শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা মিলনকে বাঁচাতে ছাত্রজনতার বিজয় মিছিলে প্রকাশ্যে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে পীরগাছা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের এই নেতা মিলন, বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার একই বংশের পারিবারিক ভাতিজা।
সোমবার(৫ আগস্ট) বিকাল ৪.০০ টার সময় পীরগাছা উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ছাত্রজনতার মিছিলে ৬ রাউন্ড গুলি চালায় বিএনপির এই নেতা রাঙ্গা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলার শাপলা চত্বর থেকে শহীদ মিনার অভিমুখে ছাত্রজনতার একটি মিছিল রওয়ানা হলে পথিমধ্যে পীরগাছা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের সামনে ছাত্রজনতার মিছিলে বাঁধা প্রদান করে পীরগাছা উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ও পীরগাছা ইউনিয়ন বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান এবং পীরগাছা সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান রেজা।
মিছিলটি বাঁধা অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিএনপি নেতা রাঙ্গা তার পকেট থেকে সাদা রঙ্গের একটি পিস্তল বের করে প্রথমে উপরের দিকে একটি ফাঁকা গুলি করে। এরপরে ছাত্র-জনতা উত্তেজিত হলে, বন্দুক তাক করে ছাত্রজনতার দিকে পরপর ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। গুলিতে তাৎক্ষনিক একরামুল নামে এক সাধারণ ছাত্র আহত হয়। এরপর গুলি ফুরিয়ে গেলে ছাত্রজনতার ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায় বিএনপি নেতা রাঙ্গা ও ইউপি চেয়ারম্যান রেজা। এসময় ছাত্রজনতা উত্তেজিত হয়ে রাঙ্গার ভাতিজা আওয়ামী লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের অফিস ভাংচুর করে।
গুলিতে আহত ছাত্র একরামুল হক জানান, আমরা শাপলা চত্বর থেকে ছাত্রজনতা একটি বিজয় মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার হয়ে পীরগাছা জে,এন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের দিকে অগ্রসর হলে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের সামনে বাঁধা প্রদান করে পীরগাছার বিএনপি নেতা রাঙ্গা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেজা। তারা ভেবেছিল আমরা তার ভাতিজা আওয়ামী লীগের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিলনের অফিস ভাংচুর করবো। এটা ভেবেই উত্তেজিত হয়ে আমাদের উপর বন্ধুক তাক করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এসময় আত্মরক্ষার্থে আমি শুয়ে পড়লে গুলিটি বামহাত ছুয়ে চলে যায়। তাৎক্ষণিক স্থানীয় ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে আমি বাড়িতে চলে আসি।
এবিষয়ে পীরগাছা উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা জানান, আমি কোন গুলি করিনি। আমার একটি কালো রঙ্গের লাইসেন্সকৃত পিস্তল আছে। ছাত্রজনতার মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী ঢুকে আমাকে আক্রমণ করেছিলো। তাদের আক্রমণে যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম আহত হয়েছে।
পীরগাছা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ওখানে সাধারণ ছাত্র ও আমাদের বিএনপ’র কিছু ছেলে উত্তেজিত হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ অফিস ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিলনের ব্যক্তিগত অফিসে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে রাঙ্গা ভাই বাঁধা দেয়। এরপরও রাঙ্গা ভাইয়ের নির্দেশ অমান্য করে ভাংচুর শুরু করলে আন্দোলনকারীদের ভয় দেখানোর জন্য বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হিসেবে সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্যে রাঙ্গা ভাই গুলি চালিয়েছিলো। কাউকে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিলনা।
পীরগাছা সদর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি ও বিএনপি সমর্থিত পীরগাছা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান রেজা জানান, দূর সম্পর্কের হলেও মিলন ও রাঙ্গা আমরা একই পরিবারের লোক। রাঙ্গা ভাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটি ফাঁকা গুলি চালিয়েছিল। আমি পরে গিয়ে আমার ইউনিয়ন পরিষদের ভাংচুর ঠেকাতে চেষ্টা করেছি।
পীরগাছার তৃণমূল বিএনপি’র একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলে, রাঙ্গার কারণে পীরগাছা উপজেলা বিএনপি কখনো মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারেনি। আমরা রাঙ্গাকে বহিষ্কার করাসহ ছাত্র জনতার উপরে গুলি চালানোর বিচার চাই।