শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ অপরাহ্ন
রুহুল আমীন খন্দকার- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব নিয়মিত জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, মাদক, অস্ত্রধারী অপরাধী, ভেজাল পণ্য, ছিনতাইকারীসহ ধর্ষণ ও অপহরণের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সিপিসি-২, নাটোর ক্যাম্প, র্যাব-৫, রাজশাহীর একটি অপারেশন দল ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং তারিখ ১৬.০৫ ঘটিকায় গোয়েন্দা তথ্য ও বিশেষ প্রযুক্তির ভিত্তিতে কোম্পানী অধিনায়ক, মেজর, আশিকুর রহমান ও কোম্পানী উপ-অধিনায়ক, সহকারি পুলিশ সুপার, মোঃ নুরল হুদা এবং মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন, সিপিসি- ৩, যশোর, র্যাব- ৬ গণের নেতৃত্বে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযান চলাকালীন সময়ে সাতক্ষীরা জেলার কলোরোয়া থানাধীন সীমান্তবর্তী সোনাবাড়িয়া এলাকা হতে নাটোর সদর থানার মামলা নং- ২৪, তারিখঃ ১০/০৯/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭/৩০ এর অপহৃত ভিকটিমকে মামলা রুজুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
ওই সময় অপহরণ চক্রের মুলহোতা ১। মোঃ শাহজাহান (৩০), পিতা- মোঃ সোবহান আলী সরদার, সাং- মশ্বিমনগর, ২। মোঃ কবির হোসেন (৩৮), পিতা- মোঃ কাদের সরদার, সাং- শ্যামপুর, ৫-নং ওয়ার্ড, উভয় থানা- মনিরামপুর, জেলা- যশোর দ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়। ভিকটিমের ভারতীয় রুপীসহ যথাক্রমে, (ক) স্বর্ণের ০১ জোড়া বালা, (খ) ০১ টি স্বর্ণের চেইন, (গ) ০১ জোড়া রুপার নুপুর ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ- যে, মামলার ভিকটিম একজন বিবাহিত নারী। ৭ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে ভিকটিমের সাথে নাটোর সদর থানাধীন জনৈক ওয়াসিম আকরাম এর বিয়ে হয়। গত ০২ মাস পূর্বে ভিকটিমের সাথে অপহরণ চক্রের মূলহোতা মোঃ শাহজাহান (৩০) এর সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার পর থেকেই মোঃ শাহজাহান (৩০) ভিকটিমকে ভাল বেতনে চাকুরীসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখাতো। মোঃ শাহজাহান (৩০) ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কৌশলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করার উদ্দেশ্যে গত ইং-০৯/০৯/২০২৩ তারিখ বেলা অনুমান ০১.৩০ ঘটিকায় মামলার ভিকটিম বাজার যাওয়ার জন্য বাড়ী হতে বের হলে আসামী সিএনজিযোগে ভিকটিমকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
উক্ত বিষয়ে ভিকটিমের স্বামী ওয়াসিম আকরাম(২৮) বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। অপহরণের পর থেকেই র্যাব ৫ ভিকটিম উদ্ধার এবং আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করেন।
র্যাব ৫ এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামী এবং ভিকটিমের অবস্থান যশোরের সনাক্ত করার পর র্যাব-৬, যশোর ক্যাম্পকে অবহিত করে। পরবর্তীতে র্যাব-৫ ও র্যাব-৬ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা জেলার কলোরোয়া থানাধীন সীমান্তবর্তী সোনাবাড়িয়া এলাকা হতে অপহৃত ভিকটিম মামলা রুজুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে উদ্ধারসহ অপহরণ চক্রের মুলহোতা ১। মোঃ শাহজাহান(৩০) ও ২। মোঃ কবির হোসেন(৩৮) দ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ শাহজাহান(৩০) কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ছোট থাকা অবস্থায় তার মা তাকে নিয়ে ভারতে চলে যায়। পরবর্তীতে গত ৬ বছর আগে সে আবারো বাংলাদেশে আসে এবং যশোর মনিরামপুরের তার বাবা সোবহান আলীর কাছে থাকে। মূলত সে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে এবং সেই মেয়েদের ভারতে পাচার করে মোটা অংকের টাকা আয় করে থাকে।
এই কাজে তাকে তার বোন জামাই (সহযোগী আসামী) মোঃ কবির হোসেন(৩৮) সহ আরো অনেকেই সহযোগীতা করে থাকে বলেও জানা যায়। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ শাহজাহান(৩০) এর ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশেরই নাগরিকতা থাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি উক্ত কাজ করা সহজ ছিল।
উপরোক্ত ঘটনায় উদ্ধারকৃত ভিকটিম ও অপহরণ চক্রের মুলহোতা ১। মোঃ শাহজাহান(৩০) ও ২। মোঃ কবির হোসেন(৩৮) দ্বয়কে নাটোর জেলার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত ঘটনায় র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর বিরতিহীন চলমান অভিযানে সিপিএসসি, র্যাব-৫, নাটোরের চলমান অভিযানে নাটোরের অপহরণ মামলার ভিকটিমকে ভারতে পাচার কালে উদ্ধার, ২ অপহরনকারীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের বিষয়টি আজ মঙ্গলবার ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ইং সিপিসি র্যাব-৫, কতৃক ই-মেইল যোগে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই গণমাধ্যম কর্মীকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই র্যাবের পক্ষ থেকে অপরাধীদের কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে জানানো হয়, দেশের সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলা বজায়ের লক্ষ্যে অবৈধ অস্ত্র-মাদকদ্রব্য উদ্ধার থেকে শুরু করে সকল প্রকার অরাজকতাকে রুখে দিতে র্যাব বদ্ধপরিকর। এ ছাড়াও র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের জিরো টলারেন্স ঘোষণার পাশাপাশি সর্বপ্রকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান গুলো চলমান থাকবে।