বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আ’লীগ সরকারের পতনের পর জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এর পরেই দেশের সকল উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়। অথচ সরকারি জাতীয় তথ্য বাতায়নের ওয়েবসাইটে এখনও রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে সংসদ সদস্য টিপু মুনশি ও পীরগাছা উপজেলা চেয়ারমান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের ছবিসহ তথ্য দেওয়া রয়েছে। টিপু মুনশিসহ দলীয় নেতাদের প্রতি অতি ভক্তির কারণে রংপুরের পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন এখনও তথ্য হালনাগাদ করেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা।
নাজমুল হক সুমন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির মদদপুষ্ট হওয়ায় প্রকাশ্যে অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পরা এ নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যাহারের দাবি জানান স্থানীয় ছাত্র জনতা।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নাজমুল হক সুমন পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে সরকারি পরিপত্র ও আদালতের আদেশ অমান্য করে তৎকালীন সরকার দলীয় নেতাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আসছেন। এমনকি নিজে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পরেও পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন তিনি। এছাড়া পীরগাছায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন কঠোরভাবে দমনে মাঠে থেকে জোড়ালো ভূমিকা পালনের অভিযোগ আছে বিতর্কিত এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, গত সরকারের সময় দলীয় প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়ে নিজে ফায়দা লুটিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৬ আগস্ট জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এর দুদিন পর (৮ আগস্ট) শপথ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৯ আগস্ট সব ( ৪৯৩টি) উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়। তাদের জায়গায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদেরও অপসারণ করা হয়।
কিন্তু এখনও বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের ওয়েবসাইটে পীরগাছার তথ্যে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বহাল রয়েছে।
গতকাল বুধবার ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখা যায়, এখনো টিপু মুনশিকে রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে। প্রদর্শিত হচ্ছে তার ছবিও। অথচ সাবেক সংসদ সদস্য টিপু মুনশি বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে রয়েছেন। একইভাবে উপজেলা চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে এখনও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের নাম প্রদর্শন হচ্ছে জাতীয় তথ্য বাতায়নে। এছাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে শাহ্ মোঃ শারেখ খন্দকার ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) হিসাবে ইসরাত জাহানের নাম ও ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাকিবুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আ’লীগ সরকারের পতন হলেও কিছু কর্মকর্তা এখনও ভক্তি দেখিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
হোসেন আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, এতো রক্তের বিনিময়ে স্বৈরশাসকের বিদায় হয়েছে। অথচ সরকারি ওয়েবসাইটে এখনও টিপু মুনশিকে এমপি হিসাবে দেখানো হচ্ছে। এটা ভুল হতে পারে না, এটা ইচ্ছাকৃত। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ প্রত্যাহার দাবি করছি।
তাজুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ইউএনও টিপু মুনশির মদদপুষ্ট হওয়ায় প্রকাশ্যে নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। বিভিন্ন প্রকল্পে নজির বিহীন দুর্নীতি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।