শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন
রবিন চৌধুরী রাসেল- রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
রংপুর গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরে গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এদিকে অনিয়মের তদন্তে এসে ভুক্তভোগী ও সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিকদের না ডেকে ঘরোয়াভাবে নির্বাহী প্রকৌশলীদের নিয়ে সভা করেই তদন্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ করার অভিযোগ উঠেছে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই রংপুর গণপূর্ত অফিসের ভিতরে ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়েরের আস্থাভাজন ঠিকাদারদের বহিরাগত সন্ত্রাসীকে পাহারা দিতে দেখা যায়। এসময় যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের কয়েক দফায় রংপুর গণপূর্ত অফিসের ভিতরে ও বাহিরে টহল দিতে দেখা যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল খায়ের যোগদানের পর থেকেই রংপুর বিভাগের আট জেলায় বড় বড় প্রজেক্টগুলোর টেন্ডারে নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেন। টেন্ডারের একাধিক কাগজ পর্যালোচনা করে দেখা যায় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ভূল তথ্য দিয়ে অনেকে কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। রংপুর বিভাগে প্রকৌশলী আবুল খায়েরের ছত্রছায়ায় ডিজিটাল টেন্ডারে কর্মকর্তারাদের সিন্ডিকেটের কারণে সরকারী অর্থের নয়ছয় করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন অনেক অসাধু কর্মকর্তারা। এভাবে অর্থের বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই কর্মকর্তা।
এদিকে রংপুর গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন নির্মাণ কাজে অনিয়মসহ বড় বড় প্রকল্পের টেন্ডার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজ প্রদানের এবং অর্থের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য দাপ্তরিক প্রাক্কলনের অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর উঠে আসার পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকতা রোববার সফরে এসে রংপুর গণপূর্ত জোনে ৮ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদান করে অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত কার্যক্রম করেন।
নিয়ম অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ভুক্তভোগী ও সংবাদ প্রকাশকারী গণমাধ্যমকর্মীদের চিঠি ইস্যু করে দাওয়াত দিয়ে তদন্ত করার নিয়ম থাকলেও শুধুমাত্র নির্বাহী প্রকৌশলী আর অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলেই তদন্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে ভুক্তভোগী ও সংবাদ প্রকাশকারী গণমাধ্যমকর্মীদের তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে পৌছানো ঠেকাতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভিতরে ও বাহিরে দিনব্যাপী চলেছে সশস্ত্র মহড়া।
অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হলে তদন্তকালীন সময়ে ভুক্তভোগী ও সংবাদ সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীকে চিঠি ইস্যু করে ডাকার নিয়ম থাকলেও এই তদন্তে কেনো তাদের ডাকা হলো নাহ এমন প্রশ্নের জবাবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা এভাবে স্টেটমেন্ট নেইনা। আমরা শুধু অভিযুক্ত ও সেই কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বক্তব্য নেই। তদন্তকালীন সময়ে বাহিরে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া বিষয়ে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমিতো এরকম কিছু দেখলাম নাহ।
এবিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হামিদুর রহমান খান মুঠোফোনে জানান, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সংবাদ প্রকাশকারী গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগীকে জানানো উচিত ছিলো।এটি গণপূর্তের অভ্যন্তরীণ তদন্ত। তারপরেও এবিষয়ে আমি গণপূর্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবো।