বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৭ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
৪২ বছর ধরে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছে জাহানারা বেগম, সারে তিন যুগ তার চিকিৎসার ব্যয় মেটাতেই নিঃস্ব পরিবার, বর্তমানে হতাশায় কাটছে দিন।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ১নং কল্যাণী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডস্থ তালুক কল্যাণী গ্রামের প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক, মরহুম আব্দুস সাত্তারের ঘরে ১৯৬৩ খৃষ্টাব্দ জন্ম গ্রহণ করেন মেধাবী কন্যা জাহান্নারা বেগম। বর্তমানে তার বয়স ৬২ বছর। বৃদ্ধ বয়সী এই নারী দেহের অধিকাংশ কার্যকারিতা হারালেও তার জীবন যেন এক দুঃসহ সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। বর্তমানে তার মুখ ছাড়া দেহের বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবিই অচল! বিগত ৪২ বছর তাকে সুস্থ করে তোলার অদম্য চেতনায়, ছোট বড় গ্রাম শহর মিলে অজস্র ডাক্তার, কবিরাজ, ফকির সবার নিকট ছুটেছেন তার পরিবার। জাহান্নারা বেগমের শিক্ষক পিতার মৃত্যু হলে, দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন আপন সহদর ছোট ভাই।
জাহান্নারা বেগমের সংগ্রামী জীবনের গল্প শুনতে তার বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, মহান আল্লাহতালার অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে আছেন। দীর্ঘ ৪২ বছর তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন! যখন বেশী খারাপ লাগে তখন সুরা ইয়াসীন পাঠ করেন বলে জানান। এছাড়াও তিনি কোরআন তেলাওয়াত করাসহ স্কুল জীবনে মুখস্থ করা ইংরেজি শোনান সাংবাদিকদের।
জাহানারা বেগম ইউনিয়নের বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন, ছাত্র জীবনে ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। বই পড়া আর মা-বাবার কাজে সহযোগিতা করেই কেটেছে তার শৈশব কৈশোর। চেয়েছিলেন বাবার মত একজন আদর্শ স্কুল শিক্ষক হবেন। অজানা রোগে ইচ্ছা পূরণের সেই ডানা ভেঙ্গে দিয়েছে অনেক আগেই।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: লিটন মিয়া বলেন, অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে তার শরীরের নিম্নাংশ ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। বর্তমানে তার গলা থেকে মাথা পর্যন্ত সচল থাকলেও বাকি শরীর একেবারে কাঠের মতো শুকিয়ে গেছে। চিকিৎসার অভাবে এই রোগটি ধীরে ধীরে তার জীবনকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলেছে।
৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য, শামছুল হক লিপু বলেন, জাহানারা বেগমের জীবন যেন একটি নিরব আর্তনাদ। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশাল অর্থের প্রয়োজন হলেও পরিবারের পক্ষে এই খরচ বহন করা একেবারেই অসম্ভব, সরকারিভাবে একটুখানি সহানুভূতি আর সহায়তাই পারে তাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে।
জাহান্নারা বেগমের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে রংপুরের জেলা প্রশাসক মহোদয় আমার বোনের অসুস্থতার বিষয়টি জেনে, গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ইং তার কার্যালয় ডাকেন আমরা গিয়েছিলাম। তিনি একটি হুইল চেয়ার দিয়েছিল, কিন্ত আমরা তা নেইনি কারণ চেয়ারে বসার মতো শারীরিক অবস্থা আমার বোনের নেই। পরে তিনি আমাদের সমস্যার কথাগুলো শুনেন এবং আমাদের পরিবারের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন সেইসাথে আমাদের মোবাইল নাম্বার ঠিকানাও নেন। এখন পর্যন্ত ডিসি স্যারের পক্ষ কেউ যোগাযোগ করেনি।তবে দিনান্দিন আমার বোনের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। তার জন্য কিছু করতে পারছিনা এটাই বড় কষ্টের ব্যাপার।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, কল্যাণী ইউনিয়নের তালুক কল্যাণী গ্রামে ৪২ বছর অজানা রোগে আক্রান্ত জাহানারা বেগম বিষয়টি আমরা অতি সাম্প্রতিক সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তার চিকিৎসা ও পরিবারকে পুনর্বাসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অজানা এই রোগ জাহানারার শৈশব কৈশোরের স্বপ্নগুলোকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। এখন স্বপ্ন শুধুই বাকি জীবনটা সুস্থভাবে শেষ করার। অন্য দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নাহলেও বিছানায় শুয়েই স্বজনদের সাথে কথা বলেই কবরে যেতে তিনি। এজন্য প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা। তবে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে অক্ষম তার পরিবার,অজানা এই রোগ তাদের পথে বসিয়েছে অনেক পুর্বে। বর্তমানে সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা ছাড়া সবি অসম্ভব।