বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
মুন্না শরীফ- মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুরে চাঞ্চল্যকর দাদন হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে আসামীরা হত্যা মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের বিরোদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে মূল মামলাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩টি মামলা মাথায় নিয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে নিহত দাদনের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও স্বাক্ষীরা। অন্যদিকে সন্ত্রাসীরা দাদন চোকদারকে হত্যা করে তার একটি পা কেটে নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রায় ৫ মাস হলেও কাটা পা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে হত্যা মামলার পুলিশ ৯আসামীকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামী এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে- ২০২১ইং সালের ২৩শে নভেম্বর শিবচর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব শ্যামাইল গ্রামের দাদন চোকদার শিবচর বাজার থেকে অটোতে বাড়ি ফিরছিল। তিনি একই গ্রামের সেলিম শেখের বাড়ির সামনে আসলে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্বশত্রম্নতার জের ধরে সেলিম শেখসহ ১০/১৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতারী কুপিয়ে দাদন চোকদারের শরীর থেকে বাম পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে গুরম্নতর আহত করে। মূমূর্ষ অবস্থায় তাকে প্রথমে শিবচর ও পরে ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃতু্য হয়। পরদিন ২৪শে নভেম্বর নিহতের ভাই পান্নু চোকদার বাদী হয়ে ২৮ জনকে আসামী করে শিবচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। হত্যাকান্ডের প্রায় দুই সপ্তাহ পর গত ৮ই ডিসেম্বর রাতে ঢাকার কাপ্তান বাজার থেকে এজাহারভুক্ত আসামী আরমান শেখকে শিবচর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে জেলা হাজতে প্রেরন করে। এর মধ্যে মামলা হস্তান্তর হয় সিআইডিতে।
গত ২৬শে জানুয়ারী নারায়নগঞ্জের ফতুলস্না থেকে দাদন হত্যা মামলার আরেক আসামী মিরাজুল শেখকে সিআইডি গ্রেফতার করে। গত ৮ মার্চ হত্যা মামলার আসামী পটু ফকির ও কামাল সরদার মাদারীপুর আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালতের নির্দেশে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়। গত ৪ এপ্রিল এজাহারভুক্ত আসামী সূর্য্য শেখ, সেলিম শেখ, মোহসিন মুন্সি, রাকিব শেখ ও খোকন শেখসহ ৫ জন মাদারীপুর আদালতে আত্মসমর্থন করলে আদালতের নির্দেশে তাদেরকেও জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। হত্যা মামলার মোট ৯ আসামী জেল হাজতে থাকলেও মূল আসামী নজরম্নল শেখসহ বাকি আসামীরা এখনো রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এদিকে হত্যার প্রায় ৫ মাস হলেও পুলিশ এখনো উদ্ধার করতেও পারেনি নিহত দাদনের কেটে নেয়া পা।
এদিকে হত্যা মামলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে হত্যা মামলার আসামীরা হত্যাকান্ডের প্রায় পনের দিন পর ৭ই ডিসেম্বর দাদন হত্যা মামলার আসামী ফয়জল ফকির পটুর স্ত্রী হেনু বেগম বাদী হয়ে নিহত দাদনের ছোট ভাই হত্যা মামলার বাদী পান্নু চোকদার ও সাক্ষীসহ ৩৫ জনকে আসামী করে মাদারীপুর আদালতে ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের একটি মামলা দায়ের করে। চলতি বছরের ৪ঠা জানুয়ারী দাদন হত্যা মামলার ১নং আসামী নজরম্নল শেখের চাচা মোঃ আবুল শেখ বাদী হয়ে দাদন হত্যা মামলার আসামী আবু তালেব আকন, মোহাম্মদ বেপারীসহ নিকট আত্মীয় য় ১০ জনের নামে মাদারীপুর আদালতে ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের আরেকটি মামলা দায়ের করে।
গত ১৯শে জানুয়ারী দাদন হত্যা মামলার ১নং আসামী নজরম্নল শেখের চাচী রসনা বেগম বাদী হয়ে দাদন হত্যা মামলার বাদী নিহত দাদনের ছোট ভাই পান্নু চোকদার, বাদীর ছেলে বিপস্নব চোকদার, আসামী আবু তালেব আকন, মোহাম্মদ বেপারী, খালেক কাজীসহ নিকট আত্মীয় ৩৫ জনকে আসামী করে মাদারীপুর আদালতে আরো একটি ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের মামলা দায়ের করে। এছাড়াও ২০ ফেব্রুয়ারী দাদন হত্যা মামলার বাদী ও আসামীদের বিরোদ্ধে আরেকটি মামলা করেছে আসামীপক্ষ।
দাদন হত্যা মামলার আসামী মোহাম্মদ বেপারী বলেন- “হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে আসামীরা আমাদের বিরোদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। মামলা তুলে নিতে আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা প্রভাবশালী ও বিত্তশালী হওয়ায় আমরা খুব আতংকে আছি। আমরা আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগীতা কামনা করি।
নিহত দাদনের ছোট ভাই হত্যা মামলার বাদী পান্নু চোকদার বলেন- আমার ভাইকে ওরা নৃশংসভাবে হত্যা করলো। আবার আমাদের বিরোদ্ধেই একের পর এক ৪টি মিথ্যা মামলা দিলো। এখন মামলা মাথায় নিয়ে আমরাই পালিয়ে বেড়াচ্ছি। মামলা তুলে নিতে ওরা আমাদের বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এতদিনেও পুলিশ আমার ভাইয়ের কেটে নেয়া পা উদ্ধার করতে পারেনি।
মাদারীপুর সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মোঃ আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন- “দাদন চোকদার হত্যাকান্ড আমাদের কাছে একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড মনে হয়েছে। আমরা বেশ কয়েকজন আসামীকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে মামলাটি সিআইডির হাতে রয়েছে। এই হত্যাকান্ডের পরবর্তীতে আসামীদের বাড়িতে যেন কোন হামলার ঘটনা না ঘটে সেজন্য দীর্ঘদিন আমাদের পুলিশ বাহিনী এলাকায় পাহারায় ছিল। তারপরও হত্যা মামলার বাদীদের বিরোদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেগুলো তদন্ত করে দেখা হবে।