শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন
মাসুদ রানা- সিরাজগঞ্জে জেলা প্রতিনিধিঃ
মোহাম্মদ নাসিম তার বাবা মনসুর আলীর মতোই সাহসী ও নির্ভীক। কোনোদিন অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেনি তিনি ছিলেন এক জন আপসহীন নেতা। বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার হত্যাকাণ্ডের পর অনেক জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাকে।
তার চলে যাওয়া শুধু দলই নয়, সিরাজগঞ্জ তথা উত্তর বঙ্গের একজন অভিভাবক হারিয়েছি।
সোমবার ১৩ই জুন বেলা ১১টায় তার জন্মভূমি কুড়িপাড়া আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিম মডেল কলেজের উদ্যোগে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
উক্ত কলেজের সভাপতি গোলাম রাব্বানী তালুকদারের সভাপতিত্বে, রতন কান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেনের পরিচালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন- কুড়িপাড়া আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিম মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ কামরুল ইসলাম।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন- রতনকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম জুড়ান সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব, ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, বাগবাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী আমজাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও উক্ত কলেজের শিক্ষক এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী।
অধ্যক্ষ কামরুল হাসান বলেন- মোহাম্মদ নাসিম পিতার পুত্র হিসেবে নেতা হয়নি। ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীর সন্তান হিসেবে তিনি নেতা হয়নি।
তিনি কর্মী থেকে নেতা হয়েছেন। ছাত্রলীগ করেছেন, ছাত্র রাজনীতি করেছেন বিভিন্ন লড়াইয়ের মধ্যে নেতা হয়েছেন।দলের পক্ষে আদর্শের পক্ষে সংগ্রাম করে তিনি তরুণ বয়সে কারাগারে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার হত্যাকাণ্ডের পর অনেক জেল-জুলুম, নির্যাতন তাকে সহ্য করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুহীন আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে তার অসামান্য অবদান ছিল।
যখন তিনি জাতীয় নেতার আসনে আসীন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তখন তিনি অনুজদের প্রতিও ভালো আচরণ করতেন। তিনি সব নেতাকর্মীকে আপন করে নিতেন।এ গুণ সব নেতার মধ্যে থাকে না। অনুজদের সম্মান করে কথা বলতেন।
তিনি বলেন- মোহাম্মদ নাসিম অনেক বড় নেতা ছিলেন, তারচেও বড় কথা তিনি তার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সন্তান ছিলেন। কিন্তু তার আচার-আচরণে কেউ বলতে পারবে না এত বড় নেতার ছেলে ছিলেন- বা তিনি এত বড় নেতা, তার আচার আচরণে এটা কখনও ফুটে উঠতো না।
সবাইকে আপন করে নেওয়ার অসামান্য গুণ তার মধ্যে ছিল। কর্মীদের খোঁজ-খবর নেওয়া একজন নেতার গুণ থাকা দরকার, এটা তার মধ্যে ছিল, তিনি সবার খোঁজ-খবর নিতেন।
তিনি ১৪ দলের সমন্বয়ক হিসেবে ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে ১৪ দলকে আওয়ামী লীগের পাশে রাখা অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষের পেশাজীবী সংগঠনে সুসংগঠিত করে আওয়ামী লীগের পক্ষে দাঁড় করাতে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি করোনার মধ্যে মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
নাসিম সাহেবের মতো একজন নেতার চলে যাওয়ায় শুধু আমাদের দলের জন্য নয়, দেশের রাজনীতির জন্যও ক্ষতি হয়েছে।
তার অন্যতম গুণ ছিল অন্য দলের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখা। একেবারে কট্টর বিরোধীদের সঙ্গেও তিনি সুসম্পর্ক রাখতেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম জুড়ান বলেন- সে ছিল নেতা তৈরির কারিগর মোহাম্মদ নাসিম, তিনি ছিলেন রাজনৈতিক শিক্ষক।
আন্দোলন সংগ্রাম কীভাবে গড়ে তুলতে হয়, তার প্রধান সেনাপতি ছিলেন তিনি।
চরম নির্যাতনের মুখেও তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঈমানি করেননি। একদিকে রাজনীতি অন্যদিকে মন্ত্রণালয়-দুটি ক্ষেত্রেই দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন মোহাম্মদ নাসিম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা ইতিহাসে লেখা থাকবে।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি গোলাম রাব্বানী তালুকদার তার সমাপনী বক্তব্য বলেন- সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। অসাম্প্রদায়িক সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার অঙ্গীকার থেকে কখনো বিচ্যুত হননি তিনি। সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিমের ভূমিকা রাজনৈতিক কর্মীদের সাহসী ও অনুপ্রাণিত করবে।
শত প্রতিকূলতার মাঝেও আন্দোলন সংগ্রামে তিনি কখনো পিছু হটেননি। নিজে পিট পেতে দিয়ে কর্মীদের পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু কর্মীদের গায়ে আচর লাগতে দেননি। সত্যিকারের জননেতা বলতে যে যে গুণ থাকা দরকার মোহাম্মদ নাসিমের মধ্যে সব ছিল।
তিনি চাইতেন সবসময় নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে। সে কারণে আওয়ামী লীগের সবোর্চ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য হয়েও কেন্দ্রীয় ১৪ দল এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি, পেশাজীবী, কর্মীদের একত্রিত করতেন।
তিনি আরও বলেন- দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় একটি ক্ষমতা কেন্দ্রীক বলয় গড়ে উঠেছে। এই বলয়ে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীদের কাছে আসতে পারেন না।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে নাসিম সাহেব ছিলেন ব্যতিক্রম। পুরানো ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতেন। আলোচনা শেষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও তোবারক বিতরণ করেন।