শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন
রবিন চৌধুরী রাসেল- রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
রংপুরে “জুলাই অভ্যুত্থান ও শ্রমজীবীদের হিস্যা” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ২০২৫ইং সকাল ১১ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শ্রমিক অধিকার আন্দোলন এর উদ্যোগে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়।
শ্রমিক অধিকার আন্দোলন এর আহবায়ক এডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ এর সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হক, সাংবাদিক রন্জন দে, সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী ডলার, শ্রমিক অধিকার আন্দোলন এর সদস্য সবুজ রায়, রেদোয়ান ফেরদৌস, কৃষক সংগঠক আব্দুস সাত্তার, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যুগেশ ত্রিপুরা প্রমুখ।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা করেন শহীদ তাহির জামান প্রিয়’র পিতা মোস্তফা জামান, শহীদ মোসলেম উদ্দিন মিলনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার, শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের মাতা ময়না বেগম, শহীদ মেরাজুল ইসলামের আম্বিয়া খাতুন প্রমুখ। আলোচনা সভায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বীথি দাস নন্দিনী। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আহসান আহমেদ।
আলোচনা সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা বলেন,বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমজীবীদের ভুমিকা, তাদের আত্মত্যাগ এবং প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়ন জরুরী। ইতিহাসে এমন কিছু মূহুর্ত আসে, যা শুধু সেই সময়ের সমাজকে নয়, পুরো জাতির চেতনায় স্থায়ী ছাপ ফেলে। জুলাই অভ্যুত্থান এই জনপদের একটি যুগান্তকারী ঘটনা। জুলাই অভ্যুত্থান দীর্ঘ ১৫ বছরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অসন্তোষ এর বহিঃপ্রকাশ। ছাত্র জনতার রক্ত ঝরা সংগ্রাম কখনো ব্যর্থ হয় না। যদিও তাৎক্ষণিক ফলাফল অনেক সময় আশাব্যঞ্জক হয় না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রমিকদের আত্মত্যাগ ভুলে যাচ্ছে এবং পুরনো শোষণমুলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে শ্রমিক শোষণের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করছে। শ্রমিকরা রাজনৈতিকভাবে অর্জিত বিজয়ের অংশীদার হলেও তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক হিস্যা অনিশ্চিত।
আলোচনা সভার সভাপতি এডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন,গণ-অভ্যুত্থানের সাফল্যের পর শ্রমিক সংগঠনগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার, ক্ষতিপূরণ, মামলা প্রত্যাহার, বকেয়া পরিশোধ, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, বন্ধ কলকারখানা চালু,গ্রামীণ রেশনিং ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি উত্থাপন করেছিলো। কিন্তু সরকার শ্রমিকদের দাবির বাস্তবায়নের পরিবর্তে পুরনো কায়দায় দমন পীড়নের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।
আলোচকবৃন্দ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা এবং শ্রমজীবী মানুষদের ন্যায়সংগত দাবিসমুহ মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। সেইসাথে শ্রমিক-কর্মচারীদের শোষণ-বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানানো হয় আলোচনা সভা শেষে জাগরণের গান পরিবেশন রহমত সোহাগ এবং সাম্য তরফদার বন্ধন।