো. আশরাফুল ইসলাম তাঁর বাবা, মা এবং খালাকে নিয়ে পবিত্র উমরাহ পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় অনলাইনে কামাল হোসেনের সাথে তার পরিচয় হয়। কামাল নিজেকে ইমিগ্রেশন অফিসার পরিচয় দিয়ে দাবি করেন, তাঁর একটি হজ্ব এজেন্সি রয়েছে। এরপর আশরাফুল ইসলাম উমরাহ যাওয়ার ব্যাপারে তার সঙ্গে চুক্তি করেন। তখনই শুরু হয় প্রতারণার ছক। উমরাহর জন্য ভিসা, টিকিট, হোটেল বুকিংসহ অন্যান্য খরচ বাবদ অগ্রিম ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন। তারপর থেকে কামালের ফোন বন্ধ। ঠিকানা ভুয়া। এক পর্যায়ে বুঝতে পারেন সবটাই ছিল সাজানো ফাঁদ,তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
ঘটনার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জ থানায় আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ ও ব্যাংক লেনদেন খতিয়ে দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় প্রতারণার মূল হোতা কামাল হোসেন। পরে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল নাটোরের নলডাঙ্গা থানার ঠাকুর লক্ষীকুল গ্রামে অভিযান চালিয়ে কামালকে গ্রেপ্তার করে। ওই গ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
পুলিশ জানায়, কামাল কেবল এককভাবে প্রতারক নন, বরং একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। উমরাহর মতো ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়কে পুঁজি করে তিনি প্রতারণা করে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। কখনো মানবাধিকার, কখনো ইমিগ্রেশন, আবার কখনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে মানুষের বিশ্বাস আদায় করাই ছিল তার প্রধান কৌশল।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিকে আদালতে উপস্থাপন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে। পাশাপাশি তার সঙ্গে জড়িত এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবেও বলে জানান তিনি।