শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন
খলিলুর রহমান- নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া দীপিকা মোহন্ত(১২) এর অপহরণের ঘটনায় শোকাহত ভাই দীপু অসুস্থ হয়ে বোন অপহরণের ১৫ দিন পর মারা গেছে। অপহৃত দীপিকা (১২ এপ্রিল) ২০২৫ইং তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে অপহৃত হয়।
ভাই-বোনের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক সবার বেলায় একই রকম না হলেও, কিছু কিছু সম্পর্ক ও শেষ পরিনতি হয় খুবই মর্মান্তিক। এরকম ঘটনাই ঘটেছে কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের কেল্ল্যাবাড়ী (গোয়ালপাড়া) এলাকার বাবুল চন্দ্র মোহন্তের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে দীপিকা মোহন্ত ও ভাই দীপুর মধ্যে। একই খেলনা নিয়ে খেলাধুলা করে বড় হওয়া কাছাকাছি বয়সের দুই ভাই বোনের সম্পর্ক চিরদিনের জন্যই ছিন্ন হলো। অপরিনত বয়সের আদরের সেই ছোট বোনটির অপহরণ মেনে নিতে না পারায় অসুস্থ হয় দীপু, প্রশাসনের অসহযোগিতা তাকে আরো দুর্বল করে। বোনকে ফেরৎ না পাওয়া অসুস্থ দীপু জীবন যুদ্ধে হার মেনে চলে গেছে পরপারে। এ যেন এক মৌন সেই প্রতিবাদ জানোলো ভাই।
জানা গেছে, নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের কেল্ল্যাবাড়ী (গোয়ালপাড়া) এলাকার বাবুল চন্দ্র মোহন্তের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে দীপিকা(১২) তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অপহৃত হয়। অপহরণের ঘটনায় তারাগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয় মেয়েটির বাবা বাবুল চন্দ্র মহন্ত।
বাবুল মোহন্ত বলেন, আমার ১২ বছর বয়সি মেয়েটি অপরণের পর তারাগঞ্জ থানার ওসি ও এসআই রউফকে উদ্ধারের জন্য অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু অপহরনের আজ ১৫ দিন হয়ে গেলেও পুলিশের কোন ভূমিকা নাই। এদিকে ছেলে দীপু তার বোনের অপহরনের শোকে চিরতরে চলেগেল পরপারে। অথচ অপহরণকারীদের দালালরা নাকি থানায় ঘোরাঘোরি করছে। কিন্তু আমার মেয়ের কোন খোঁজ নাই, কেউ জানাচ্ছেও না মেয়েটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে নাকি মেরে ফেলেছে ।
অবাক করা ব্যাপার হল, তারাগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়ে এসে পরে শুনি অভিযোগের কপি খুঁজে পাচ্ছেনা পুলিশ। থানায় জমা দেওয়া অভিযোগটি অজানা কারণে হারিয়ে গিয়েছিল থানা থেকে। নানা নাটকীয়তার পরে ওসি তদন্তভার দেয় এসআই রউফকে। এরপরে শুরু হয় তদন্তের গড়িমসি। অনেক যোগাযোগ আর অনুরোধের পর নামমাত্র তদন্ত করেন এস আই রউফ। কিন্তু ওই যে তদন্ত করে গেল আর কিছুই জানালো না। একাধিকবার বিভিন্ন লোক মারফত মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে, তিনি ফোন ধরেন না। তারাগঞ্জ থানায় গিয়ে তার দেখা পাওয়া যায়না। মেয়েটিকেই ফিরে পেলাম না তারওপর ফুটফুটে যুবক ছেলেটিকে হারালাম। আমারও আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছে নাই। আমি কাকে নিয়ে বাঁচব, বলুন?
দীপিকা ও দিপুর মা শ্রীমতি ঝর্না মোহন্ত জানান, “হামরা এক ছওয়ালের (সন্তান) জন্য আরেক ছওয়াল হারাইনো। কিন্তু মরার পুলিশের ঘুম ভাঙ্গার হুদিস নাই। শুনছি মোর বেটিক যারা নিয়া গেছে তারা থানায় বড় ভোগ দিছে। সেই জন্যে হামার আহাজারি কানোত ঢোকে না ওমার।
স্থানীয়রা জানায়, বোন হারানো দিপুকে তারা রাস্তার দিকে এক নয়নে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে অসংখ্যবার। অনেকেই দীপুকে বুঝিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসলেও কিছুক্ষণ পরে আবারও এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকত। দীপিকার সন্ধানে আর চেয়ে থাকবে না দীপু।
অপহরনের অভিযোগ তদন্তকারী এসআই আব্দুর রউফের সাথে গণমাধ্যমকর্মীরা একাধিক দিন বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারে নাই। মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেন না। থানায় গিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বাদী পক্ষ ও গণমাধ্যমকর্মী স্বাক্ষাতে ব্যর্থ হন।
তারাগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে, আমরা ভিকটিমকে উদ্ধারে চেস্টা করছি। যতদ্রুত সম্ভব আসামীকে গ্রেপ্তার করার হবে, আমরা চেস্টায় ত্রুটি করছি না।