সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরে মাল্টা চাষে স্বাবলম্বী দুই ভাই কোরিয়া গিয়ে প্রথমে মাল্টা বাগানে চাকরি পান। কিন্তু বিদেশভূমে অন্যের বাগানে কাজ করে পড়ে থাকার পাত্র নন লক্ষ্মীপুরের আজিম। দেশে ফিরে এসে ছোট ভাই মোক্তারকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন মাল্টার চাষ। মাল্টা চাষ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। এ ছাড়া এলাকায় অন্যদের মাল্টা চাষ করার জন্য উৎসাহিত করছেন।
আবীর আকাশ এর সঙ্গে আলাপকালে বড় ভাই আজিম জানান, তাদের উৎপাদিত মাল্টা লক্ষ্মীপুরের একাধিক ফলের আড়তে পাইকারি দরে বিক্রি করে থাকেন। আড়তদার বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তাদের প্রতি কেজি মাল্টা ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করে দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া বাগান থেকে ক্রেতাদের তারা প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি করে থাকেন। অথচ আমদানি করা মাল্টা প্রতি কেজি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় কিনতে হয় ক্রেতাদের।
আজিম বলেন, ‘বিদেশ থেকে আমদানি করা মাল্টা কমলা রঙের হলেও আমাদের উৎপাদিত মাল্টা হালকা সবুজ ও হলুদ রঙের মিশ্রণে হয়ে থাকে। স্বাদে আমাদের উৎপাদিত মাল্টা এবং আমদানি করা মাল্টার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের উৎপাদিত মাল্টায় কোনো রকমের কেমিক্যাল দিই না।
গত মৌসুমে ভূঁইয়া ফ্রুটস ফার্ম মাল্টা বিক্রি থেকে নিট আয় করেছে ১৮ লাখ টাকা। এ মৌসুমে ফলন একটু কম হওয়ায় তারা আশা করছেন চলতি মৌসুমে তাদের নিট আয় হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
আজিম আরও জানান, মাল্টা ফলের বৈশিষ্ট্য হলো এক মৌসুমে ফলন বেশি হলে পরের মৌসুমে তার চেয়ে কম হয়। আবার তার পরের বছর ফলন বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিনই জেলা ও জেলার বাইর থেকে দর্শনার্থী এবং ক্রেতারা ভিড় করছেন তাদের বাগানে।
রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউনিয়নের হাজিমারা গ্রামের মোঃ আজিম জীবিকার তাগিদে কয়েক বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। সেখানে তিনি একটি মাল্টা ফলের বাগানে চাকরি নেন। সে বাগানে কাজ করার সময় তিনি মাল্টা ফলের চারা উৎপাদন, রোপণ ও পরিচর্যা এবং ফল বাজারজাতসহ সব ধরনের কাজ শিখে নেন।
পরবর্তী সময়ে দেশে এসে প্রতিবেশীর কাছ থেকে ৮ একর জমি দীর্ঘ মেয়াদে লিজ নিয়ে ২০১৭ সালে ছোট ভাই মোক্তারকে সঙ্গে নিয়ে মাল্টার বাগান করার উদ্যোগ নেন। রাজশাহী থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি মাল্টাগাছ সংগ্রহ করে লিজ করা জমিতে লাগান। চরাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে পানিস্বল্পতায় কিছু গাছ মারা গেলেও বর্তমানে তার বাগানে এক হাজারের বেশি মাল্টাগাছ রয়েছে। যার প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ৫০ কেজি করে মাল্টার ফল ধরে।
মোক্তার আবীর আকাশকে জানায়, প্রথমদিকে তার এই মাল্টা চাষের সফলতা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সংশয় এবং সন্দেহ দেখা দিলেও পরবর্তী সময়ে তাদের সফলতায় সবাই খুশি। মাল্টা চাষে তাকে উপজেলা কৃষি অফিস সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে। পানির অভাব দূর করার জন্য তার বাগানে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে একটি শ্যালো পাম্প মেশিন স্থাপন করে দিয়েছে। ফলে এখন আর শুকনো মৌসুমে তার পানির জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয় না।
তাদের বাগানের ফল থেকে কলম ও চারা উৎপাদন শুরু করে দিয়েছেন। আগ্রহী চাষিদের কাছে মাল্টা ফলের কলম ও চারা বিক্রি করে তাদের মাল্টা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করে চলছেন। যুবকদের মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তারা প্রতিটি কলম ১৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি করে থাকেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন যুবক তাদের কাছ থেকে কলম সংগ্রহ করে বাগান তৈরি করেছেন।
লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনীর ফল ব্যবসায়ী জহির বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের উৎপাদিত মাল্টা ফলের রং আমদানি করা ফলের তুলনায় কম হওয়ায় প্রথমদিকে মানুষ কিনতে আগ্রহী ছিলেন না। অনেকের ধারণা ছিল ফল টক হবে, স্বাদ হবে না। আমরা ক্রেতাদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে বিক্রি করতাম। এখন অধিকাংশ ক্রেতাই এসে আমাদের কাছে লক্ষ্মীপুরের মাল্টার খোঁজ করেন।
ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত মাল্টা এত সুস্বাদু হবে তা খাওয়ার আগে কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এখন দেখি আমদানি করা বিদেশি মাল্টা থেকে আমাদের জেলায় উৎপাদিত মাল্টা অনেক বেশি স্বাদের।
লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মো. হাবীবুর রহমান সবুজ বলেন, ‘মোক্তার ও আজিমের এই মাল্টার চাষ সত্যি প্রশংসনীয়। তাদের মতো অন্য বেকার যুবকরা মাল্টা চাষে এগিয়ে এলে একদিকে দেশে বেকারত্বের অবসান হবে। অপরদিকে বিদেশি ফল আমদানিতে আমাদের ব্যয় কমে যাবে। এতে দেশের অর্থনীতি সবল হবে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. জাকির হোসেন আবীর আকাশকে বলেন, ‘আজিম ও মোক্তারকে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। অন্য কেউ এই ফল চাষ করতে আগ্রহী হলে তাদেরও কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।