শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন
নাসির উদ্দিন শাহ্- নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ
অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আন্তঃদেশীয় মিতালি এক্সপ্রেস চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। দুই দেশের রেলমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা ১৫ মিনিট আগেই যাত্রার অভিষেকের সূচনা করেন।
বুধবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত চিলাহাটির ডাঙ্গাপাড়া এলাকা দিয়ে হুইসেল বাজিয়ে নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশনে ১০টি বগি নিয়ে ছুঁটে আসে যাত্রীবাহী আন্ত:দেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এই ট্রেনের প্রথম যাত্রী সংখ্যা ছিল ১৮ জন। এর মধ্যে ৫ জন ভারতীয় বাকীরা বাংলাদেশী। চিলাহাটি রেল ষ্টেশনে ৩৫ মিনিট বিরতির পর ২টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। দীর্ঘ ৫৭ বছর পর বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি রেলপথে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় আনন্দের বন্যায় ভাসছে এ অঞ্চলের মানুষ।
সকালে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ও ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ভার্চুয়ালি ট্রেনটির উদ্বোধন করেন। এরপর ভারতের সময় সকাল সাড়ে নয় টায় দিকে নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন থেকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ২টা ১০ মিনিটে চিলাহাটী রেলষ্টেশনে এসে থামে।
এসময় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটির চালক, পরিচালক ও যাত্রীদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চলের মহা-ব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদার ও নীলফামারীর ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমিজ আলম। এরপর ভারতীয় ইঞ্জিন পরিবর্তন করে লাগালো হয় বাংলাদেশের একটি ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটি আগে থেকে রঙ্গিন কাগজ, বেলুন, ফেষ্টুনসহ নানা রংগে সাজিয়ে রাখা ছিল চিলাহাটি রেলষ্টেশনে। বিভিন্ন আনুষ্টানিকতা শেষে চিলাহাটি রেল ষ্টেশন থেকে ২টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা ক্যান্টমেন্ট রেল ষ্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে আসা মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে চালক হিসেবে ছিলেন- বিবেকবান চৌধুরী, সহকারী চালক বাকসান কুমার, পরিচালক (গার্ড) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কৌশিক ঘোষ। আর চিলাহাটি থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ইঞ্জিনে চালক হিসেবে ছিলেন শহীদুল ইসলাম, সহকারী চালক হাসান ইমান, পরিচালক (গার্ড) হিসেবে বিএম শহিদুল ইসলাম ও সহকারি পরিচালক শাহাজাহান আলী। মিতালী এক্সপ্রেসে ১০টি বগির মধ্যে ছিল ৪টি এসি বাথ বগি, ৪টি এসি চেয়ার বগি, ১টি পাওয়ার ও ১টি ব্রেকভ্যান বগি।
ভারতের ইঞ্জিনের চালক ও পরিচালক (গার্ড)সহ ইঞ্জিনটি চিলাহাটি রেলষ্টেশনে অবস্থান করবেন। মিলাতী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ফিরে চিলাহাটিতে এলে পুনরায় সেই ইঞ্জিন লাগিয়ে তারা ভারতে উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে মিতালী এক্সপ্রেসকে দেখতে সকাল থেকে অসংখ্যক মানুষ ভিড় জমান চিলাহাটি রেল ষ্টেশনে। এমনকি পাশ্ববর্তী পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন উপজেলার মানুষও আসেন এই ট্রেনকে দেখতে। চিলাহাটি রেল ষ্টেশনের মাষ্টার ময়নুল হক জানান বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষজন আসা শুরু করেন এবং দুপুরের পর ষ্টেশন ও এর আশপাশের এলাকা কানায় কানায় ভরে যায় মানুষে।
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমিজ আলম জানান মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হওয়ায় মানুষের আত্ম-সামাজিক অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।
উল্লেখ্য যে- ১৯৪৭ইং সালের ভারতের স্বাধীনতার আগে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি দিয়ে সরাসরি কলকাতার রেল যোগাযোগ চালু ছিল। ১৯৬৫ইং সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ইং সালের ১৭ই ডিসেম্বের বাংলাদেশ-ভারত মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলাচলের ভার্চুয়াল উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সে সময় যাত্রীবাহি ট্রেনটির চলাচল করা সম্ভব না হলেও এই রুটে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়।