শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন
তিমির বনিক- মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২০টি ছড়ার বালু ইজারা বন্দোবস্তো দেওয়ার পরও পরিবেশগত ছাড়পত্রের কারণে বিগত ২ বছর ধরে ইজারাদাররা সরকারি কোষাগারে কোন রাজস্ব জমা দেননি।
পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কেবলমাত্র একজন ইজারাদার পরিবেশগত ছাড়পত্র এনভেরনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (ইআইএ) সংগ্রহ করলেও বাকি কোন ইজারাদার এখন পর্যন্ত পরিবেশগত ছাড়পত্র সংগ্রহ না করায় আবারও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন অনেক ইজারাদার।
অধিকাংশ ইজারাদার বর্তমান শাসক দলের নেতাকর্মী হওয়ায় দীর্ঘ দিন থেকে তাদের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সেন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। এ অবৈধ ব্যবসার আধিপত্য ধরে রাখার জন্য নিজেদের মধ্যে দ্বন্দের কারণে মারাত্মক সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। ফলে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না করা হলে যে কোন সময় প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ২০২১ইং সালের ২৪শে মে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২০টি সিলিকাবালু মহাল দুই বছরের জন্য ইজারা বন্দোবস্তো প্রদান করা হয়।
কিন্তু ইজারাদাররা পরিবেশগত ছাড়পত্র সংগ্রহ না করতে পারায় কোন ইজাররাদার এ খাতে সরকারি রাজস্ব জমা দেননি। ইজারাদাররা কেবলমাত্র সিকিউরিটির টাকা জমা দিয়ে পরিবেশগত ছাড়পত্রের অজুহাতে বিগত দুই বছর ধরে এসব বালু মহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন।
গত ১৭ই এপ্রিল উপজেলার সুমাই ছড়ার ইজারাদার মোঃ আবরু মিয়া পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইআইএ) সংগ্রহ করেন। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোতে সময় বর্ধিত করার আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ পরবর্তী আরও দুই বছরের জন্য সময় বৃদ্ধি করে ওই ছড়ার ইজারা বন্দোবস্ত প্রদান করেন।
অন্য কোনো ইজারাদার এখন পর্যন্ত পরিবেশগত ছাড়পত্র জমা দেননি বলে জানা গেছে। ফলে সরকার এ খাত থেকে বিগত দুই বছরের ভ্যাট, টেক্স ও ইজারার টাকাসহ ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৪ হাজার ৫৬২ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
বালু মহাল সংশ্লিষ্টরা জানান- ইজারাদাররা রাজস্বের টাকা ফাঁকি দিয়ে সেন্ডিকেট ব্যবসার মাধ্যমে বালু উত্তোলন চালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন।
তারা আরও জানান- বিগত দুই বছর খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো ও পরিবেশ অধিদপ্তরের খামখেয়ালিপনা ও গাফিলতির কারণে ইজারাদাররা সরকারি এ রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পায়।
শিগগিরই যদি ইজারাদাররা পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইআইএ) জমা না দেন তাহলে ইজারাদারদের সিকিউরিটির টাকা বাজেয়াপ্ত করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করার মতামত দেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরূদ্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করা হলেও কোনক্রমে তা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ইং সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় এনে হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত নির্দেশনা দেন যে, এসব ছড়ার কোয়ারি ইজারা কেবলমাত্র পরিবেশ অধিদফতর সম্পর্কিত কমিটির পরিবেশগত প্রভাব নিরূপন করে এরভেরনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (ইআইএ) দাখিলপূর্বক আইন অনুযায়ী লিজ প্রক্রিয়ায় পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে অনুমোদন দিতে বলা হয়।
কিন্তু আদালতের এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মধ্যে চিঠি চালাচালিতে কেটে যায় প্রায় দুই বছর। ফলে এসব বালু মহালে ইজারা বন্দোবস্তো না থাকায় বিগত ৬ বছরে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও অবৈধভাবে বালু খেকোরা একদিনের জন্যও তাদের বালু উত্তোলন বন্ধ করেনি। বরং বালু খেকোদের দৌরাত্ম্যে দিনকে দিন প্রতিযোগিতা মুলক বালু উত্তোলনের জন্য নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরের মৌলভীবাজার অফিসের সহকারী পরিচালক মাহিদুল ইসলাম বলেন- হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক বর্ণিত ছড়াগুলোতে একজন ব্যতিত কেউই পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইআইএ) অদ্যাবধি দাখিল করেননি।