রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন
রুহুল আমীন খন্দকার- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে- এমন সন্দেহে প্রেমিকাকে(২৭) ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেন প্রেমিক আলামিন ওরফে বাপ্পী(৩২)। সোমবার ৪ঠা এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পলাশ কুমার দালালের কাছে এমন জবানবন্দি দেন তিনি। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারকৃত বাপ্পী ঝিকরগাছা উপজেলার কাউরিয়া চৌধুরীপাড়ার আলাউদ্দিন গাজীর ছেলে। এর আগে, সোমবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বংশীপুর থেকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ। এছাড়া বাপ্পীকে পালানোর কাজে সহায়তার অভিযোগে চাচা জুয়েল হোসেনকে মণিরামপুর উপজেলার মুক্তারপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। জুয়েল হোসেন মণিরামপুর উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের মৃত আবু বক্কার গাজীর ছেলে। তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর পুলিশের মুখপাত্র ডিবির ওসি ইন্সপেক্টর রূপন কুমার সরকার।
তিনি বলেন- বাপ্পী পুলিশকে জানিয়েছে ২০১২ইং সালে শার্শা উপজেলার এক মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ২০১৫ইং সালে বাপ্পী বিদেশ চলে যান। ২০১৮ সালের শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং জানতে পারেন তার প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। প্রেমিকার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন বাপ্পী। এরপর সুমাইয়ার সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন।
রূপন কুমার আরও জানান- বছর খানেক আগে স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে বাপ্পীর কাছে চলে আসেন তার প্রেমিকা। ঘটনাটি জানাজানি হলে মাতবরদের মধ্যস্থতায় প্রেমিকাকে আবার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনমাস আগে ফের স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রেমিক বাপ্পীর কাছে চলে আসেন তিনি। প্রেমিকাকে নিয়ে যশোর শহরে এসে বাপ্পী বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
এক পর্যায়ে একাধিক পুরুষের সঙ্গে প্রেমিকার সম্পর্ক রয়েছে বলে বাপ্পীর সন্দেহ হয়। এ নিয়ে তদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। পরে তারা পৃথক হয়ে যান। এরপর বাপ্পীর ফেসবুক আইডিতে ও মেসেঞ্জারে তার প্রেমিকা বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে তোলা ছবি পাঠাতে থাকেন। এ ঘটনায় তার প্রতি বাপ্পীর প্রচণ্ড ক্ষোভ জন্মে।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র জানান- এ অবস্থায় প্রেমিকাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বাপ্পী। গত ২৩শে মার্চ শেষবার দেখা করার অনুরোধ জানান। পরে প্রেমিকাকে মোটরসাইকেলে করে বেনাপোলে নিয়ে যান। সেখানকার এক মাদকব্যবসায়ীর থেকে এক বোতল ফেনসিডিল কিনে দু’জনে সেবনও করেন। এরপর তারা মোটরসাইকেলে ঝিকরগাছায় ফিরে আসেন এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরির পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাঁপাতলা গ্রামের ঝিনুকদাহ মাঠের ফাঁকা স্থানে প্রেমিকাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন বাপ্পী। এ সময় প্রেমিকার দুই হাতের রগ ও গলাও কেটে ফেলেন।
পরে বাপ্পী মণিরামপুরের মুক্তারপুরে চাচা জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। চাচা সব কথা শুনে মোটরসাইকেলসহ তাকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক এক বন্ধুর চেম্বারে নিয়ে লুকিয়ে রাখেন। সেখান থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বংশীপুরে চলে যান বাপ্পী। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে সোমবার সকাল সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।