রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন
আবীর আকাশ- লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
“এমন একটা কার্ড বানাই দিছে এইডা কোন কাজেই লাগে না। যেই জায়গাতই নেই হেইয়ানেই কয় এইডা জাল। ইস্কুলে মাইয়া ভর্ভি করছি, উপভিত্তির টিয়্যা দিবো, হেডস্যারে কইছে এইডা দিয়ে ওইতো’ন। পাচঁ বছর বয়সে ছেলের জন্মনিবন্ধন করছি, এ্যাহন তার বয়স তের, স্কুল মাদরাসা কোথাও ভর্তি করতে পারি না।” সন্তানের জন্মনিবন্ধন কার্ডের কারনে ভোগান্তির শিকার মা নিলুফা বেগম বুকভরা হতাশার আকুতি।
গ্রাম পুলিশ হোসেন আলী, সাবেক এক ইউপি সদস্যের সহযোগীতায় এমন শত শত জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই জাল-জালিয়াত চক্রের ফাঁদে পড়ে বহু পরিবারের ছেলে মেয়েদের জীবন অন্ধকারে। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়েছে অনেক কমল মতি শিশু। অনেকেই করোনা টিকা, জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসর্পোট এর মত রাষ্ট্রিয় সুযোগ সুবিধা এবং গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ওই এলাকায় এমন জম্ম নিবন্ধন সনদ এখন হোসেন আলী কার্ড নামে পরিচিতি পেয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, এই চক্রের সহযোগী হিসেবে রয়েছে স্থানীয় একজন কম্পিউটার দোকানদার। অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ হোসেন আলী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর চর রমনী মোহন (বালুরচর) গ্রামের দীল মোহাম্মদ গোলদারের এর ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চর রমনী মোহন ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড়ে বাসিন্দা হাওলাদার বাড়ির দুলাল হাওলাদার এর ছেলে সাগর(১৪) ও মেয়ে মুক্তা(১১), বন্দুকশী বাড়ির ফজল হক এর ছেলে মো. আরিফ হোসেন(১০), বাসার এর মেয়ে ফাহিমা(১৫) ও কুলসুমা(১০) আব্দুল হামিদ এর ছেলে রেহান উদ্দিন(২৯), ও নুরুল ইসলাম নাহিদ(১৩), খলিফা বাড়ির জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রবিন খলিফা(৭), সাইফুল ইসলাম এর মেয়ে সাদিয়া আক্তার(৭) মৃতঃ আহাম্মদ উল্যা এর মেয়ে ফাহিমা আক্তার(২৩), ব্যাপারী বাড়ির সাহাবুদ্দীন বেপারী এর মেয়ে শাহাজাদী(২৪), জয়নাল মিয়ার মেয়ে নারগিছ(৯), হামিদ পাঠান বাড়ির মহসিন আলীর মেয়ে সালমা(১৮) আফসানা(১৫) সাদিয়া(১১), শাহজান এর ছেলে ইউসুফ(১১), মেয়ে কুলসুমা(৮) ও ফাতেমা(৪), সর্দার বাড়ির আবু সায়েদ এর ছেলে দুলাল(৮) মফিজ সর্দারের মেয়ে সুমি(৭) ও সৌরভী(৩) সহ শত শত ব্যক্তির জম্ম নিবন্ধন করতে কাগজপত্র ও টাকা দেন গ্রাম পুলিশ হোসেন আলীকে। তিনি জনপ্রতি পাঁচশ থেকে একহাজার টাকা নিয়ে জম্ম নিবন্ধন সনদ করে দেয়। এসব সনদে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জাল স্বাক্ষরও রয়েছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন থেকে ১নং ওয়ার্ডের হোসেন আলী চৌকিদারের বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এবিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা পাওয়া গেছে। এই ভূয়া ও জাল জন্ম নিবন্ধন সনদের করেণে আামার এলাকার ছেলে মেয়েরা স্কুলে ভর্তি হতে পারেনা। সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে অনেকেই। ১৮ বছরে অনেক ছেলে-মেয়েরা চাকুরি করতে পারেনা। শাসন করতে পারি কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার কোন এখতিয়ার নেই আমার। ইউএও মহোদয়কে বিষটি জানিয়েছি। দেখা যাক তিনি কি ব্যবস্থা নেয়।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ হোসেন আলী বলেন, আমি কিছু লোক কে জম্ম নিবন্ধন করে দিয়েছি সত্য। কাউকে জাল জম্ম নিবন্ধন করে দেয়নি। আমাদের মেম্বার খালেক গোলদার এসব বিষয়ে অবগত আছেন।