রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ অপরাহ্ন
আবীর আকাশ- লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে চলমান বন্যা-পরবর্তীতে ভয়াবহ রূপ দেখা গেছে। গত কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ এবং উপরের পানির চাপে লক্ষ্মীপুর জেলা সদরসহ কমলনগর ও রামগতি উপজেলার চরকাদিরা তোরাবগঞ্জ, চরলরেন্সসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এতে বসতঘরের ক্ষতির পাশাপাশি মাছচাষিদের কোটি টাকার মাছ চলে গেছে। বন্যাকবলিত এসব এলাকার বসতঘরের মানুষ রাতে বাইরে, দিনে ঘরের আশপাশে দেখা যায়। জীবনের সম্বল রেখে দূরে থাকেন না মালিকরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, চরকাদিরা ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ পানির নিচে। বাকি চারটি ওয়ার্ডের পানি কিছুটা কমেছে। ৬নং ওয়ার্ডের শাহিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই। তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছি। অসংখ্য ভুক্তভোগী বলেন, প্রায় দুমাস ধরে বসতরঘরে পানি। যে কোনো মুহূর্তে ঘরটি ধসে পড়ার আশঙ্কা তাদের। ঘরের বিভিন্ন অংশ ঝুঁকে রয়েছে। মেরামতে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাগতে পারে। এভাবে পানির নিচে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। তাদের মধ্যে ৫০০-এর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বাকি ২ হাজার ৫০০ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এগুলো মেরামতে প্রয়োজন প্রায় ১০ কোটি টাকা।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ২ থেকে আড়াই হাজার মানুষকে মাঝেমধ্যে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, লবণ ও তেল দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের টিমের সদস্যরা। তবে মানুষের দৈনিক যে চাহিদা, তা অপূরণীয় বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। বন্যাকবলিত স্থানে স্থানীয়রা তাদের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। বিভিন্ন সংগঠনের লোকেরা টিমের মাধ্যমে দু-একদিন ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিলেও বর্তমানে কেউ খোঁজখবর নিচ্ছেন না, এমন দাবি স্থানীয়দের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কমলনগরে বন্যায় আমন বীজতলা ৯৩০ হেক্টর, রোপা আমন ১০৬৯ হেক্টর, আউশ ২৫৫০ হেক্টর, শরৎকালীন সবজি ২৯ হেক্টর, পান ৭ হেক্টর, ফল বাগান, ৩৩০ হেক্টর ও আখ ১০ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ২৭ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত।
কমলনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শাহীন রানা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৬০০ কৃষককে পুনর্বাসনের জন্য আউস ধানের উপসী জাতের বীজ, সার ও নগদ বিকাশের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস অ আ আবীর আকাশকে বলেন, কমলনগরে বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যার পানি উঠেছে। আমরা সব ইউনিয়নে সরকারি খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেছি। বিশেষ করে চরকাদিরা ইউনিয়নে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ওখানে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা চাল বিতরণ করব। তবে খাদ্য সহায়তা বিতরণ চলমান।