শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৭ অপরাহ্ন
উজ্জ্বল রায়- নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ
নড়াইলে বোরো মৌশুমে চার কোটি টাকার বোরো ধানের পাতো চারা বিক্রি। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি হাটে (বাজারে) বোরো মৌশুমে মাত্র আড়াই মাসে অন্তত চার কোটি টাকার বোরো ধানের পাতো (চারা) বিক্রি করছে স্থানীয় কৃষকেরা। বোরো ধানের চারা বিক্রি করে প্রতি মৌসুমে বাড়তি রোজগার করছেন এলাকার এসকল কৃষকেরা।
এতে তাদের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। এ কাজে যুক্ত থেকে মৌসুমে বাড়তি ইনকাম করে হাসি ফুটেছে এলাকার কয়েক শত কৃষকের মুখে। নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান- বেশ কয়েক বছর ধরে এই হাট থেকে ধানের এই চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে নড়াইলের বিভিন্ন উপজেলাসহ পার্শবর্তী জেলা গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাটের কৃষক ও ব্যাবসায়ীরা। আর এ হাটকে ঘিরে এলাকার অন্তত পাঁচ হাজার কৃষক, ব্যাবসায়ী, পরিবহন চালকসহ হাট সংশ্লিষ্টদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
সরেজমিনে যেয়ে দেখা গেছে- নড়াইল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে নড়াইল-কালিয়া সড়কের পাশে কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি এলাকায় বিশাল খেলার মাঠে বসেছে বোরো ধানের চারা বিক্রির হাট। চারা কেনা-বেচায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। কথা হয় এলাকার প্রান্তিক কৃষক মন্নু শেখের সাথে। তিনি বলেন, দুই যুগেরও বেশি সময় যাবত এখানে প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল অবধি চারা বেচা-কেনা হয়।
নড়াইলের বিভিন্ন উপজেলাসহ পার্শবর্তী জেলা গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাটের কৃষক ও ব্যাবসায়ীরা এখানে চারা কিনতে আসে। চারা বিক্রেতা আসলাম ফকির বলেন, ৫০ থেকে ৭০টি চারা দিয়ে এক মুঠো (আটি) করা হয়, আশি আটি চারায় এক পোন হয়। এক পোন (৮০ আটি) চারা আকার ভেদে দুইশত পঞ্চাশ থেকে চার শত টাকা বিক্রি হয়।
উপজেলার ফুলদাহ গ্রামের কৃষক সাদ্দাম শেখ বলেন- প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আড়াই মাস এখানে চারা কেনাবেচার ধুম পড়ে। এ হাটে অন্তত দশ প্রকার ধানের চারা বেচাকেনা হয়।
লোহাগড়া উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের কৃষক তজিবার শেখ বলেন, প্রতিবছর তিনি এই হাটে চারা কিনতে আসেন। গত বছর থেকে প্রতি পোন চারা অন্তত বিশ থেকে ত্রিশ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পুরুলিয়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মরফু শেখ জানান- পাঁচ/ছয় বছর যাবৎ নিজের জমিতে চারা উৎপাদন করে এই হাটে বিক্রি করেন তিনি। এ বছর ত্রিশ শতক জমিতে চারা উৎপাদন করেছিলেন তিনি। খরচ হয়েছে বাইশ থেকে পচিশ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে অন্তত পঞ্চাশ হাজার টাকার চারা বিক্রির আশা করছেন তিনি।
কৃষক রিপন মোল্লা বলেন- এক থেকে দেড় মাসের ফসল এটি। যে জমিতে চারা দেওয়া হয় সেই জমির চারা তুলে ধানের আবাদ করতে কোন ক্ষতি হয়না। ফলে তিন ফসলি এসব জমি থেকে এখন বছরে চার বার ফসল ফলানো যাচ্ছে। আর যে সকল জমিতে বছরে দু বার ফসল ফলানো যেত সেখানে তিন বার ফসল ফলানো যাচ্ছে।
কৃষকেরা জানান, এলাকার অন্তত দুই হাজার কৃষক এই চারা উৎপাদনের সাথে জড়িত। চারা ব্যাবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর তিনি স্থানীয় কৃষকদের জমি থেকে চারা কিনে এই হাটে বিক্রি করেন। চলতি মৌসুমে চারার চাহিদা একটু বেশি সেই জন্য দামও কিছুটা বেশি।
ব্যবসায়ী লিটন কাজী জানান- প্রতিহাটে এখানে যে পরিমান চারা বিক্রি হয় সেই চারা পরিবহন করতে তিন শত থেকে সাড়ে তিন শত ভ্যান লাগে। বাগেরহাট থেকে চারা কিনতে আসা কৃষক জসিম শেখ জানান, গত বছরও তিনি এই হাট থেকে চারা কিনে জমিতে রোপন করেছেন। ফলন ভাল হওয়ায় এবছরও তিনি চারা কিনতে এসেছেন। হাট সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি হাটে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার কেনা-বেচা হয় এখানে। সে হিসাবে প্রতি মৌসুমে আড়াই মাসে কুড়ি থেকে বাইশটি হাটে অন্তত চার কোটি টাকার চারা বেচা-কেনা হয় এই হাটে।
হাটের ইজারাদার মিজান শেখ বলেন- কৃষকদের কথা বিবেচোনা করে যারা এখানে চারা বিক্রি করতে আসে তাদের কাছ থেকে কোন খাজনা নেওয়া হয়না। যারা চারা কিনে নিয়ে যান তাদের কাছ থেকে প্রতি ভ্যানে ১শ থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত খাজনা নেওয়া হয়।
স্থানীয় চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম (মনি) বলেন- ইউপি পরিষদ ভবনের পাশে এ হাটে যারা চারা কেনা-বেচা করেন তাদের নিরাপত্তার কোন ঘাটতি এখানে নেই। এই হাটকে কেন্দ্র করে স্থানীয় অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের মৌসুমী আয়ের সুযোগ হয়েছে। বিশেষ করে এলাকার কয়েক হাজার কৃষক বেশি উপকৃত হচ্ছে। পরিষদের পক্ষ থেকে হাট সার্বক্ষনিক তদরকি করা হয় যাতে কোন কৃষক ও ব্যাবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দিন দিন এ হাটের পরিধি বাড়ছে।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, নড়াইলের চাচুড়ি হাটসহ জেলার আরও বেশ কয়েকটি হাটে এই মৌসুমে চারা বেচাকেনা হয়। জেলার মধ্যে চাচুড়ি চারার হাট সবচেয়ে বড়। অল্প সময়ের মধ্যে এটি একটি লাভ জনক ফসল। দিন দিন কৃষকেরা এই চারার ব্যাবসার দিকে ঝুকছে।