রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৪ অপরাহ্ন
সিরাজুল ইসলাম- ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ
সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচন আজ বুধবার (৬ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। ভোট গ্রহণ সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। একইভাবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ভোটগ্রহণ চলবে।
নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও অংশ নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেল নীল দল। অন্যদিকে, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেলের আইনজীবীরা। ভোট সুষ্ঠু হবে বলে আশাবাদী দুই প্যানেল। তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবার দৃষ্টি সর্বোচ্চ আদালতের দিকে।
নির্বাচন সংক্রান্ত উপকমিটির প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের বলেন, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের পর এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। দুদিনব্যাপী এ নির্বাচনে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষ হবে। এরপর ভোটগণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
ভোটগ্রহণের জন্য এরই মধ্যেই সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন উপ কমিটি। এরই মধ্যে সুপ্রীম কোর্ট ভবনের অডিটোরিয়ামে ৫০ বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এতে ৫০ জন ভোটার একযোগে ভোট দিতে পারবেন। এবার মোট ৭ হাজার ৮৮৩ জন ভোটার।
এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) মধ্যে। তবে, এখন অপেক্ষার পালা আইনজীবীরা কী সিদ্ধান্ত নেন।
দেশের আইনজীবীদের অন্যতম সংগঠন সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সভাপতি, সহঃ সভাপতি (দু’টি), সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সহ-সম্পাদক (দু’টি) এবং সদস্য সাতটি পদসহ মোট ১৪টি পদে একবছর মেয়াদের জন্য এই নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে বরাবরই মূলত দুটি প্যানেলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। একটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ মনোনীত প্যানেল (সাদা হিসেবে পরিচিত)। অন্যটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল হিসেবে পরিচিত)। এরই মধ্যে দুটি প্যানেলই তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এর বাইরেও বেশ কয়েকজন প্রার্থী হয়েছেন।
এর আগে গত (১১ ফেব্রুয়ারি) এক নোটিশে সমিতির দু’দিনব্যাপী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুসারে, (১২ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়। (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় নির্ধারণ ছিল।
নির্বাচনে প্রার্থী- এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন মোট ৩৩ জন। যদিও প্রতিবারের মতো নির্বাচিত হবেন ১৪ জন। যাচাই–বাছাই শেষে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
সাদা প্যানেলের প্রার্থী যারা তফসিল ঘোষণার পর গত (১৩ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল) তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হক, সহঃ সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোঃ আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহঃ সম্পাদকের দু’টি পদে মোঃ হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির (পল্লব) নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। সদস্য সাতটি পদে মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভুইয়া, মাহমুদা আফরোজ, মোঃ বেলাল হোসেন, খালেদ মোশাররফ, মোঃ রায়হান রনি, সৌমিত্র সরদার ও রাশেদুল হক খোকন প্রার্থী হয়েছেন।
নীল প্যানেলের প্রার্থী যারা গত (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল হিসেবে পরিচিত) প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন), সম্পাদক পদে মোঃ রুহুল কুদ্দুস, সহঃ সভাপতি পদে মোঃ হুমায়ুন কবির ও সরকার তাহমিনা বেগম, কোষাধ্যক্ষ পদে মোঃ রেজাউল করিম, সহঃ সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান ও মোঃ আব্দুল করিম প্রার্থী হয়েছেন। সদস্যের সাতটি পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহী, মোঃ শফিকুল ইসলাম শফিক, মোঃ রাসেল আহমেদ, মোঃ আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মোঃ ইব্রাহিম খলিল প্রার্থী হয়েছেন।
বিভিন্ন পদে সতন্ত্র প্রার্থী যারা দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে আরও দুজন প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন অ্যাডভোকেট মোঃ ইউনুছ আলী আকন্দ ও অ্যাডভোকেট মোঃ খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান)। সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মোঃ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভুইয়া ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। মোঃ সাইফুল ইসলাম কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হয়েছেন।
সমিতির গত (২০২৩-২৪) নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপ-কমিটির আহ্বায়ক নিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের আপত্তি এবং এর জেরে ভাঙচুর, পুলিশের পিটুনি, হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির মধ্য দিয়ে গত বছরের (১৫ ও ১৬) মার্চ ভোট হয়। অবশ্য সেই নির্বাচন আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জনের ঘোষণা না দিলেও নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি তোলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। গত বছরের (১৭ মার্চ) নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফলে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৪টি পদের সব কটিতেই জয় পান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের আইনজীবীরা।