বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন
আবীর আকাশ- লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি.
লক্ষ্মীপুর জেলায় ১৫৫টি ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে ৮৭টি ইটভাটার কোনো রকম প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা ছাড়পত্র নেই। অবৈধ ইটভাটার সদরে ১৯টি, রামগঞ্জে ৮টি, রামগতিতে ৪৫টি, কমলনগরে ১৫টি। দেশব্যাপী অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অন্তর্বতীকালীন সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকার ভেতরেও লক্ষ্মীপুর সদর কমলনগর ও রামগতি মিলিয়ে এ বছর আরও ১০টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
ফসলী জমিতে স্থাপিত এ ১০টি ইটভাটার মধ্যে সদরের ঝাউডগীতে ভাই ভাই ব্রিকস, মোহনা ব্রিকস, চরমনসায় মহানগর ব্রিকস, কমলনগরের চর পাগলায় তাহেরা ব্রিকস, বাহার ব্রিকস, চরবসুতে আকাশ ব্রিকস, রাগতির চর আফজালে এসএসবি, এআরবি, সিবিএল ও একই এলাকার ভুলুয়া ব্রীজের পাশে টিবিএল। এসব অবৈধ ইটভাটায় লাকড়ি দিয়ে রাতদিন ফসলি জমির উর্বর মাটি পোড়াচ্ছে।
ফসলি জমিতে নতুন করে আরও ১০টি ইটভাটা চালু হওয়ায় পরিবেশ মারাক্তক হুমকির মুখে রয়েছে। শ্বাসকষ্ট, চোখে ঝাপসা দেখা, ধুলো ময়লা উড়ে জনবসি চরম পর্যায়ে রয়েছে। গেল বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিএমওএ) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। এতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইটভাটাজনিত বায়ুদূষণ রোধে দেশে আর কোনো নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন। ওই এলাকার তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা হওয়াতে কৃষির আবাদ কমে গেছে। গাছে ফল ধরলে নষ্ট হয়ে যায়।
উপদেষ্টার এমন ঘোষণার পরও লক্ষ্মীপুরে নতুন তিনটি ইটভাটা চালু হয়েছে। নতুন স্থাপিত ইটভাটা নিয়ে লক্ষ্মীপুরে মোট ইটভাটা দাঁড়িয়েছে ১৬৫টি। যা প্রত্যেকটি ভাটায় ফসলি জমির টপ সয়েল পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। যার মধ্যে পুরনো ৮৭টিসহ নতুন ১০টি নিয়ে মোট ৯৭ ভাটার পরিবেশগত প্রশাসনিক ছাড়পত্র নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ভাটাগুলোর অধিকাংশই সদর, কমলনগর ও রামগতির চরচরাঞ্চলে, আবাদি জমি, আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রামীণ সড়কসংশ্লিষ্ট এলাকায় গড়ে উঠেছে।
অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৮ ধারায় বলা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যক এলাকা, পৌর এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা থেকে ন্যূনতম এক কিলোমিটার ও সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার, পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে আধা কিলোমিটার, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ রয়েছে।
নতুন স্থাপিত ভাটাগুলো হচ্ছে আঁধারমানিক গ্রামের এফ বি ব্রিকস, এমএসবি ব্রিকস, চরপাগলা গ্রামের তাহেরা ব্রিকস। নতুন কয়েকটি বৈধ ইটভাটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খুব কাছে স্থাপন করা হয়েছে। আবার অনেকগুলো ইটভাটা জিগজাগ হলেও আদতে অবৈধ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকার বাহিরের রয়েছে।
অনুমতি ছাড়া কীভাবে নতুন ভাটা স্থাপন করা হয়েছে জানতে মেসার্স মদিনা ব্রিকসের মালিক ও ব্রিকস সমিতির সভাপতি মো.ওয়াহিদউদ্দিন পাটওয়ারী বলেন আমরা যাঁরা সরকারী অনুমদিত বৈধ ভাটা করি, বাংলা ভাটার জন্য আমরাতো দেউলিয়া হয়ে যাইতেছি। আমাদের ব্যবসা বন্ধের পথে। বাংলা ভাটা চলে লাড়কিতে আর আমরা চালাই কয়লাতে। বাংলা ইট বিক্রি করে ৭হাজার টাকা আমরা বিক্রি করতে হয় ৯ হাজার ৫শ টাকা। আমরা চাই অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হউক।।
এদিকে ভাটাগুলোতে ইট তৈরির জন্য সদরসহ রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে,ফসলি জমি কেটে মাটি আনা হচ্ছে। মাটি পরিবহনের কারণে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। এ ছাড়া ইটভাটা নির্মাণের ফলে কৃষিজমি কমে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি হচ্ছে। ভাটার ধোঁয়ায় জমির ফসল ও সবজি বিনষ্ট হচ্ছে। গাছে ফল এলেও তা ঝরে পড়ে যায়। চরকাদিরা গ্রামের ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, ওই এলাকায় তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা হওয়াতে কৃষির আবাদ কমে গেছে। গাছে ফল ধরলে নষ্ট হয়ে যায়। অপর দিকে ভাটাগুলোতে এরই মধ্যে বিদ্যুতের সংযোগও দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পুরোনো ভাটার কিছু কাগজ দেখিয়ে নতুন ভাটায় বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ জন্য নতুনভাবে পাঁচটি খুঁটিও স্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হারুনুর রশিদ পাঠান জানান, অবৈধ ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া নতুন ভাটায় বিদ্যুৎ-সংযোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানাতে পারবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শফিউল আলম বলেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়া হয়েছে কি না আমি জানি না,এটা আমার নলেজে নেই। আমি নতুন এসেছি। তারা কিভাবে পেয়েছে এটা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।