শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৯ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রংপুরে ছাপাখানার সাইন বোর্ড ঝূলিয়ে আব্দুস সোবহান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে জমি দখল চেস্টার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ১৯৬৭-৬৯ সালের বৃহত্তর রংপুরের আওয়ামী ছাত্রলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান। শুধু তাই নয়, এসময় কণ্ঠ নকল করে নেতা, মন্ত্রী ও সচিবের পরিচয়ে প্রশাসনে ভূয়া প্রভাব খাটনোরও অভিযোগ করা হয়।
বুধবার ২১শে জুন দুপুরে রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের পক্ষে তার ইংল্যান্ড প্রবাসী পুত্র আহমেদ আল হাইসাম বিন রহমান সাগর। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, কামাল মোহাম্মদ রাসেল, মশিউর রহমান, পাম্পের ম্যানেজার হানিফ মিয়া ও সঞ্জিব কুমার, ম্যানেজার টেকনিক্যাল সাইফুল ইসলাম।এসময় রংপুরে কর্মরত বিভিন্ন প্রেস, ইলেক্ট্রনিক্স, অনলাইন গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে সাগর বলেন, আমার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করেছেন। ৬ দফা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৭-৬৯ পর্যন্ত সময়ে বৃহত্তর রংপুরের আওয়ামী ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ৬ নম্বর সেক্টরের অধিনে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের মোগলহাটে সম্মৃখ সমরে অংশ নিয়েছেন। কিন্ত আমার পিতার জমি এখন অবৈধ দখল করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাগর বলেন, রংপুর মহানগরীর মৌজা-উত্তম, জেল নং-৫২ এর মধ্যে ২০০৫২/৫৮ নং দলিল মূলে ২৩১ দাগে ২২ শতক এবং ২০০৫৩/৫৮ নং দলিল মূলে ২২৩ দাগে ৫০ শতক মোট ৭২ শতক জমি ছকিম উদ্দিনের কাছ থেকে ক্রয় করেন আজিজার রহমান। এসএ রেকর্ডে ১৫৮৭ নং খতিয়ানে ৪০ শতক এবং ১৬২০ খতিয়ানে বাকি জমি রেকর্ডভূক্ত হয়।
কিন্তু আজিজারের ওই জমি থেকে জাবের মোহাম্মদ ১৮ শতক জমি ১৮৭২১/৫৯ দলিলমূলে বিক্রি করেন এবং সংলগ্ন ২৩২ নম্বর দাগের ১৫ শতক জমি আজিজার রহমানকে বদলামূলে দেয়। ওই ১৫ শতক জমি ১৯৯২ সালে আজিজার রহমানের নামে মাঠ রেকর্ড হয়। এরমাধ্যমে ২৩১ এবং ২৩২ সাবেক দাগে আজিজারের নামে ৩২ শতক জমি আরএস ২২৭ নং খতিয়ান তৈরি হয়। এরপর আজিজারের ওয়ারিশগন ৩০ ধারায় মামলা করে বাকি ৮ শতক জমি তাদের নামে রেকর্ড করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাগর বলেন, রংপুর সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের রায় (অন্য ২৮/৯৭) মোতাবেক আমার পিতা আব্দুর রহমান ১৯৯৭ সালে ওয়ারিশ মুলে আব্দুল হাকিম, খলিলুর রহমান ও এনামুল হকের কাছ থেকে মৌজা-উত্তম জেল নং-৫২, আরএস খতিয়ান ২২৭, সাবেক দাগ নং ২৩১ ও ২৩২, বর্তমান দাগ ২৫৯ এ ৩২ শতক জমি ক্রয় করেন। যার দলিল নং ২৬১৫। ক্রয়ের পর ডিজিটাল খাজনা খারিজ করে এলপিইজি পাম্পসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠা গড়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাগর আরও বলেন, কিন্তু ওই জমির সাড়ে ৭ শতক জমি আমিনুল ইসলাম গংদের কাছ থেকে ফারুখ আজম সোবহান ওরফে আবদুস সোবহান তার পিতা আব্দুস সামাদের নামে ২০১৫ সালের পাওয়ার অব এটর্নি নেয়। এরপর আব্দুস সামাদ হেবা করে দেন আব্দুস সোবহানকে। এরপর সোবহান ওই জমি দখলের চেস্টা করেন। তখন আমার পিতা আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা (এম আর৫৬১/১৫)দেন। মামলাটি চলাকালীন সময়ে আমিনুল গংদের কাছ থেকে পাওয়ার অব অটর্নি বাতিল না করে ২০১৬ সালে ডিপি/আরএস খতিয়ান নকল করে ভূয়া দলিল বানিয়ে (নং ১০৫৭৯/১৬) বাবার ক্রয়কৃত ৩২ শতক জমির মধ্যে সাড়ে সাত শতক জমি জাল দলিল করে নেয়। ২০১৭ সালে ওই মামলারে রায়ে ওই জায়াগায় প্রবেশে নিষেধ্যাজ্ঞা জারি করে আদালত। এরপর আমরা জজ কোর্টে রিভিউ(৯৫/১৭) করি।
জজ কোর্ট ওই রায় স্থগিত করে আবারও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠায়। ২০২২ সালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত এক আদেশে ফাইল নথিবদ্ধ করেন। এরপর আমরা ওই মামলাটি জজ আদালতে রিভিউ পিটিশন দায়ের করি। এখনও মামলাটি চলমান রয়েছে। এছাড়াও ২০২২ সালে জাল দলিল করার অপরাধে সিএমএম (সিআর৬৮/২২) আদালতে আমার পিতা একটি জালিয়াতির মামলা করেন, সেটিও বিচারাধীন। কিন্ত তার পরেও আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গোডাউন ঘরের সামনে আব্দুস সোবহান ও তাজিদুল ইসলাম লাল দৈনিক বায়ান্নোর আলোর ছাপাখানার সাইন বোর্ড ঝূলিয়ে আমাদের জমি বেদখলের চেস্টা চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাগর অভিযোগ করেন, আব্দুস সোবহান বিভিন্ন মন্ত্রী, নেতা ও সচিবের কণ্ঠ নকল করে ডিসি, এসপিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষকর্তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে প্রভাবিত করে বিভিন্নভাবে জমিদখল, আদম ব্যবসা, নিয়োগ বাণিজ্য করছেন। দৈনিক বায়ান্নোর আলোর প্রকাশক হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি পত্রিকার অপব্যাহগার করছেন। শুধু তাই নয়, আমিসহ আমার পিতা ও পরিবারের লোকজনের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। এই অবস্থায় আমার ৭৭ বছর বয়সি বীরমুক্তিযোদ্ধা পিতা মানষিক ভাবে পর্যদুস্থ। আমরাও সঠিকভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারছি না।
সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, পত্রিকার ছদ্মারণে থাকা জমি দখলবাজদের হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করুন। অন্যদের উদ্ধার করুন। যে চেতনা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে করেছিলাম। তা যেন কতিপয় দখলবাজদের কারণে ধুলিস্যাত না হয়। এ ব্যপারে দৈনিক বায়ান্নোর আলোর প্রকাশক আব্দুস সোবহান বিদেশে থাকায় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাজিদুল ইসলাম লাল জানান, ওই জমি ১৯৫৮ সালের ২০০৫৩ নম্বর দলিলমূলে ৪০, ৬২ র রেকর্ড অনুযায়ী আমিনুল ইসলাম গংদের। কিন্তু ১৯৯২ সালের রেকর্ডে ভূল করে আজিজার রহমানের নামে জমির মাঠ রেকর্ড হয়।
আব্দুর রহমান ১৯৯৭ সালে মাঠ রেকর্ড অনুযায়ী আব্দুল হাকিম গংদের কাছ জমিটি ক্রয় করেন।আর ২০১৬ সালে আব্দুস সোবহান ১৯৫৮ সালের দলিল এবং ৪০,৬২ সালের রেকর্র্ড অনুযায়ী ক্রয় করেন। এরপর আব্দুর রহমান তিনটি মামলা দেন। সেটি রায় সোবহানের পক্ষে আসে। এরপর আব্দুর রহমান পক্ষ আপিল করে। সেই আপিলও খারিজ হয়। এরপর ল্যান্ড সার্ভে রেকর্ড বাতিলের মামলা আছে। ওই জমির মালিক আব্দুস সোবহান এবং পত্রিকার ঘোষণা পত্রে হাজিরহাট লেখা থাকার কারণে সেখানে ছাপাখানার সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। তিনি বলেন, আজিজার রহমান ২২৩ দাগে জমি কিনলেও তার ওয়ারিশগন ২৩২ দাগে আব্দুর রহমানের জমি বিক্রি করেছেন, যে জমিটির ক্রয় সূত্রের মালিক আব্দুস সোবহান।