বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন
আবীর আকাশ- লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মাদ্রাসায় চলে যাওয়ায় সরকারি প্রাইমারি স্কুলে দিনকে দিন শিক্ষার্থী হ্রাস পাচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অফিসের জেলা কর্মমকর্তা এমনই দাবী করেন। একই রকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদেররও। আর এতে তাদের উদ্বিগ্নতা বেড়েই চলছে। তারা বলছেন, জোর করে ডিমোটিভেট করে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে কত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বা হচ্ছে এমন কোনো পরিসংখ্যান নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপজেলা জেলা বা শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোছাঃ নুরজাহান খাতুন সাংবাদিক অ আ আবীর আকাশকে বলেন- ‘আমি কোথাও কোথাও দেখেছি, মাদ্রাসাগুলো একেবারে স্কুলের কাছে তৈরি হয়েছে। একটি জায়গার মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান। একটি স্কুল আরেকটি মাদ্রাসা। মাদ্রাসার লোকজন জোর করে ডিমোটিভেটেড করে আমাদের ছাত্রদের নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি ভাবনার।’ তিনি বলেন, যারা মাদ্রাসা থেকে পাশ করে, তারা ঐ সার্কেলের ভেতরেই থাকে। বেহেস্তে যাওয়ার জন্য তারা মাদ্রাসায় পড়তে চান। তিনি বলেন, বেহেস্তে যাওয়া এত সহজ নয়। বিষয়টি বোঝানোর জন্য তিনি শিক্ষক, অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রাইমারি ছাত্রদের মাদ্রাসায় চলে যাওয়ার বিষয়ে তথ্য পেয়েছে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিওদের মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানও। সম্প্রতি তাদের প্রকাশিত গবেষণায় বিষয়টি তুলে ধরেছে। ২০২০ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করা শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশ এমপিওভুক্ত ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। প্রায় ২১ শতাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুলে এবং এনজিও স্কুলে পড়ালেখা করে। আনুমানিক ৩ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় (কওমি, বেসরকারি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আলিয়াঘ বা সরকারের সহায়তায় পরিচালিত মাদ্রাসা) পাঠাতে পছন্দ করেন। ৩ শতাংশের অধিক শিক্ষার্থী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় স্থানান্তরিত হয়েছে।
তারা গবেষণা করে দেখিয়েছে, ২০২০ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদ্রাসায় স্থানান্তরের একটি লক্ষণীয় প্রবণতা দেখা গেছে। মাধ্যমিক স্তরের তুলনায় প্রাথমিক স্তরে এই প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি (৬.৪ শতাংশ) ছিল। শিশুরা সাধারণত মূলধারার স্কুলগুলোতে বেশি পড়ালেখা করে। যেসব শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে তাদের অভিভাবককে সন্তানের জন্য মাদ্রাসা বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অভিভাবক ধর্মীয় কারণকে প্রধান বিবেচ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এক-পঞ্চমাংশ বলেছেন, মাদ্রাসা বাড়ির নিকটে ও মহামারি চলাকালে মাদ্রাসা খোলা ছিল এবং মূলধারার স্কুলগুলো তখন বন্ধ ছিল।
মাদ্রাসার মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী বেড়েছে-
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) বলছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে গত চার বছরে ১০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী কমলেও এ সময়ে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী বেড়েছে আড়াই লাখেরও বেশি। সরকারি এই সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনা ভাইরাস মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে দেশে মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ছিল ৯২ লাখ ৩ হাজার ৪২৭ জন। চার বছর পর ২০২৩ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৮১ লাখ ৬৬ হাজার ১৮৮ জনে। অর্থাৎ চার বছরে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ২৩৯ জন শিক্ষার্থী কমেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৪ জন। ২০১৯ সালে তা ছিল ২৪ লাখ ৯১ হাজার ২৬৮ জন। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে মাদ্রাসায় ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে। খসড়া প্রতিবেদনে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে মাদ্রাসায় বাড়ার কারণ তুলে ধরা হয়নি। তবে শুধু মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী বেড়েছে তাই নয়, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে ৫ হাজার ৩৯৫টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ৭ লাখ। চার বছর আগে যা ছিল ৭ লাখের মতো।
আজিজুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, করোনার পর থেকে স্কুলে আর পড়ালেখা হয় না। প্রাইমারী স্কুলে বেশীর ভাগ শিক্ষক মহিলা হওয়াতে স্কুলে এসে তারা গল্পগুজবে মেতে থাকে, ক্লাশে বসে মোবাইল ব্যস্ত থাকাতে বাচ্চাদের প্রতি যত্ন কম। সপ্তাহে দু’এক দিন করে ক্লাস হয়, পরীক্ষাতেও পড়ার চাপ না থাকায় বাচ্চারা পড়ালেখায় অমনোযোগী হচ্ছিল। তার সমবয়সী যারা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে, সবার শ্রেণি কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। এতে সে পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়েছে। তাই স্কুল বাদ দিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি।