বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
অভিনব কায়দায় রোগীদের সাথে প্রতারনা করছে সিরাজগঞ্জের সেন্টার প্যাথলজী। প্যাথলজী বিভাগের কাজ হচ্ছে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুয়াযী পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রির্পোট প্রদান করা।
রির্পোট রোগী হাতে পেয়ে পুনরায় ডাক্তারের সরনাপন্ন হয়ে ডাক্তারের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করবে। কিন্তু সিরাজগঞ্জের আই আই কলেজ রোডে অবস্থিত সেন্টার প্যাথলজীতে ঘটে ব্যতিক্রম ঘটনা।
আজ ৫ই জুন ২০২৩ইং তারিখে এনায়েতপুর থানার ধুকুরিয়া গ্রামের মৃত মজিবরের পুত্র আব্দুল মজিদ সকাল ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের বর্হিবিভাগে সেবা নিতে আসেন। দালালদের খপ্পরে পড়ে চলে যান সেন্টার প্যাথলজীতে।
সেন্টার প্যাথলজীতে প্রতারিত হয়ে হাসপাতালের সামনে এসে হাওমাও করে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করতে থাকেন।
ভুক্তভোগী মজিদ বলেন- দালালদের খপ্পরে আমি সেন্টার প্যাথলজীতে টেস্ট করতে যায়। সেন্টার প্যাথলজীর টেস্ট সদর হাসপাতালের দেখবে না। আমাকে আবার নতুন করে টেস্ট করে নিয়ে আসতে বলেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়- সেন্টার প্যাথলজী ভবনে নেই কোন নিজস্ব হসপিটাল। তাই সেন্টার প্যাথলজী সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের বর্হিবিভাগের সময়সূচির সাথে তাল মিলিয়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা রাখে। সকাল ৯টা বাজার সাথে সাথে সেন্টার প্যাথলজীর মোল্লা, লাবু, শহিদুল, হাকিমসহ ১০/১৫ জন দালাল সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের বর্হিবিভাগের বিভিন্ন রুমের সামনে অবস্থান নেয়।
ডাক্তার আসা দেরি, চেম্বারের রোগীদের ভীড়ের সময় দালালরা গ্রামের সহজ সরল রোগীদের বলে বেড়ায়, আজ ডাক্তার আসবে না, অমুক চেম্বারে বসবে, চলেন আপনার পছন্দের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। দালালদের চিহ্নিত রিকসাওয়ালা শাহালম, গহের আলী, মুন্নাফ এর রিকসায় উঠিয়ে দালালরা রিকসাওয়ালাকে বলে, অমুক ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যাবে, এটা আমার রোগী, ১০ টাকার বেশি ভাড়া নিবে না।
অমুক ডাক্তারের নাম বলে রিকসাওয়ালারা সেন্টার প্যাথলজীতে নিয়ে যায়। তখন চলে সেন্টার প্যাথলজীর কর্মচারীদের দিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারনা। টিকিট কাউন্টারেই ম্যানেজার নিজেই রোগী দেখে ১০-১২টি টেস্ট প্রদান করেন। আগে টেস্ট করেন পরে ডাক্তার আপনাকে দেখবেন। প্রাথমিক টেষ্টে প্রায় ১৫’শ থেকে ৩ হাজার হাতিয়ে নেয়।
টেষ্ট করার পর রির্পোট প্রদান করে ডাক্তার দেখানোর নাম করে ডিএমপি পদধারী এরশাদ ও ইসমত আরা নুপুরের নিকট পাঠিয়ে দেয়। ডিএমপি পদধারী এরশাদ ও নুপুর ডাক্তার ইমরুল কায়েস হিমেল এর প্যাড ব্যবহার করে রোগীদের প্রেসক্রিপশন করে থাকে। ডিএমপি পদধারী দুইজনের ফি ২’শ থেকে ৩’শ টাকা গ্রহন করে রোগীকে বিদায় করে দেয়।
এদিকে স্বেচ্ছায় কোন রোগী সেন্টার প্যাথলজী পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে সেই রির্পোট সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের কোন ডাক্তার গ্রহন না করে পুনরায় অন্য প্যাথলজীতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রির্পোট নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।
আজ ৫ই জুন ২০২৩ইং তারিখে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- সেন্টর প্যাথলজীর পরিচালক সাহেব আলী, দেব দুলাল ও সোহেল ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে। সেন্টার প্যাথলজীর প্যাডে প্রায় ৬০টি টেস্টের নাম উল্লেখ থাকলে ৩টি টেস্ট যন্ত্রপাতির দেখা মিলে।
সেন্টার প্যাথলজীর সমগ্র ভবনে ৬০টি টেস্টের যন্ত্রপাতি হিসেবে সেল কাউন্টার মেশিন, সেমি অটো এ্যানালাইজার মেশিন ও হরমোন মেশিন দেখতে পাওয়া যায়। তবে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন দেখা মিললেও তা সর্ম্পূন নষ্ট বলে জানা গেছে। আর যে মেশিন গুলো আছে তা দিয়ে তেমন কোন টেষ্ট করা হয় না। আর কেমিক্যাল ছাড়া ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা করে।
কেমিক্যাল ছাড়া ডিভাইসের মাধ্যমে ডিভাইস দিয়ে যে পরীক্ষা করে তা সঠিক রোগ নির্ণয় করা যায় না বলে জানা যায়। এই ৩ যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন শামীম, সাচ্চু ও রাসেল নামে ৩ ব্যক্তি। কিন্তু এই ব্যক্তির নেই কোন ল্যাব প্যাথলজীর প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ জাহিদুল ইসলাম হীরা বলেন- হাসপাতালে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। পূর্বে সেন্টার প্যাথলজীর লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছিল। রোগীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।