রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন
আরিফ শেখ- অনুসন্ধানী প্রতিবেদকঃ
তারাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত জহুরুল কর্তৃক, রংপুর এ’সার্কেল অফিসে সাক্ষী দিতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়ে অভিযোগ ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী। এ’সার্কেল অফিসে কর্মরত এস্টোনো বাবুলের সহযোগিতায় সাক্ষীদের ডেকে নিয়ে ওসি তদন্ত জহুরুল হক ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মামলার হুমকি প্রদান উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুর ২টায় বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব তারাগঞ্জ উপজেলা শাখার হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগী নাজমুল ইসলাম।
তিনি জানান, চলতি বছর (১৪ জুন) ২০২৪ইং তারাগঞ্জ থানায় একটি জুয়ার মামলা হয়, মামলা নং-১৩/৮০। জব্দ তালিকায় উল্লেখ না থাকা জব্দকৃত একটি মোবাইলকে কেন্দ্র করে তারাগঞ্জ থানার এস আই আমিনুল ইসলাম ও তদন্ত ওসি জহুরুল ইসলামের নামে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন উক্ত মামলার ৩নং আসামী ইমরান। উক্ত অভিযোগে নাজমুল ইসলাম সহ ৫ জন স্বাক্ষীর নাম দেখা যায়। ইমরানের অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রমে গত (২১ আগস্ট) এ’সার্কেল অফিসে স্বাক্ষগ্রহণ ও জবানবন্দি নেয়া হয়।
কিন্তু পরের দিন (২২ আগস্ট) এ’সার্কেল অফিসের এস্টোনো বাবুল মুঠোফোনে তার পরিচয় দিয়ে, আরও কিছু কাজ বাকি আছে মর্মে (২৫ আগস্ট) এ’সার্কেল অফিসে সাক্ষীদের ডাকেন। নিয়মতান্ত্রিক তদন্তের অংশ ভেবে তারা (২৫ আগস্ট) দুপুর ১২.৩০ মিনিটে এ’সার্কেল অফিসে যায়। এরপর সাক্ষীদের দু’জন নাজমুল ও সোহেলকে এ’সার্কেল কর্মকর্তার সাথে দেখা না করিয়ে দুপুর ২টায় অন্য একটি কক্ষে ডেকে নেয় এস্টোনো বাবুল। সেই কক্ষে ঢুকে দেখতে পান তারাগঞ্জ থানার অভিযুক্ত ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম চেয়ারে বসে আছেন।
উক্ত কক্ষেই ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম সাক্ষীদ্বয়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, নাজমুল-সোহেল তোরা এখানে কেন? আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস তোরা কোথায় পেলে? তোদের একটুও কলিজা কাপল না? আমি তোদের বিরুদ্ধে মামলা করব। এজাহার লিখে এনেছি। এই নে পরে দেখ। আমি তোদের মত নিচু পরিবারের থেকে এসেছি নাকি রে, যে চাকরি না করলে চলবে না।
সাক্ষী নাজমুল ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলামকে বলেন, স্যার আপনারা মোবাইল দিচ্ছেন না বিধায় ইমরান অভিযোগ করছে। আমরা যেহেতু বিষয়টি জানি তাই আমাদের সাক্ষী করেছে। এ কথা শোনার পরপরই ওসি তদন্ত জহুরুল হক তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এক প্রকার মারমুখী আচরণ শুরু করে এবং দু’টি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে।
তথ্য মতে, নাজমুল ও অপর সাক্ষী সোহেল কোনমতে এ’সার্কেল অফিস থেকে বের হয়ে রংপুর শহরের দিকে যায়। উক্ত সময়ে এ’সার্কেল কর্মকর্তা নিজ কার্যালয়ে না থাকায় সাক্ষী নাজমুল তাহার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিষয়টি এ’সার্কেল কর্মকর্তাকে জানান। দুঃখজনক বিষয় হল, ভুক্তভোগীরা যে ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলামের হাত থেকে বাঁচার জন্য লিখিত অভিযোগ করেছে, সেখানে অভিযোগ তদন্তকারীর কার্যালয়েই ওই তদন্ত ওসির দ্বারায় সাক্ষীকে উল্টো মামলা দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি। আর কত ভোগান্তির শিকার হলে বিচার পাবে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি?
নাজমুল ইসলাম আরও জানান, ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম ও বি’সার্কেল আবু আশরাফ সিদ্দিকি একসময় একই ব্যাচের ছিল। তাই বি’সার্কেলের সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের ক্ষমতা ব্যবহার করে ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম তার অপকর্ম চালায় বলে তাদের ধারনা। গত (১৪ জুন) ২০২৪ইং তারাগঞ্জ থানায় জুয়ার মামলাটি হওয়ার সময় টাকা খেতে না পারায় ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম তার সাগরেদ এস আই আমিনুলকে দিয়ে ৩নং আসামি ইমরানের বাড়িতে পাঠিয়ে তার বাড়ি থেকে জোরপূর্বক একটি মোবাইল নিয়ে আসে। এরপর মোবাইল আটকিয়ে রেখে ঘুষ বাণিজ্যের আশায় একের পর এক কেলেংকারিতে জড়িয়ে পরে ওই মামলার আয়ু ও তদন্ত ওসি জহুরুল।
এছাড়াও জব্দকৃত মোবাইলটি সম্পর্কে না এজাহারে, না চার্জশিটে কোথাও কোন কিছু উল্লেখ নাই। বেশকিছু দিন টালবাহানায় অতিবাহিত হলে, মোবাইলটি না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর ইমরান অভিযোগ করে। উক্ত অভিযোগের তদন্ত বি’সার্কেলকে না দিয়ে এ’সার্কেলকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এদিকে এ’সার্কেল মোবাইল নিয়ে তদন্ত শুরু করলে মাথা খারাপ হয়ে যায় তদন্ত ওসির। মূলত এই কারণেই নাজমুল ও আরেক সাক্ষী সোহেলকে এভাবে মামলার হুমকি দেয় বলে তাদের দাবি। তারা ইমরানের অভিযোগের সাক্ষী বলেই নাজমুল ও সোহেল তদন্ত ওসি জহুরুলের দ্বারায় এ’সার্কেল অফিসে হেনস্তা ও মামলার হুমকির সম্মুখীন হয়েছে এমন দাবি করে, উক্ত ঘটনার ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইমরানের অভিযোগের আরেক সাক্ষী সোহেল জানান, ঘটনার দিন আমি(সোহেল) ও নাজমুলকে ধোঁকা দিয়ে এ’সার্কেল স্যারের সাথে দেখা না করিয়ে, যার ব্যাপারে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল তাকে আমাদের মুখোমুখী করে হুমকীর শিকার করান এ’সার্কেল অফিসের এসটনো বাবুল। এই বাবুলের সহযোগিতায় ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম আমাদের একটি ঘরে অপমান করে। মামলার ভয় দেখায়। আবার আমাদেরকে জোরপূর্বক আপোসোনামা পত্রে স্বাক্ষর করাতে অনেক চেষ্টা করে। সেখান থেকে আমরা কোনমতে কৌশলে বেরিয়ে আসি। আমি ওই তদন্ত ওসির দৃস্টান্তমুলক বিচার চাই।
সংবাদ সম্মেলনে পূর্বের অভিযোগকারী ও মোবাইল মালিক ইমরান জানান, বাধ্য হয়ে অনেক দিন ঘুরে, অনেক টালবাহানা দেখে বিরক্ত হয়ে, আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমার অভিযোগের সাক্ষীদের গত (২৫ আগস্ট) ডেকে নিয়ে হুমকি ধামকি দেয় ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম। পরে বিষয়টি জেনে আমরা আলোচনা করে ওই ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, জুলুমকারী, সাবেক আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডিউকের পা চাটা দালাল তদন্ত ওসি জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। আমরা আশা করছি যতো জুলুমের শিকারই হই না কেন, ন্যায় বিচার পাবো।
এ্যাডভোকেট শিপন শাহা জানান, থানায় উদ্ধার করা অথবা আসামির নিকট থেকে প্রাপ্ত বা জব্দ করা জিনিসপত্রাদি সিজার লিস্ট না করা আইনত অনৈতিক কাজ।
রংপুর এ সার্কেল হোসাইন মোঃ রায়হান বলেন, মোবাইলকে কেন্দ্র করে হওয়া অভিযোগের স্বাক্ষগ্রহণ আমি আগেই নিয়েছি। পরবর্তীতে ঠিক কি কারণে এস্টোনো বাবুল ও তদন্ত ওসি জহুরুল ওই সাক্ষীদের আমার অফিসে ডেকে এনে এমন আচরণ করেছেন তা আমি জানি না। তবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সাক্ষীর পাঠানো তথ্যে বিষয়টি অবগত হলেও দাপ্তরিক ব্যস্ততার কারণে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে পারি নাই। তবে ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার পাবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন।
রংপুর জেলার পুলিশ সুপার মোঃ শাহাজাহান খান বলেন, অভিযোগের সাক্ষীদের ডেকে মামলার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো অপেশাদারিত্ব আচরণ। ওসি তদন্ত জহুরুল যদি এমনটা করে থাকেন তবে সেটি এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ। এ ব্যাপারে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।