বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
একটা ঈদ আইল এ্যাকনা চাউলো দেইলনা গোস্তের জন্যে সকাল থাকি বসি আচং তাও দেইল না। এ্যাকটা বিদুয়া (বিধবা) বেটিক নিয়া কতো কষ্টে থাকং মুই, কিন্তুক নিম্বর চেয়ারম্যান মোরপাকে একনাও দ্যাকে না। এবার কি ভোট বুলি জাবান্নায়?
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে (৮ জুন) রবিবার রংপুরের পীরগাছায় ইসলামিক রিলিফের গরুর মাংস বিতরণের অনিয়ম সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহে গেলে, উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত্বরে মাংস বিতরণকালে ইউনিয়নের হাসনা গ্রামের বাসিন্দা বিধবা বৃদ্ধা আসমা বেগম (৬৫) এ কথাগুলো বলেন।
জানা যায় পবিত্র আজহা ২০২৫ উপলক্ষে ঈদের দ্বিতীয় দিনে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ, পীরগাছা উপজেলায় ১২২৫ জন হতদরিদ্রদের মাঝে ২ কেজি করে মোট ২৪৫০ কেজি গরুর মাংস বিতরণের জন্য ৩৫ টি গরু কোরবানি করেছে সংস্থাটি। তবে অধিকারভোগীদের তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সংস্থাটির পীরগাছা উপজেলা ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের তালিকা করতে কোন অনিয়ম হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে আমরা কাজ করি, তাদেরও কিছু তালিকা নিয়ে মাংস বিতরণ করা হয়। যেমন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ডিমান্ড ১০০ জন, দুই ইউনিয়নের ২ চেয়ারম্যান ও মেম্বার মিলে ১২০ জন, এছাড়াও ইউএনও অফিসের কিছু সরকারি কর্মচারী ও সাংবাদিকদের জন্যেও বাজেট আছে।
সুবিধাভোগীর তালিকা করণে দায়িত্বশীলরা স্বজনপ্রীতির মধ্য দিয়ে লোক দেখানোর নামে স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই না ওই সংস্থায় কর্মরত ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির প্রতিজন তাদের পছন্দমত তিনজন করে ভিআইপি ব্যক্তিকে তালিকাভূক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সংস্থাটি হতদরিদ্র সদস্যদের তালিকা করতে গিয়ে পীরগাছার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমূল হক সুমনকে দিতে হয়েছে ২০০ কেজি। ইটাকুমারী ও অন্নদানগর ইউনিয়ন পরিষদের দুই চেয়ারম্যানের জন্য ২৪০ কেজি, সাংবাদিকদের জন্য ৪০ কেজি। সবমিলিয়ে মাষ্টার রোলের বাইরে প্রায় ৫০০ কেজি মাংস কয়েকজন ব্যক্তির হাতে দিয়েছে সংস্থাটি।
এভাবে বিতরণ করায় প্রকৃতি গরিব কর্মঅক্ষম অসহায় হতদরিদ্রদের স্থলে সরকারি, বে-সরকারি চাকুরিজীবি, সম্পদশালী, ব্যবসায়ী, ছাত্র, ইউপি সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা সুবিধা ভোগ করেছেন।
সরেজমিনে গেলে ইটাকুমারি ইউনিয়নের হাসনা গ্রামের বাসিন্দা মো. বাচ্চা মিয়া (৭০) মোছা. জোলেখা বেগম (৫০) নুর নাহার (৪০) সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গরীব মানুষ ঈদে কোন মাংস কিনতে পারিনি। খুব সকাল থেকে একটু মাংসের জন্য অপেক্ষা করছি, আমাদের সামনে অনেক বড়লোকদেরকে মাংস দিলেও আমাদেরকে দেয়নি। তারা আরও বলেন, তাদের এলাকার কোন মানুষকে সংস্থার কোরবানির মাংস দেয়া হয়নি।
অন্নদানগর ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসক আক্তার ফারুক জানান, আমার নামে একটিও কোটা নেই। আমি কেন হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দের মাংস নিব? গরু জবাই করার কারণে পরিষদে যাই নি।
ইটাকুমারি ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসক এনামুল হককে ফোনে পাওয়া না গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন আমি নিজে ওদের উপকারভোগীর মধ্যে যারা সনাতন পরিবারের আছে তাদের পরিবর্তে বঞ্চিত ওয়াড গুলোয় আমি উদ্যোগ নিয়ে তাদেরকে দেওয়ার জন্য বলেছি।
ইসলামিক রিলিফ সংস্থার পীরগাছা ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম বলেন, গরুর মাংস মূলত আমাদের সুবিধাভোগী সদস্যদের মাঝে বিতরণের নিয়ম। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ অন্যদেরকে সম্মানি দিতে হয়।
মাংস বিতরণে অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে মাস্টাররোল দেখতে চাইলে তারিকুল ইসলাম দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তিনি কাউনিয়া-পীরগাছার অফিসার ইনচার্জ শাহাজাদা মোহাম্মদ শরীফ অন্নদানগর ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত্বরে হয়ে বিভিন্ন ধরণের গালগল্প করলেও তিনি মাস্টাররোল দিতে অস্বীকার করেন।