শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
আবীর আকাশ- লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানি বন্দী হয়ে প্রায় ৮ লাখ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। এক সমীক্ষায় জানা গেছে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উঠলেও অধিকাংশ মানুষ কষ্ট করে বাড়িঘরেই রয়েছেন। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন।
এদিকে নোয়াখালী থেকে অনবরত বন্যার পানি রহমতখালী ও ডাকাতিয়া খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে। এতে ক্রমান্বয়ে লক্ষ্মীপুরের অবস্থান আরও খারাপের দিকে এগোচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দিদের জন্য কোন খাবার যাচ্ছে না। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানানভাবে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন বলেও জানান সেচ্ছাসেবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুরে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে- সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, দিঘলী, চরশাহী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, দত্তপাড়া, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, দালাল বাজার, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের রহমতখালী খাল সংলগ্ন লামচরী, সমসেরাবাদ, বাঞ্চানগর, মধ্য বাঞ্চানগর, মজুপুর এলাকা, চররুহিতা, পার্বতীনগর, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা, রামগতির চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, রামগঞ্জের লামচর, কাঞ্চনপুর, চন্ডিপুর, ভাটরা, ভোলাকোট, রামগঞ্জ পৌরসভা, ভাদুর, করপাড়া, দরবেশপুর, রায়পুরের সোনাপুর, কেরোয়া, চরপাতা, বামনী, চরমোহনা, রায়পুর, দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়ন ও রায়পুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বন্যায় কবলিত। এরমধ্যে দিঘলী, চরশাহীসহ দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। ওইসব এলাকার মানুষ খাদ্যসংকটে হাহাকার করছেন। যে যেভাবে পারছেন ত্রাণের জন্য আহবান জানাচ্ছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় উদ্ধারকারী ও ত্রাণ সহায়তাকারীরা দুর্গম এলাকাগুলোতে যেতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪১৯ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বৃদ্ধি পেয়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, জেলার বর্তমানে ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৪০৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখনো পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৩ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দুর্গম এলাকায় যারা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যাননি, তাদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতক দল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা জেলার সর্বত্র ত্রাণ বিতরণ করছে।