শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন
খলিলুর রহমান- নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
এবার পৌষের শীতে কাঁদছে উত্তর জনপদের মানুষ। বিশেষ করে ছিন্নমূল, দরিদ্র দিনমজুর পরিবারগুলো হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীত নিবারণের জন্য খড়কুটোর আগুন জ্বালিয়ে গা গরম করতে গিয়ে অসাবধানতায় দগ্ধ হচ্ছে নারী শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ । শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাসপাতালে বাড়ছে দগ্ধ রোগীর সংখ্যাও। তাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত গত ৪ দিনে দগ্ধ হয়ে ৮ জন ভর্তি হয়েছে। তারাসহ হাসপাতালে ১২ দিনের ব্যবধানে দগ্ধ হয়ে ৪২ জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে বার্ন ইউনিটে ১১ জন এবং বাকিদের সার্জারি, শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ শীত থেকে বাঁচার জন্য আগুন পোহাতে কিংবা কেউ শীত নিবারণে গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়ে দগ্ধ হয়।
গত বুধবার থেকে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচজন হলো কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সাজু মিয়ার স্ত্রী ববিতা বেগম(৩৫), কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার আশরাফুল আলমের মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা(৬), রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার আলেয়া বেগম(৬৫), লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সবুজ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী পলি রানী(৩০) এবং নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার মমিনুর ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম(৪০)। তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে ও চুলার আগুনে শীত নিবারণ করতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছে।
গতকাল রমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ সার্জারি ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, দগ্ধ রোগীরা ছটফট করছে। হাসপাতালের শয্যায় ক্ষত নিয়ে কাতরাচ্ছিলেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের বাসিন্দা বিথী আক্তার।
তিনি বলেন, জান বেড়ে যাওয়া জার (শীত) থাকি বাঁচির তকনে আগুন পোহার গেছনু। সেই আগুন গাওত কখন ধরছে কবারে পাও না। আল্লাহ সহায় আছল, তকনে এ্যালাও বাঁচি আছু। হাসপাতালোত চিকিৎসা নেওছু। নাইতিন পুড়ি ছাই হয়া গেনু হয়। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে মায়ের রান্নার চুলার পাশে আগুন পোহাতে গিয়ে পা থেকে কোমর পর্যন্ত পুড়ে ফেলেছে শিশু আয়েশা সিদ্দিকা। পোড়া ক্ষত নিয়ে কাতরাচ্ছে হাসপাতালের শয্যায়।
আয়েশার মা শাহানা বেগম বলেন, মাটির চুলায় ভাত বসাইছি। মেয়েটা চুলার পাশোত গরম তাপ নিবার বসছিল। কিন্তু কখন যে ওর জামার কাপড়োত আগুন ধরিয়া কী থাকি, কী হইল কবার পারি না। মেয়েটার খুব কষ্ট হওছে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডাঃ শাহ মোঃ আল মুকিত বলেন, এখানে চিকিৎসাধীন রোগীর এক-তৃতীয়াংশই শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছে। রংপুর অঞ্চলে শীত এলেই প্রতিবছর অগ্নিদগ্ধের ঘটনা বেড়ে যায়, রোগীর চাপ বাড়ে। বর্তমানে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসক ফারুক আলম জানান, গত তিন দিনে ভর্তি হওয়া পাঁচজনের কারও কারও শরীরের ১০-৪০ শতাংশ; আবার কারও ৪০-৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অনলাইন ভিত্তিক 71sangbad24.com গণমাধ্যমটি
বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশনে নিবন্ধিত, (আই ডি নং-364)।
বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
আগ্রহীগণ সিভি পাঠাতে ই-মেইল করুনঃ info71sangbad24.com@gmail.com